জন্মভূমি ডেস্ক : রামপাল পাওয়ার প্লান্টের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন আগামী ৭ দিনের মধ্যে পুনরায় শুরু হবে। সম্প্রতি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্যে এটি বন্ধ রাখা হয়েছে। আর দ্বিতীয় ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে গত ২৮জুন। বর্তমানে লোড টেস্টিং এর কাজ সফল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন শেষে প্রথম ইউনিটের মতোই দ্বিতীয় ইউনিটও খুব শিঘ্রই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে। এদিকে কয়লা ভিত্তিক এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে কোনো কয়লা সংকট নেই। আগামী তিন বছরের জন্য ৮০লাখ টন কয়লার যোগান রয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে, ২ী৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন মৈত্রি সুপার থার্নমাল পাওয়ার প্রকল্পটির প্রথম ইউনিট গত বছর ১৫আগস্ট পরীক্ষামুলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন লোডে ইউনিটটির উৎপাদন ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। সফলতার সাথে প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হওয়ায় পর গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় প্রথম ইউনিট। আর বর্তমানে দ্বিতীয় ইউনিটটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন শেষে এটিতে পরীক্ষামুলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। গত ২৮ জুন জাতীয় গ্রিডের সাথে সংযুক্ত হয় এই ইউনিটের বিদ্যুৎ । এখন ধাপে ধাপে লোড টেস্ট চলছে। এবছর সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রামপাল পাওয়ার প্লান্টের রক্ষনাবেক্ষণ, কয়লা সংকট ও ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং এর ঝুঁকি এড়াতে কয়েক বার বাণিজ্যিক উৎপাদনে থাকা প্রথম ইউনিটটি বন্ধ করা হয়। সর্ব শেষ গত ৩০ জুন রাত থেকে এখনও পর্যন্ত এটি বন্ধ রেখে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হচ্ছে। তবে আগামী ৭ দিনের মধ্যেই সকল কাজ সফলতার সাথে সম্পন্ন শেষে পুরোপুরি উৎপাদনে যাবে প্রথম ইউনিট।
ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানী (প্রাঃ) লিমিটেড এর ডিজিএম (এইচআর ও পিআর) আনোয়ারুল আজিম জানিয়েছেন ৭ জুলাই ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে একটি জাহাজ পৌঁছাচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে পাওয়ার প্লান্টে মজুদ আছে ২০ হাজার টন কয়লা। শুধু তাই নয়, আগামী তিন বছরের জন্য ৮০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহের নিশ্চয়তা রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া থেকে রামপাল পাওয়ার প্লান্টে এই কয়লা পর্যায়ক্রমে আসবে। ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুই ইউনিটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি চালু থাকলে প্রতিদিন ৮ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হবে।
এব্যাপারে বিআইএফপিসিএল’র প্রকল্প পরিচালক অতনু দত্ত জানিয়েছেন, রামপাল পাওয়ার প্লান্টের দ্বিতীয় ইউনিটির বাণিজ্যিক উৎপাদানের অপেক্ষায় আমরা। ইতোমধ্যে রেকর্ড সময়ের মধ্যে আমরা দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি। কয়েক মাসের মধ্যেই এদেশের জনগণ রামপাল পাওয়ার প্লান্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সুফল পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রামপাল উপজেলায় অবস্থিত কয়লাভিত্তিক এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ মালিকানাধীন। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারভিত্তিক মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ৯১৫ একর জমির ওপর বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার যৌথ মালিকানায় বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানী (প্রাঃ) লিমিটেড আমদানি নির্ভর কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে এসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি ও ভারতের বিদ্যুৎ বিভাগ এনটিপিসি সালের ৩০ আগস্ট ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সমঝোতা স্মারক করে। ২০১২ সালের ৩১ অক্টোবর কোম্পানী আইন ১৯৯৪ অনুসারে গঠিত হয় বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানী প্রাঃ লিমিটেড। ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ সহয়তায় এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার কোটি টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ এবং জার্মানির ফিসনার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে।