
মোঃ মোস্তফা কামাল, লোহাগড়া : নড়াইলে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে লোহাগড়া উপজেলার চর ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে লুৎফর রহমান মোল্লাকে (৮০) কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে প্রতিপক্ষরা। গত রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বয়োবৃদ্ধ লুৎফর রহমান মোল্লার বুকের বাম পাশে এবং বাম হাতের জয়েন্টে গভীর ক্ষত হয়েছে। এছাড়া শরীরে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের আরও চারজন আহত হয়েছেন। এ দিকে এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। অন্যদিকে দুই পক্ষের পাল্টা-পাল্টি হামলায় লোহাগড়া উপজেলার নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের ব্রাহ্মনডাঙ্গার, চর ব্রাহ্মণডাঙ্গা, হান্দলা ও বাড়িভাঙ্গা চারটি গ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনেকেই আতংকের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। এই চারটি গ্রামে দুই পক্ষের সমর্থক রয়েছে। প্রায়ই দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন চার গ্রামের লোকজন। যুগ-যুগ ধরে চলে আসা সংঘর্ষের কারণে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩০ বছরে ৩টি হত্যাকাণ্ডসহ ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অন্তত ১০ জন। বাড়িঘর ভাঙচুর অগ্নি সংযোগসহ মামলায় নিঃস্ব হয়েছেন অনেক পরিবার, তবুও থামছে না এ চার গ্রামের দ্বন্দ্ব সংঘাত। আধিপত্য বিস্তারসহ তুচ্ছ ঘটনায় প্রায়ই হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ে দুই পক্ষ।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নড়াইলের চর ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে তায়জল ইসলাম পক্ষের সঙ্গে একই গ্রামের নাজির মোল্যার মধ্যে বছরের পর বছর বিরোধ চলে আসছে এর জের ধরে গত রোববার সন্ধ্যায় তায়জল ইসলামের লোকজন দেশী অস্ত্র নিয়ে নাজীর মোল্লার বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় নাজিরের বৃদ্ধ বাবা লুৎফর রহমানকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষরা। এছাড়া একই পক্ষের সুজন ও তার বোন নাসিমা আহত হন। তাদের প্রথমে নড়াইল সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য লুৎফর মোল্লাকে যশোর পাঠানো হয়েছে।
গত রোবাবার দুপুর একটার দিকে উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের তেলকাড়া গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কোটাকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদের গ্রুপ ও কোটাকোল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নান্টু শিকদার গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এই গ্রুপিংয়ের সূত্র ধরে গত বছরের ৩০ মে হাসান চেয়ারম্যান গ্রুপের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (কাঁচামাল ব্যবসায়ী) নিজাম শেখ দুর্বৃত্তের হাতে খুন হন। রোববার সকাল থেকে শিকদার গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের বাড়িঘর পরিস্কার করে বসবাসের উপযোগী করার চেষ্টা করলে হাসান চেয়ারম্যান পক্ষের লোকজন তাদের কাজে বাধা দেয়। এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে চেয়ারম্যানপক্ষের সদস্যরা তেলকাড়া দক্ষিণপাড়া ব্রিজ এলাকায় সংঘটিত হয়ে দুপুরের পর শিকদার গ্রুপের সদস্যদের ওপর হামলা করলে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।
অপরদিকে উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের কোলা গ্রামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সন্ত্রাসীরা এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বাম পায়ের রগকর্তন করে। ঘটনার সাথে জড়িত অভিযোগে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। গত সোমবার দুপুর একটার দিকে ওই গ্রামের মৃত সিরু শেখের ছেলে মাহাবুর শেখের নেতৃত্বে আব্দুল্লাহ, বিল্লাল, সাগর, সুজন, নাসা, ইমরানসহ ২০/২৫ জনের একদল সন্ত্রাসী রামদা, লাঠিসোঠা, লোহার রড, ক্ষুর, চাকু নিয়ে প্রতিপক্ষের শেখ সাজ্জাদ (২৭) এর উপর হামলা চালিয়ে তাকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নাসির উদ্দিন বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িত থাকায় ওই গ্রামের মৃত সিরু শেখের ছেলে ইসরাফিল শেখকে (৪৮) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং ওই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ওসি।