জন্মভূমি ডেস্ক : দেশের বাজারের আমদানিকৃত জ্বালানি তেল একমাত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আর তেল বিক্রি করে প্রতি বছরের মুনাফায় জমে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। অথচ বিপিসি’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ইস্টার্ন রিফাইনারি এবং স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েলের আমদানিকৃত ডিজেল, অকটেন, পেট্রোলসহ জ্বালানি তেলের সরকার-নির্ধারিত শুল্ককর বকেয়া রয়েছে দুই হাজার ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন ধরে এসব টাকা বকেয়া রয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদার পুরোটাই এককভাবে সরবরাহ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বিপিসি বছরে প্রায় ৭৫ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি পণ্য বিক্রি করে, যার শতভাগ আমদানির মাধ্যমে একাধিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিপণন করা হয়। কিন্তু নিয়মিত আমদানি শুল্ককর পরিশোধ করে না এসব প্রতিষ্ঠান। বিপিসির সহযোগী ছয় বিপণন প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া দুই হাজার ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের কাছে বকেয়া শুল্ককর ৮০৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। একইভাবে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কাছে ৬৩৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ৪৪৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের কাছে ১৭১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কাছে ছয় কোটি ২৫ লাখ টাকা। দীর্ঘদিন এসব টাকা বকেয়া রয়েছে। অথচ ২০২৩ সালের ৩০ জুন শেষে বিপিসি’র বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ ২৭ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা, যা বর্তমানে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আর ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪’-এ বিপিসির মুনাফা দেখানো হয়েছে (২১ এপ্রিল ২৪ পর্যন্ত) চার হাজার ৮৭৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষে এ মুনাফা ছয় হাজার কোটি টাকায় ঠেকতে পারে। আর ১০ বছরে ৫৫ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করে সংস্থাটি। এর মধ্যে শুধু ২০২১-২২ অর্থবছর কিছুটা লোকসান গুনে দেশে জ্বালানি তেলের একমাত্র আমদানিকারক ও বিপণনকারী সংস্থাটি বিপিসি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন দেশের ব্যবহƒত জ্বালানির পুরোটাই আমদানি হয়, যা প্রতিষ্ঠানটির একাধিক বিপণনকারী সংস্থার মাধ্যমে দেশব্যাপী ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রি করা হয়। কিন্তু আমদানিককৃত জ্বালানি তেলের শুল্ককর বাবদ বিপিসি’র পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক এবং ইস্টার্ন রিফাইনারির কাছে প্রায় দুই হাজার ৭০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এসব বকেয়া শুল্ক দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া, যা পরিশোধের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য একাধিকবার মিটিং হলেও কোনো সমাধান হয়নি।
অপরদিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের পরিচালক (অর্থ) আবদুল মতিন বলেন, আমদানিকৃত জ্বালানি তেলের বিপরীতের কাস্টমসের শুল্ককর বকেয়া রয়েছে। বিষয়টি আসলে নীতি-নির্ধারিণী মহলের সিদ্ধান্তে চূড়ান্ত হবে। আর কবে নিষ্পত্তি হবে তা সঠিক বলা যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন দেশের সার্বিক জ্বালানি চাহিদা পূরণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। দেশের কৃষি উৎপাদন, শিল্প প্রক্রিয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, গৃহস্থালির কাজ ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বর্তমানে বিপিসি’র ১৪ ধরনের বিপণনকৃত জ্বালানির মধ্যে আছে পেট্রোল, কোরোসিন, ফার্নেস অয়েল, জেবিও, লুব অয়েল, এসবিপি, এমবিপি, এলপিজি, বিটুমিন, ডিজেল, জেট এ ১, অকটেন, এলডিও ও মেরিন ফুয়েল।