জন্মভূমি ডেস্ক : গতি, শক্তি, সৌন্দর্য- এই তিন নিরিখেই প্রাণীরা বেশি ব্যবহৃত হয়েছে ব্র্যান্ড বা কোম্পানী লোগো হিসেবে। এছাড়া আভিজাত্য আর ক্ষিপ্রতার প্রতীক হিসেবেও এসেছে প্রাণী। আবার বিলাস (প্রসাধন সামগ্রী, আরাম কেদারা) পণ্যের লোগো হিসাবেও দেখা যায় ময়ূর, হাঁস, উটপাখি কিংবা শিয়াল। গতির প্রতীক হিসেবে ঘোড়ার ব্যবহার গাড়ি কোম্পানীগুলোর কাঙিক্ষত হওয়া স্বাভাবিক। তাইতো ফেরারি, পোর্শে, ফোর্ডের প্রতীক হয়েছে ঘোড়া। আরএফএলের দুরন্ত নামের বাইসাইকেলেরও লোগো বা প্রতীক হলো ঘোড়া। তবে ল্যাম্বরগিনির প্রতীক হলো ষাঁড়। অস্ট্রিয়ার এনার্জি ড্রিংক রেড বুলের প্রতীকও শিং বাগানো জোড়া ষাঁড়। শান্ত ষাঁড়কে দেখি মেরিল লিঞ্চের প্রতীক হতে। তারপর জাগুয়ার (বিগ ক্যাট ফ্যামিলির একটি প্রাণী) নামে তো গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই আছে। পুমাকে আবার কাজে লাগিয়েছে জার্মানির স্পোর্টসওয়্যার প্রতিষ্ঠান পুমা স্পোর্টস। পুমাও বিগ ক্যাট ফ্যামিলির একটি প্রাণী। এছাড়া পুমা নামে নেপালে এবং সলোমন দ্বীপপুঞ্জে ভাষাও আছে। পুমা নামে ভেনিজুয়েলায় একজন গায়ক আছেন আবার মেক্সিকান এক ড্রাগ লর্ডের নামও পুমা। দক্ষিণ আফ্রিকার একটি রাগবি দলের নাম পুমা, ওই দেশেরই একটি স্পোর্টস কার ব্র্যান্ড পুমা। পুমা নামে ইতালি, জার্মানি, ইসরায়েলের যুদ্ধযান আছে।
প্রতীক হিসাবে সিংহ আর বাজপাখির ব্যবহার বুঝি প্রাচীনকাল থেকেই। তখন এখনকার মতো প্রোডাক্ট না থাকলেও রাজা ছিল, রাজ্য ছিল আর ছিল উপাস্য দেবতা। তাই প্রাচীন মিসরে রাগী বাজকে দেখি সূর্য দেবতা রা-এর প্রতীক হিসাবে। বাজপাখি বিজয় আর কঠোর শাসনের রূপক। এখনকার আরব আমিরাত নামের দেশটির জাতীয় প্রতীকও বাজপাখি। ব্র্যান্ড লোগো হিসেবে অবশ্য বাজের চেয়ে ঈগলের চাহিদা বেশি কারণ এটি বেপরোয়া, অকুতোভয়, চাঞ্চল্যকর। তাই জর্জিও আরমানি, আমেরিকান ঈগল আউটফিটারস, উইনস্টন এবং ডবল এ’র লোগো ঈগল। এদিকে সিংহ সাহস, নির্ভয় আর রাজকীয়তার প্রতীক। ভারতের জাতীয় প্রতীক চতুর্মুখী সিংহ যা অশোকস্তম্ভ নামে পরিচিত, যার প্রচলন ঘটেছিল দুই হাজারেরও বেশি বছর আগে। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কোট অব আর্মস প্রতীকেও সিংহ আছে। গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পুঁজো অ্যান্ড সাবের লোগো সিংহ। হলিউডের বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা কোম্পানী এমজিএমের প্রতীক যে গর্জনশীল সিংহ, দেখা হয়ে গেছে প্রায় সব চলচ্চিত্রপ্রেমীর।
এদিকে প্রজাপতির সঙ্গে সিংহ, হরিণ, মাছ মার্কা দিয়াশলাইও পাওয়া যেত আমাদের এখানে ষাট ও সত্তরের দশকে।
