জন্মভূমি ডেস্ক : বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় ব্যাংকে হামলা, টাকা ও অস্ত্র লুটসহ ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট সাতটি মামলা হয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র্যাব এ ঘটনায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সম্পৃক্ততার কথা বললেও মামলায় সংগঠনটির কোনো নেতা বা সশস্ত্র হামলাকারী কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) রাতে বান্দরবান জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া মামলাসংক্রান্ত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানা যায়।
আজ শনিবার (০৬ এপ্রিল) বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, রুমা ও থানচির ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট সাতটি মামলা হয়েছে। জড়িত আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘অজ্ঞাতদের আসামি করে থানচি থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, আরও একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।’
পুলিশ বলছে, ব্যাংকে হামলা, টাকা ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় রুমা থানায় শুক্রবার পুলিশ, আনসার, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা ও মসজিদের ইমাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলের ১৩০-১৫০ জনকে আসামিকে করে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ ও ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিভিন্ন ধারায় ৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। অন্যদিকে থানচি থানায় অজ্ঞাতনামা ডাকাত দলের ২৫-৩০ জনকে আসামি করে সোনালী ও কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা এবং পুলিশ বাদী হয়ে বিভিন্ন ধারায় তিনটি মামলা দায়ের করেছে।
আজ শনিবার বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের ওই শাখা পরিদর্শনে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আজ (শনিবার) থেকে ব্যাংকে ডাকাতি, অস্ত্র লুটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া এ ঘটনা ঘটার আগাম তথ্য দেওয়ার বিষয়ে গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বান্দরবানের রুমা-থানচিতে ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় কুকি-চিন নামে একটি জঙ্গি সংগঠন জড়িত বলে জানা গেছে।
মামলায় বলা হয়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৮টা ১৫ মিনিটে রুমা থানাধীন রুমা বাজারের সোনালী ব্যাংক শাখায় শতাধিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ১৩০ থেকে ১৫০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল ব্যাংকের উত্তর দিক (বেথেল পাড়া) থেকে পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগ নিয়ে অতর্কিত হামলা ও মারধর করে অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার ও অন্য লোকদের জিম্মি করে ফেলে। আক্রমণের সময় সোনালী ব্যাংকের ডিউটিরত গার্ড কনস্টেবলসহ সর্বমোট ১০ জনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুটি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, আটটি চায়না রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি, আনসার সদস্যদের চারটি শটগান ও ৩৫ রাউন্ড কার্তুজ এবং সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। হামলাকারী দলের সদস্যরা ওই রাত ৯টা ১৫ মিনিটে হামলা শেষে লুটকৃত অস্ত্রগুলো ও ম্যানেজার মো. নেজাম উদ্দিনকেসহ ঘটনাস্থলের উত্তরে বেথেলপাড়ার দিকে চলে যায়।
মামলায় আরও বলা হয়, গত বুধবার আনুমানিক দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি সশস্ত্র সংঘবদ্ধ ডাকাতদল থানচি থানাধীন সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে হামলা চালায়। এ সময় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা এবং কৃষি ব্যাংক থেকে আনুমানিক ৩ লাখ টাকাসহ ব্যাংকের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপস্থিত লোকজনের কাছ থেকে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫টি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে, কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে ঘটনাস্থল থেকে পশ্চিম দিকে শাহাজাহানপাড়ার পাহাড়ি এলাকা দিয়ে চলে যায়।
উল্লেখ্য, একের পর এক কেএনএফের সশস্ত্র হামলার কারণে বান্দরবানে সাতটি উপজেলায় বসবাসরত মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক উপজেলায় মানুষ পারতপক্ষে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।