জন্মভূমি রিপোর্ট
খুলনার রূপসা উপজেলার আবারো গড়ে উঠেছে অবৈধ কয়লার চুল্লি। এসব কয়লা পোড়ানো ধোঁয়ায় বিনষ্ট হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ, হারাচ্ছে জীব বৈচিত্র। আর চুল্লির কালো ধোয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে সাধারণ মানুষ।
মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কয়লার চুল্লি ভেঙ্গে দেওয়া এবং জরিমানা করা হলেও বন্ধ হয়নি এসব অবৈধ কয়লার চুল্লি। দু’একদিনের মধ্যে প্রশাসনের নাকের ডগায় আবারো চালু হচ্ছে এসব কয়লার চুল্লি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রুপসা উপজেরার রামনগর, রহিমনগর, জাবুসা, নন্দনপুরসহ নদীর তীরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক অবৈধ কয়লার চুল্লি। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রাম থেকে বনজ ও ফলজ গাছ কেটে এসব চুল্লিতে কাঠ সরবরাহ করা হচ্ছে। কয়লার চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পরিবেশ। ধোঁয়ায় গাছের পাতাও পড়ে যাচ্ছে। এমনকি পাতার উপর কালো আচ্ছাদন পড়ে আছে। ছোট ছোট পাখির বাসা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীব-বৈচিত্র। কমছে জমির উর্বরতা। হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।
কয়লার চুল্লির কালো ধোঁয়ার কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, কাশি ও সর্দি। নন্দনপুর গ্রামের আহাদ খান বলেন, কয়লার ধোঁয়ায় এলাকায় টেকা দায়। কাঁচা কাঠের পোড়া গন্ধ ও ধোয়ায় শিশুরা খুবই বিপদে আছে। শুধুমাত্র কয়লার ধোয়ার কারণে ডাক্তার ও ওষুধ খরচ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।
একইভাবে রুপসার সখিনা খাতুন বলেন, কয়লা চুল্লির কালো ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়, গলা জ্বলে। ঘরে অসুস্থ মা আছে, ধোয়ার কারণে সে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ওবায়দুল শেখ বলেন, এনিয়ে আর কি বলবো। যারা অভিযান চারায় তারা আসে পকেট ভরে নিয়ে চলে যায়। নাহলে অভিযান চালানোর দিন চুল্লি বন্ধ থাকে কেমনে?
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে রূপসা উপজেলার দক্ষিণ নন্দনপুর গ্রামে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের এ অভিযানে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অপ্রতিম কুমার চক্রবর্তীর নেতৃত্ব দেন।
অভিযানে বেশ কয়েকটি অবৈধভাবে কয়লা তৈরির চুল্লি ধ্বংস করে দেয়া হয়। ‘সিরাজ ট্রেডার্স নামে রহিমনগরে আরও একটি প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ ধারায় তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এবং এক সপ্তাহের মধ্য কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির সকল কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দেন।
মোবাইল কোর্টে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবু সাঈদ, পরিদর্শক মোঃ মারুফ বিল্লাহ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবু সাঈদ বলেন, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলে। যা সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। তিনি আরও বলেন, অবৈধভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।