কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : র্যাগিং-নির্যাতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। একের পর এক র্যাগিংয়ের ঘটনায় বারবার গণমাধ্যমের নেতিবাচক শিরোনাম হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। দেশব্যাপী সমালোচনার জন্ম দিয়ে উচ্চ আদালতে গড়ালেও র্যাগিংয়ের লাগাম টানতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মাইকিং করে র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হলেও হয়নি র্যাগিং বন্ধ। উল্টো র্যাগিংবিরোধী প্রচারণার মাঝেই ঘটেছে র্যাগিং। প্রশাসন সমস্যা নির্দিষ্ট করে সেগুলো সমাধানে উদ্যোগ না নেওয়ায় একের পর এক র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটছে বলে দাবি তাদের। র্যাগিং প্রতিরোধে প্রশাসনকে ফলপ্রসু পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছেন সচেতন শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে শাখা ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি (বহিস্কৃত) ও চার কর্মী কর্তৃক গণরুমে এন নবীন ছাত্রীকে নির্যাতন ও বিবস্ত্র ভিডিও ধারণের ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনা হয়। ঘটনা উচ্চ আদালতে গড়ালে আদালতের নির্দেশে অভিযুক্ত পাঁচজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আদালত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে র্যাগিংবিরোধী কার্যক্রমের নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী র্যাগিংবিরোধী সেল গঠন করে ক্যাম্পাসে র্যালি, মাইকিং ও প্রচারণা চালায় প্রশাসন।
তবে এসব প্রচারণার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে র্যাগিংও। ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় উচ্চ আদালতে কার্যক্রম চলমান থাকতেই গত বছরের জুনে লালন শাহ হলের গণরুমে (১৩৬ নম্বর কক্ষ) এক নবীন ছাত্রকে রাতভর দফায় দফায় নির্যাতন, বিবস্ত্র করে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করানোর অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলেও পরে ছাত্রলীগ নেতারা তার সঙ্গে কথা বলার পর অভিযোগ তুলে নেন। এ ঘটনা এভাবেই শেষ হয়।
চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি হলটির একই কক্ষে আবারো নবীন আরেক ছাত্রকে রাতভর নির্যাতন, বিবস্ত্র করে অঙ্গভঙ্গি করানো, নাকে খত দেওয়া ও রড দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, গণরুমে নিয়মিতই র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর কোনো তদারকি না থাকায় গণরুম নবীনদের জন্য নির্যাতনস্থলে পরিণত হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রশাসনের র্যাগিংবিরোধী মাইকিং ও প্রচারণা র্যাগিং বন্ধে ফল দেয়নি।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনবরণের দিনে ক্যাম্পাসে র্যাগিংবিরোধী মাইকিং চলাকালে ক্রিকেট মাঠে নবীন এক শিক্ষার্থীকে তার বিভাগের সিনিয়দের কর্তৃক র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। পরে রাতে ডেকে নিয়েও ভুক্তভোগীকে র্যাগ দেন অভিযুক্তরা। এ ঘটনায় গত ২৪ জানুয়ারি পাঁচ শিক্ষার্থীকে এক সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বারবার গণরুমে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণরুম সংস্কৃতি বন্ধ করা যাচ্ছে না। উল্টো গণরুমগুলো ছাত্রনেতাদের তত্ত্বাবধানে দিয়ে রেখেছে হল প্রশাসন। হলগুলোতে কর্তৃপক্ষের পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় নেতারা তাদের মতো করে হল নিয়ন্ত্রণ করছেন। প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের হলে থাকার ব্যবস্থা নেই। তাদের বেশিরভাগই থাকেন কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে। এছাড়া হলগুলোতে আবাসিক শিক্ষকরাও নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন না।
সম্প্রতি র্যাগিংয়ে আলোচিত হলের সব আবাসিক শিক্ষকের মেয়াদ কয়েকমাস আগেই শেষ হওয়ায় তারা হলে আসছেন না। প্রশাসনের কাছে কয়েক দফা বলেও নতুন আবাসিক শিক্ষক নিয়োগ হয়নি বলে দাবি প্রভোস্টের। হলগুলোতে প্রশাসনের তদারকি বাড়ালে র্যাগিং বন্ধ হবে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে এমন ঘটনা বারবার ঘটছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে আমরা র্যাগিং নিয়ে শক্ত অবস্থানে আছি। শিক্ষার্থীদের নৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হতে হবে। অপরাধ করলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’