টাইগার বাম ঃ একশ বছর ধরে চীন, সিঙ্গাপুর, হংকং, মিয়ানমার, ভারত, বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশেই টাইগার বাম সমাদৃত। ব্যথা কমানোর জন্য এটি ধন্বন্তরি। তা সেই ব্যথা যেখানেই থাকুক-মাথা কিংবা পায়ে। টাইগার বামের প্রতীক তাই টাইগার। সক্ষমতা, কৌশল, তড়িৎ আক্রমণ এবং প্রতিরোধ শব্দগুলো জড়িয়ে আছে বাঘের সঙ্গে। আমেরিকার একটি বিখ্যাত পোশাক ব্রান্ড হোয়াইট টাইগার অ্যান্ড কোং। সুইডেনের বিলাসবহুল একটি ফ্যাশন হাউজ যার প্রতিষ্ঠা ১৯০৩ সালে, তার নাম টাইগার অব সুইডেন। আমাদের এখানে মদিনা সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের একটি ব্র্যান্ড টাইগার সিমেন্ট। ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা হয়েছিলেন এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। বিজ্ঞাপনী কৌশল হিসাবে একে রাজযোটক বলা যেতে পারে।
এবার হাতির কথায় আসা যাক। দিয়াশলাই থেকে তালা, ছাতা থেকে আলমারি ইত্যাদি অনেক কিছুই হতো এবং হয় এক হাতি বা জোড়া হাতির নাম ও ছবি জুড়ে দিয়ে। ময়মনসিংহের মাসকান্দার বিসিক শিল্প নগরীর মেসার্স নূর চিড়া-মুড়ি মিলের জোড়া হাতি মার্কা মুড়ির এতো চাহিদা যে অন্যরা তা নকল করে জেলও খেটেছে। ভারতে হাতি মার্কা সরিষার তেলও জনপ্রিয়। ১ লিটার বিক্রি হয় ১৬০ টাকা রুপিতে। এবার নরসিংদীর রশিদীয়া সোপ ফ্যাক্টরির হাতি মার্কা সাবানের কথা বলতে হয়। এই সাবানের মোড়কের গায়ে লেখা থাকে নিত্যব্যবহারে ত্বকের কোনো ক্ষতি করে না। আরো লেখা থাকে, তুলনামূলক দামে গুণগত মানে অনন্য, ৬০ বছরের ঐতিহ্যে লালিত।
১৯১৩ সালে নিউইয়র্কের ডেভিস অ্যান্ড কাটেরাল কোম্পানী হাতি মার্কা রুমালও এনেছিল বাজারে। ক্যালিফোর্নিয়ার পিংক এলিফ্যান্ট একটি নামী ও দামী পোশাক ব্র্যান্ড। বিশ্বখ্যাত জলি এলিফ্যান্ট ব্র্যান্ডটি কার্বন নেগেটিভ পোশাক তৈরি করে সম্মান অর্জন করেছে। হাতির ছবি দিয়ে আছে কালাহারি রিসোর্টস। এনিমেল প্লানেট নামের টিভি চ্যানেলের লোগোতেও আছে হাতি। আমেরিকার রিপাবলিকান পার্টির নির্বাচনী প্রতীক হাতি।
হিরো আলমের সিংহ ঃ নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে সিংহেরও আদর অনেক। বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন ৭ জন। এদের একজন ছিলেন নায়ক-গায়ক হিরো আলম। তিনি চেয়েছিলেন তার প্রতীক যেন সিংহ হয়। তার চাওয়া পূরণও হয়েছিল, তিনি সিংহ প্রতীকেই লড়েছিলেন সে নির্বাচন। ভোট যদিও বেশি পাননি কিন্তু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলেন। তখন তার সমর্থকেরা স্লোগান দিয়েছিল, ‘মাগো তোমার একটি ভোটে সিংহ মার্কা যাবে জিতে’ অথবা ‘সুন্দরবনে বাঘের ডাক, সিংহ মার্কা জিতে যাক।’
কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ১৮৭০ সালের মে মাসে বসেছিল সিংহ মার্কা জলের কল। লোকে অবাক হয়ে দেখেছিল, সিংহের মুখ বেয়ে গঙ্গাজল পড়ছে। সেই প্রথম পরিশোধিত জল পেয়েছিল কলকাতাবাসী। শ্রীলংকার একটি চায়ের ব্রান্ড সিলন টি যা ২০১৯ সালেও ছিল পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম চা উৎপাদক। এর সিংহ মার্কাটি ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৯৮টি দেশে তালিকাভুক্ত ছিল।
