জন্মভূমি ডেস্ক : প্রাথমিকভাবে প্রায় পৌনে ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেটের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। টাকার অঙ্কে এটি হবে এ যাবতকালের রেকর্ড সবচেয়ে বড় বাজেট। তবে রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হলে শেষ পর্যন্ত বাজেটের আকার কিছুটা কমানো হতে পারে। এবারের বাজেটের মূল্য লক্ষ্য-দ্রব্যমূল্য কমিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। এর পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে যে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে তা সামাল দিতে বেশকিছু কর্মসূচি গ্রহণ করবে সরকার।
বিশেষ করে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন যাতে আর না হয় সেদিকে নজর রাখা হবে। একই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগী ও ভাতা বাড়ানোর মতো কর্মসূচি থাকছে। বাজেটের আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটি’র বৈঠকে বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রাথমিকভাবে আগামী বাজেটের রূপরেখা চূড়ান্ত করবেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের এটিই শেষ বাজেট।
ফের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ না পেলে আ হ ম মুস্তফা কামালের জন্যও বিদায়ী বাজেট হবে এটি। একদিকে, আগামী সংসদ নির্বাচন, অন্যদিকে সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট-এ কারণে নতুন বাজেটকে যতটা সম্ভব জনবান্ধব ও কল্যাণমুখী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চলতি বাজেটের চেয়ে আকার সাড়ে ১৩ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বাজেটের আকার দাঁড়ায় প্রায় ৭ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো। বাজেট নিয়ে এবার সংক্ষিপ্ত আলোচনার মধ্যেই ইতোমধ্যে অর্থমন্ত্রী দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী সমাজের মতামত গ্রহণ করেছেন।
এসব বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, এবারের বাজেট হবে জনবান্ধব ও কল্যাণমুখী। তিনি বলেন, এর আগে কোভিড-১৯ বর্তমান সরকার সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন নতুন সঙ্কট। এই যু্েদ্ধর কারণে বিশ্ব অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়েছে। এ অবস্থায় সরকারও বিভিন্ন নীতিগত সহায়তা প্রদান করে ডলার সংকটসহ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও বাজেটে সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ থাকবে। আশা করছি, সব ধরনের সংকট মোকাবিলা করে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।
জানা গেছে, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের আজকের বৈঠকেই সামষ্টিক অর্থনীতির নীতি, বাজেটের মূল দর্শন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি এসব ঠিক করা হবে। পরে সম্পদ কমিটির সভায় সেই আলোকে বরাদ্দ চূড়ান্ত করা হবে। আগামী ১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে মহান সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ বিভাগ সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে বাজেট প্রণয়নের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে, আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এর আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির একই হার নির্ধারিত রয়েছে। যদিও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সাড়ে ৬ ভাগে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর মূল্যস্ফীতি হার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
এছাড়া বাজেট ঘাটতি ৫ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, আজকের সভায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে প্রাক্কলিত একটি আকার নির্ধারণ করা হবে। এটিই চূড়ান্ত আকার নয়। এরপর আগামী মে মাসের ৫ থেকে ৯ তারিখের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রী আলোচনা করবেন। আর সেখানেই আগামী অর্থবছরের বাজেটের প্রকৃত আকার নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে, আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্য রয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেওয়া রয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, আজকের সভার আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের অগ্রগতি এবং বিশ্ব ও জাতীয় অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে সূচিত পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো (এমটিএমএফ) পর্যালোচনা এবং দ্বিতীয় বিষয় ছিল চলতি অর্থবছরসহ মধ্যমেয়াদি (২০২৩-২৪ হতে ২০২৫-২৬) সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর (এমটিএমএফ) সূচকসমূহের প্রক্ষেপণের ওপর আলোচনা ও অনুমোদন।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত