জন্মভূমি রিপোর্ট : ঘুর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ৪ টি গ্রামের ৮ শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে একমাত্র আয়ের উৎস মাছের ঘের, পুকুর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়ীঘর। গত ১২ দিন ধরে প্রতিদিন দুইবার জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে ৪ টি গ্রামের মোট হাজার পরিবার। সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায় এ সব চিত্র।
ক্ষতিগ্রস্ত রোমজাইপুর এলাকায় জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করলেও বৃহৎ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম আড়ুয়াডাঙ্গা, সাতপুকুরিয়া, জিগিরমোল্লা ও সিংগড়বুনিয়ার আংশিক এলাকা পরিদর্শন করেননি কোন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা। শুধুমাত্র ১৬১ জন দূর্গতকে ১০ কেজি চাল ও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ী বাঁধ মেরামতের জন্যে রোমজাইপুরের বেড়ি বাঁধের জন্য মাত্র দুই লক্ষ টাকা ও আড়ুয়াডাঙ্গায় বেড়ি বাঁধ মেরামতের জন্যে মাত্তা এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। যা অত্যান্ত অপ্রতুল বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী। তারা জীবন ও জীবিকার তাগিদে সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামতের কাজো ইতিমধ্যে শুরু করেছেন। ওই এলাকায় কেহই খোঁজ না নেওয়ার পুরসৎ পাননি !
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের সিংগড়বুনিয়া, রোমজাইপুর, সাতপুকুরিয়া, আড়ুয়াডাঙ্গা, জিগিরমোল্লা গ্রাম চারিদিক দিয়ে মোংলা ঘোষিয়াখালী ও মাদারতলা নদী দ্বারা বেষ্টিত । এই ব-দ্বীপের মধ্যেই এলাকাবাসীর বসবাস। প্রতিটা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ এলাকা ক্ষতবিক্ষত হয়ে আসছে। সিডর, আইলা ও আমফানের ঝড়ে একইভাবে জলোচ্ছ্বাসে গ্রাম রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামকে গ্রাম প্লাবিত করেছে। গত ২৭ মে ঘুর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে আবারো লন্ডভন্ড হয়েছে এলাকাগুলো । এর মধ্যে শুধুমাত্র রোমজাইপুর এলাকায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিরা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু গত ১২ দিনের মধ্যে কেহই খোঁজ নেননি অন্য তিনটি গ্রামের দূর্গত মানুষের। এ কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অবশেষে নিজেদের বেঁচে থাকার তাগিদে সোমবার (৩ জুন) থেকে ভাটার সময় গ্রামবাসী সরকারের দেয়া সহায়তায় ও সেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। বাঁধ মেরামতে নেতৃত্বে ইউপি সদস্য ফকির গিয়াস উদ্দিন, মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা এ এলাকায় বিমাতা সন্তানের মতো অবোহেলিত। যে কারণে আমাদের কেউ খোঁজ রাখেন না। আমাদের এলাকায় হাজার হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের তলিয়ে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য বাড়ীঘর ও ফসলের জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা-পাকা রাস্তা। সাতপুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মহিদুল ইসলাম ও মহিউদ্দিন ইসলাম বলেন, সরকার যদি স্থায়ীভাবে আমাদের বাঁধের ব্যবস্থা না করে তা হলে আমাদের দ্বীপের মধ্যে ডুবে মরতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাগেরহাট জেলা সদস্য মোল্লা আ. সবুর রানা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তপ্ত হচ্ছে পৃথিবী। যে কারণে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এতে উপকূলীয় উপজেলার মানুষ ঝুকির মধ্যে পড়েছে। প্রতি বছর ঘূর্ণি ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে জীবন ও জীবিকা মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। এমন অবস্থায় গ্রাম রক্ষা বাঁধ না দিলে মানুষের বিপাদপন্নতা বাড়বে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত গ্রাম রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও রাস্তা সংস্কারের দাবী জানিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন পরিবেশবাদী সংগঠনের এই নেতা।