ঢেউটিনের নাম ঃ লোগো হিসাবে ঈগলের আদরের কথা আগেই বলা হয়েছে, ব্র্যান্ড নেম হিসাবেও এর ভারি কদর। বাংলাদেশে টিকে গ্রুপের ঈগল ঢেউটিন রঙিনও পাওয়া যায়। দাম এক টন ৮-১০ হাজার টাকা। পিএইচপি’র আছে এরাবিয়ান হর্স মার্কা ঢেউটিন। আমাদের এখানে মুরগী মার্কা আর গরু মার্কা ঢেউটিনের কথাও জানে সকলে। বিশেষ করে গরু মার্কা ঢেউটিনের বিজ্ঞাপনের কথা অনেকেরেই মুখস্থ – ‘সেই টিনের নাম কি, নাম দিয়া কাম কি, বাজারে গিয়া বলো ভালো টিন চাই, গরু মার্কা মারা ঢেউটিন, টেকসই মজবুত..’। পশু-পাখির নামে ঢেউটিনের নাম রাখার পেছনে সম্ভবত গ্রামপ্রধান বাংলাকেই মাথায় রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এখনো ঢেউটিনের প্রচলন প্রচুর। গ্রামাঞ্চলের মানুষ মুরগী, গরুকে যতটা আপন ভাবে ততটা বুঝি আর বেশি কিছুকে ভাবে না। দুটি প্রাণীই আমাদের গৃহস্থালির অংশ। শুধু গরুর দুধ বিক্রি করে চলে এমন পরিবারের সংখ্যা নেহাৎ কম নয় আমাদের দেশে। মুরগী প্রোটিনের উৎস তো বটেই, সেসঙ্গে মুরগীর ডিম বাড়তি আয়েরও উপায়।
জলে যাওয়া যাক ঃ জলের প্রাণীদের মধ্যে ডলফিন, তিমি আর শার্কের ব্র্যান্ড নেম দর বেশ উঁচুতে। ভারতে ডলফিন নামে একটি গ্রুপ অব কোম্পানী আছে যারা নেপালেও চাল, পাঁপড়, রুটি, মুড়ি, ফুচকা, আটা, ময়দা প্রস্তুত ও বাজারজাত করে। তাদের ডলফিন ব্র্যান্ডের মিট শপও আছে। ১৯৯১ সালে মহারাষ্ট্রে এর প্রতিষ্ঠা। এছাড়া বিশ্বখ্যাত পোশাক ব্রান্ড এসপ্রিটের লোগো ডলফিন। ক্যালিফোর্নিয়ার ডলফিন টেকনোলজি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক নামকরা প্রতিষ্ঠান। তিমি বললেই বোঝায় বড় এবং দুর্লভ কিছু। তিমি বলতে সহমর্মিতাও বোঝায়। আমেরিকান ইনসিওরেন্স কোম্পানী প্যাসিফিক লাইফের লোগো তিমি।
আমেরিকায় শার্কনিনজা নামের হোম ডিভাইস ও অ্যাপ্লায়েন্স কোম্পানীর ব্লেন্ডার, ফ্রায়ার, কফি মেকারের বেশ চাহিদা আছে। ইতালির পল অ্যান্ড শার্ক নামের অ্যাপারেল কোম্পানীর প্রতিষ্ঠা ১৯৭৫ সালে। ফ্লোরিডার গ্রেগ নর্মান কোম্পানীর আগের নাম ছিল হোয়াইট শার্ক এন্টারপ্রাইজ। জাপানের শার্ক লিভার অয়েলের চাহিদা বিশ্বজোড়া।
পান্ডার নাম দিয়ে ঃ পান্ডার মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ড নেম বেশি নেই বিশ্বে। আদুরে আর গোলগোল এই প্রাণী সবারই প্রিয়। তাই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো পান্ডার নাম দিয়ে অনেক পণ্য বাজারে এনেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। জাপানের নামী এক বিস্কুটের নাম হ্যালো পান্ডা। ভারতে পাওয়া যায় পান্ডা চাক্কি আটা। মালয়েশিয়ায় পান্ডা ওয়েস্টার সস দারুণ জনপ্রিয়। আমেরিকায় পাওয়া যায় পান্ডা বাথ টিস্যু। ‘ফুডপান্ডা’ আমাদের শহরের রাস্তায়ও অনেক ঘুরতে দেখা যায়, পান্ডামার্টও জনপ্রিয় হচ্ছে দিনে দিনে।
