জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে দেশের রাজনীতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি যার যার অবস্থানে অটল রয়েছে। বুধবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বিএনপির সমাবেশে বলা হয়েছে, সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ থেকে মহাযাত্রা শুরু করা হবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারপ্রধানই থাকবেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী। এ পালটাপালটি সমাবেশ ও বক্তব্যে সামনের দিনগুলোয় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠার আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে। বস্তুত রাজনীতি চলে গেছে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’, যা সমঝোতার সব পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতির অবসান না ঘটলে তা দেশ ও জনগণের জন্য অশুভ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। করোনা মহামারির অভিঘাত মোকাবিলার মধ্যেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেশের অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা দিয়েছে। এ থেকে উত্তরণে এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অথচ রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতার পথ পরিহার করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলছে, যা উদ্বেগজনক।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে সহিংসতা ও সাংবিধানিক সংকট তৈরি হলে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতার পালাবদল বিচিত্র কিছু নয়। এমনটি ঘটলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে, যা কারও কাম্য নয়। রাজনৈতিক প্রশ্নে ব্যাপকভাবে বিভাজিত এদেশটিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে কেবল সাধারণ মানুষ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম এবং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও সরকারের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাছাড়া সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন উৎপাদনশীল খাত ও রপ্তানিমুখী শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে এসব শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হাজার হাজার শ্রমিকের ভাগ্যও হয়ে পড়বে অনিশ্চিত। সবচেয়ে বড় কথা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম না হলে বিনিয়োগ ও উন্নয়নে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসবে না। দলগুলো যদি প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতার রাজনীতি পরিহার করে পরস্পরের প্রতি সহনশীল হয়, তাহলে দেশের উন্নয়ন আরও বেগবান হবে।
সংলাপ বা আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণকেই শ্রেয় বলে মনে করি আমরা। পরস্পরের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো যদি আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা যায় এবং সেখানে সমাধানের পথ খোঁজা হয়, তাহলে দেশের রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা ফিরে আসবে। তবে সংলাপ বা আলোচনা যাই হোক, তা হতে হবে অর্থবহ। অতীতে দেখা গেছে, জাতিসংঘের মধ্যস্থতাসহ বিভিন্নভাবে যেসব রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে, তা কোনো ফল বয়ে আনেনি। এর কারণ, সংলাপে অংশ নেওয়া পক্ষগুলোর যার যার প্রস্তাবে অটল থাকা। কাজেই ‘বিচার মানি, কিন্তু তালগাছটি আমার’-এমন মনোভাব নিয়ে সংলাপে বসে লাভ নেই। সংলাপে বসতে হবে সত্যিকারের আন্তরিকতা নিয়ে, যাতে এক পক্ষের যৌক্তিক প্রস্তাব অন্য পক্ষ মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে। তা না হলে সংলাপ হবে অর্থহীন। আর তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতার পথে অগ্রসর হবে, এটাই প্রত্যাশা।