সুন্দরবন দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে বক্তারা
বিজ্ঞপ্তি : সুন্দরবন দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, ম্যানগ্রোভ এই বনের পরিবেশ, প্রতিবেশ এবং জীব ও প্রাণ বৈচিত্র্য সুরক্ষিত রাখতে রাষ্ট্র নিশ্চুপ থাকলেও সুন্দরবন দিবসের দাবি করে যেতে হবে। সুন্দরবন দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ অপরিকল্পিত প্লাস্টিক ব্যবহার। সুন্দরবন এবং নদী দূষণ রোধ করতে শুধু খুলনাঞ্চল নয়, দেশে প্লাস্টিক এবং বিশেষ করে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে এর ব্যবস্থাপনা কৌশল জোরদার করতে হবে। বনের বন্যপ্রাণী এবং বনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সুন্দরবন একাডেমির ব্যবস্থাপনায় এবারের সুন্দরবন দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় খুলনা প্রেসক্লাবের ব্যাংকোয়েট হলে। সকালে এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন একাডেমীর নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে খুলনা বিশ^বিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. ওয়াসিউল ইসলাম প্লাস্টিক ব্যবহার এবং সুন্দরবন অঞ্চলে তার প্রভাব নিয়ে একটি মাল্টিমিডিয়া উপস্থাপনা করেন। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে আরও বক্তৃতা করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোঃ মনজুর মোর্শেদ, রূপান্তর-এর নির্বাহী পরিচালক ও সুন্দরবন একাডেমীর উপদেষ্টা স্বপন কুমার গুহ খুলনা প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান। তছলিম আহমেদ টংকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সুন্দরবন একাডেমীর পরিচালক ফারুক আহমেদ। খুলনার কর্মসূচীর মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা, সাইকেল র্যালি ইত্যাদি। খুলনা ছাড়াও সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর এবং বরগুনার জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নানান কর্মসুচীর মাধ্যমে দিনটি পালিত হয়।
বহুমাত্রিক নানান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এবারেও ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালন করা হয়। বরাবরের মত “১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ^ ভালবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালবাসুন” শ্লোগানে এবারেও সুন্দরবন দিবস পালিত হয়। পলিথিন এবং প্লাস্টিক দূষণ হতে সুন্দরবনের জলজসম্পদ বিশেষ করে জীব, প্রাণী ও উদ্ভিদ বৈচিত্রকে সুরক্ষায় ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবারের সুন্দরবন দিবসে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
প্রধান অতিথি খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনের পরিবেশ, প্রতিবেশ সুরক্ষিত রাখতে বনবিভাগের পাশাপাশি অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি অংশীজনদের একযোগে কাজ করতে হবে। সুন্দরবনে ৫০২ প্রজাতির প্রাণসম্পদ রয়েছে। সুন্দরবনভিত্তিক গবেষণা জোরদার করতে খুলনাঞ্চলের বিশ^বিদ্যালয়সমূহ উদ্যোগ নিলে বনবিভাগ তাতে সহযোগিতা করবে। সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে বনদস্যুতা বাড়ার কারণে শুধুমাত্র বনজীবীরাই নয় সুন্দরবনের প্রাণী বিশেষ করে দ্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং হরিণও ঝুঁকির মুখে পড়বে। সুন্দরবন থেকে যে কোন উপায়ে বনদস্যু উৎখাতে বনবিভাগের পাশাপাশি আইন-শৃক্সক্ষলা বাহিনীকে অবিলম্বে জোরদার ভূমিকা পালন করতে হবে।
সুন্দরবন সন্নিহিত ৫টি জেলার ১৭টি উপজেলা যেগুলি সুন্দরবনের ইমপ্যাক্ট জোন হিসেবে পরিচিত সেখানে নানাবিধ সচেতনতামুলক কর্মসূচী পালন করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, র্যালি, সিগনেচার ক্যাম্পেইন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাইকেল র্যালি, মানববন্ধন এবং ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে এবার ‘ক্যামেরার ফ্ল্যাশে সুন্দরবন সুরক্ষার বার্তা’ শীর্ষক এক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় শতাধিক প্রতিযোগীর মধ্যে আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় প্রথম হন আলোকচিত্রী হাবিবুর রহমান। প্রথম রানারআপ হন আলোকচিত্রী কামরুল আহসান। দ্বিতীয় রানার্সআপ হন আব্দুল মান্নান রাসেল, রাকিবুল হাসান এবং রুমা মিস্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে ট্রফি এবং প্রাইজ মানি তুলে দেয়া হয়। বিচারকদের রায়ে সবগুলো ছবির ভেতর থেকে সেরা ৫০টি ছবি নিয়ে খুলনা প্রেস ক্লাবে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।