পরীর হাঁস ঃ ঢালিউড নায়িকা পরীমনি রূপ সচেতন ছোটবেলা থেকেই আর হাঁস মার্কা গন্ধরাজ তেলেরও ভক্ত তখন থেকেই। এর বিজ্ঞাপনচিত্রও ভালো লাগত তার। তাইতো খোলা চুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মডেলও বনে যেতেন। তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, হাঁস মার্কা গন্ধরাজ তেলের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন গত বছর। পরী মনে করেন, বাংলার সব নারীর কাছেই হাঁস মার্কা তেল এক প্রিয় অনুভূতির নাম। তাই এর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হতে পেরে আনন্দ সীমা ছাড়িয়েছিল।
মাইক্রোসফটের প্রজাপতি ঃ ইন্টারনেট প্রোভাইডার হিসেবে মাইক্রোসফট নেটওয়ার্ক বা এমএসএনের যাত্রা শুরু ১৯৯৫ সালে। শুরুর পাঁচ বছর অবধি প্রতিষ্ঠানটি এমএসএন অক্ষরগুলো দিয়েই লোগো তৈরি করেছিল। ২০০০ সাল থেকে অক্ষরগুলোর মাথায় একটি প্রজাপতি দেখা যেতে থাকে, খুব স্টাইলাইজড। ২০১০ সালে এসে প্রজাপতিটি আরো বিমূর্ত রূপ ধারণ করে। ২০১৪ সালে একে অক্ষরগুলোর মাথায় না রেখে নাকের ডগায় নিয়ে আসা হয়। আর সেটিই এখন পর্যন্ত চলছে। এমএসএনে সংবাদ, খেলা, স্বাস্থ্য, বিনোদন, ভ্রমণ, গাড়ি ও আবহাওয়ার খবরও পাওয়া যায়। মাইক্রোসফট কর্তৃপক্ষ প্রজাপতিকে লোগো করার পক্ষে কারণ বলেছে, প্রাণীটি মুক্তি, আনন্দ আর ভালোবাসার প্রতীক।
টুইটারের লোগোতেও একটি পাখি দেখবেন। এটি একটি হামিংবার্ড যদিও টুইটার কর্তৃপক্ষ বাস্কেটবল কিংবদন্তি ল্যারি বার্ডকে সম্মান জানিয়ে একে বলে ল্যারি বার্ড। টুইট শব্দের মানে কিচিরমিচির। পাখিকে প্রতীক হিসাবে ব্যবহারের কারণ বলা হয়েছে, এটি মুক্তি ও অফুরান সম্ভাবনার কথা বলে।
সাপ, কুমীর, পেঁচাও বাদ যায়নি ঃ সাপের দুটি বিপরীতমুখী গুণ আছে। অনেক গতি তুলতে পারে কিন্তু সন্তর্পনে। এই দুই গুনের কথা মনে রেখেই গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আলফা রোমিও সাপকে লোগোয় এনেছে। এছাড়া ভাইপার নামেও প্রতিষ্ঠান আছে যারা গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করে। কোবরা টুলস নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা ক্লিনিং টুলস তৈরি করে।
বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য কুকুরের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এছাড়া কৌতুকপ্রদ এবং বাহক হিসাবেও কুকুরের গুরুত্ব আছে। তাইতো দেখি ফেডএক্সের হোম ডেলিভারির লোগো কুকুর, আবার গ্রে হাউন্ড নামের ট্যুর অপারেটরের লোগোও কুকুর। তবে এইচএমভির লোগোতে কুকুর থাকার কারণ বুঝি উচু স্বর বা লাউড হওয়ার জন্যই। দুই বিশ্বখ্যাত পোশাক প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ল্যাকোস্টে এবং ক্রোকোডাইলের লোগো কুমির।
পেঁচার পরিচয় জ্ঞানী, ধৈর্যশীল আর গভীর দৃষ্টিসম্পন্ন হিসেবে। একে একটি গৃহস্থালি প্রাণী বলাটাও বুঝি ভুল হবে না। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আদি থেকেই। একে চেনাও যায় অল্প আয়াসে মানে খালি চোখ এঁকেও। তাইতো ট্রিপ অ্যাডভাইজারের লোগো পেঁচা, মার্কিন চেইন রেস্তরাঁ হুটারসের লোগোতেও আছে পেঁচা। সোস্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট হুটস্যুটেরও আছে প্যাঁচা।
লোগো হিসেবে পশুপাখির আদর কেন ঃ ব্র্যান্ড হলো ইমেজ বা ভাবমূর্তি যা বস্তুত পণ্যের মান সম্পর্কে ধারণা দেয় আর পণ্যের লোগো এর পরিচয়জ্ঞাপক চিহ্ন। নর্থওয়েস্টার্ন ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির শেরিল এম. স্টোন দ্য সাইকোলজি অব ইউজিং অ্যানিমেলস ইন অ্যাডভার্টাইজিং নামের একটি গবেষণা পত্র তৈরি করেছেন ২০১৪ সালে। এতে তিনি বলছেন, ‘বিজ্ঞাপনদাতারা ভোক্তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়। পশু-পাখিকে লোগো হিসাবে ব্যবহার করার ইতিহাস সুদীর্ঘ এবং এর ফলাফলও আকর্ষণীয়। কারণ পশু-পাখি সম্পর্কে ভোক্তারা আগ্রহ বোধ করেন, আকর্ষণ বোধ করেন। তাই বিক্রি বাড়ানোর একটি উঁচু মানের উপায় হলো, পশু-পাখি দিয়ে পণ্যটিকে প্রতীকায়িত করা। প্রাণীকুল মানুষের মনোজগতের একটি বড় জায়গা দখল করে আছে যা স্মৃতি, আবেগ আর আচরণ দিয়ে গড়া। বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যই থাকে ক্রেতা আকর্ষণ। তাই নানান কিছু নিয়ে গবেষণা চলতে থাকে যেমন রঙ নিয়ে, যৌনতা নিয়ে বা অনুভূতি নিয়ে। বিশেষ করে অনুভূতিকে নাড়া দেয় এমন কিছুর ব্যবহারে ভালো সাফল্য পেতে থাকেন বিজ্ঞাপনদাতারা। যেহেতু প্রাণীকুলের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক প্রাকৃতিক তাই তা যে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করবে তা আর নতুন করে কাউকে বুঝিয়ে দিতে হলো না। বিজ্ঞাপন জগতের তারকা ব্যক্তিত্ব লিও বার্নেট তার প্রমাণও দিলেন কেলগের জন্য টনি দ্য টাইগার লোগো ব্যবহার করে। ওই পঞ্চাশের দশকেই তার চার্লি টুনা আর মরিস দ্য ক্যাটও জনপ্রিয়তার শীর্ষ ছুঁয়ে দিল। সব দেশের মানুষই কিন্তু প্রাণীকুলের চরিত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। একেক প্রাণী মানুষের একেক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ধারক যেমন মৌমাছি পরিশ্রমী, শিয়াল চতুর। ১৯৭৪ সালে জাপানে হ্যালো কিটি তৈরি হয়ে একটা বিড়াল বিপ্লব ঘটে গেল। পরের কয়েক দশকে ওই বিড়াল-চরিত্রটি স্কুল ব্যাগ, এয়ার বাস, কফি, গাড়ি ইত্যাদি নানান কিছুর প্রতীকে পরিণত হলো। পশ্চিমা বিশ্বও বুঝল এটি পূর্ব-এশিয়ার সব দেশেরই প্রিয় চরিত্র হয়ে উঠছে তখন তারাও তাদের পণ্যে হ্যালো কিটি যোগ করতে থাকল।’
১৯৯৬ সালের আরেকটি গবেষণা জানাচ্ছে, আমেরিকার শিশুরা কার্টুন আর চলচ্চিত্রের (যেমন দ্য লায়ন কিং) মাধ্যমে শিশুকাল থেকেই প্রাণীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। তাদের কাছে সিংহটি আনন্দ, উদ্দীপনা বা শক্তির প্রতীক। তাই কোনো পণ্যের গায়ে সিংহ দেখলেই তারা আকৃষ্ট হয় সহজে।
মোদ্দা কথা হলো, পশু-পাখি দিয়ে বানানো লোগো মানুষ দ্রুত চিনতে পারে, আকৃষ্ট হয় সহজে এবং লোগোটি দিয়ে বুঝে নেয় পণ্যটির গুণ ও মান সম্পর্কে। তাই পশু-পাখিকে লোগো হিসাবে ব্যবহার যেমন অর্থকরী সাফল্য দেয় তেমন নির্দিষ্ট পণ্যের রাজত্ব বিস্তারেও সহায়ক হয়।
লোগো হিসাবে ঈগল, হাতি, গরুর দীর্ঘকাল রাজত্ব
Leave a comment