সম্প্রতি রেলে বেশকটি নাশকতার ঘটনা ঘটছে। এতে কয়েকজন যাত্রীর প্রাণহানি হয়েছে, গুরুতর আহত হয়েছেন ২৫ জন; এছাড়া ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রেলপথ, কোচ ও ইঞ্জিনের। এ কারণে যাত্রীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ অবস্থায় ২ হাজার ৭০০ অস্থায়ী আনসার নিয়োগ দিয়েছে সরকার, যারা রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবেন।
দুই মাস তাদের রেলপথের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করার কথা রয়েছে। রেলপথে নাশকতা কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে তা তাৎক্ষণিক জানার জন্য বর্তমানে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। এ সীমাবদ্ধতা কাটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। জানা যায়, ট্রেনে নাশকতা ঠেকাতে রেলস্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ক্যামেরা বসানোর কাজ চলছে। নাশকতা এড়াতে ইতোমধ্যে কয়কটি ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। রাতে চলা প্রতিটি ট্রেন ৯০ কিলোমিটার থেকে নামিয়ে ৬০ কিলোমিটার গতিতে চালানো হচ্ছে।
এক দশক আগেও রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হয়েছিল রেল। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সেই সহিংসতা আবার ফিরে এসেছে। বস্তুত ৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি রেলপথ শুধু নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব নয়। এর জন্য জনসচেতনতা বাড়ানো এবং সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা জরুরি। নাশকতা রোধে সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হতে হবে। নাশকতাকারীরা যাতে পার পেতে না পারে, কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে যারা রেলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের দক্ষতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। কাজেই রেলে জনবল বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন নিয়োগকৃতরা যাতে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শতভাগ পেশাদারির পরিচয় দিতে সক্ষম হন, সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
রেলে একের পর এক বড় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হলেও বস্তুত পুরো রেলপথই ঝুঁকিতে রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রয়োজনেই মানুষকে প্রতিনিয়ত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছোটাছুটি করতে হয়। অথচ সড়ক বা রেল, কোনো যাত্রায়ই মানুষের জীবন এখন আর নিরাপদ নয়। এ পরিস্থিতির অবসান ঘটানো জরুরি। নিরীহ মানুষ যাতে সহিংসতা ও নাশকতার শিকার না হন, কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে। যেভাবেই হোক, নাশকতাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে। নাশকতাকারীদেরও এটা উপলব্ধি করতে হবে, সহিংসতা ও নাশকতায় হতাহত হন মূলত নিরীহ মানুষ। নাশকতা বা সাধারণ মানুষকে টার্গেট করা গণতন্ত্রের চর্চা হতে পারে না।