বহু প্রতীক্ষার পর পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করেছে। পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জড়িত রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর শেষে নিউক্লিয়ার ক্লাবের ৩৩তম সদস্যহিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ হলো।
ঐতিহাসিক এই কমিশনিংয়ের মধ্য দিয়ে ইউরেনিয়াম জ¦ালানির যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। এই প্রকল্প দেশের উন্নয়নের মাইলফলক। বিশ্বের এক ডজনের বেশি দেশ এখন পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী। পরমাণু শক্তি অবিশ্বাস্য ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষমতা যেমন রাখে, তেমন এর শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে নিশ্চিত করা যায় মানবকল্যাণও। পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার জ¦ালানির চাহিদা পূরণে যেমন অবদান রাখতে পারে, তেমন চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও রাখতে পারে অবদান। শান্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ বাংলাদেশ এ শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজের ওপর নির্ভর করে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা করছে সরকার। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনই এ মুহূর্তে প্রকৃষ্ট পথ। তবে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে। এখানে বাড়তি সতর্কতা জরুরি।
১৯৬১ সালে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুরে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সেই সময়কার সরকার। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করলে চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রথম ইউনিটের ভৌত এবং অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়ে গেছে ৯০ শতাংশের বেশি। আর দ্বিতীয় ইউনিটের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। রাশিয়ার ঋণ ও কারিগরি সহায়তায় নির্মাণ করা হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুই ইউনিটের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর ৯০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিয়েছে রাশিয়া। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে যে গ্রিড লাগবে তা রূপপুর প্রকল্প থেকেই শুরু হবে। অর্থাৎ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অবকাঠামো তৈরি করছে। এখান থেকে ডেডিকেটেড রেলওয়ে কমিউনিকেশনও তৈরি হবে। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং সেটাকে ধরে রাখতে বিদ্যুতের বিকল্প নেই। ভিশন-২০৪১ তথা উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্নের ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটের আলোকে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত