লোহাগড়া প্রতিনিধি : নড়াইলের লোহাগড়ায় ইংরেজি ২য় পত্র পরীক্ষার আগের রাতে ৬ মে রাতে বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে একই গ্রামে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজ শেখ (১৭)। এসময় প্রেমিকার সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে সিরাজকে ধাওয়া করেন প্রেমিকার বাবা সবুর শেখ। সিরাজ দৌড়ে পালনোর সময় মেহগনি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে যান। ওই সময় কোদালের আছাড়ি দিয়ে তার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন প্রেমিকার বাবা সবুর শেখ। ঘটনাস্থলে সিরাজ শেখ মারা যান।
এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজ শেখ হত্যার রহস্য উন্মোচন শেষে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ নাসির উদ্দীন।
তিনি আরও বলেন, রাতেই সিরাজের মরদেহ দেহ সবুর ঘাড়ে করে বাড়ির পাশে পুকুরের কচুরিপানার নিচে ঢেকে রাখেন। ঢেকে রাখার পরও সবুরের মনে সন্দেহ হয় বেঁচে আছে কিনা? সিরাজের মরদেহ দেহ কচুরিপানার নিচ থেকে আবার বের করে গরু জবাই করার ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করেন সবুর।
তারপরের দিন (৭ মে) গভীর রাতে সবুরের ঘরে থাকা ব্যাটারির অ্যাসিড (দাহ্য) নিয়ে সিরাজের মরদেহ পুকুর থেকে উঠিয়ে বিল আড়াআড়ি (২ কিলোমিটার দূরে) শওকত হোসেন মিরুর আমবাগানে নিয়ে যান। সিরাজের মরদেহ আমবাগানে ফেলে ব্যাটারির অ্যাসিড সিরাজের মাথায় ঢেলে মাথার মাংস গলিয়ে দেন সবুর শেখ। অ্যাসিড দিয়ে পোড়ানোর উদ্দেশ্য ছিলো লাশটি যেন কেউ শনাক্ত না করতে পারে।
উল্লেখ্য,পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষার্থী সিরাজ শেখের সঙ্গে একই গ্রামের মাদ্রাসাপড়ুয়া আসামী সবুর শেখের মেয়ে ইয়াসমিনের দুই মাস ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমিকার ডাকে সাড়া দিয়ে দেখা করতে ৬ মে রাতে সিরাজ এসেছিল। পরে সিরাজের বাবা ছেলের সন্ধান না পেয়ে ৮ মে লোহাগড়া থানায় সাধারন ডায়েরী করেন। তারপর থেকে শুরু হয় পুলিশের তদন্ত।গত ১০ মে সিরাজের মরদেহ লংকারচরের মিরুর আমবাগানে স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।ঘটনাস্থলে পুলিশ যেয়ে সিরাজের বাবাকে খবর দেয়।সিরাজের বাবা ঘটনা স্থলে যেয়ে তার ছেলের লাশ সনাক্ত করেন। পরে সিরাজের বাবা শেখ ইকরাম আলী ১২ মে গভীর রাতে চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের আসামি করে লোহাগড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার ১৫ ঘণ্টার মধ্যে লোহাগড়া থানা পুলিশসহ জেলা পুলিশের একাধিক টিম তদন্তপূর্বক হত্যার রহস্য উন্মোচন করে। গ্রেপ্তারকৃত চার জন আসামিকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার কথা স্বীকার করেন সবুর শেখ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের চরদৌলতপুর গ্রামের মৃত ইস্রাফিল শেখের ছেলে সবুর শেখ (৫২), সবুর শেখের স্ত্রী শাহিনা বেগম (৪৭), ছেলে জাহিদুল শেখ (২০), ও মেয়ে ইয়াসমিন খানম (১৬)।
এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা ছুরি, রক্তমাখা একটি কোদালের আছাড়ি জব্দ করে পুলিশ।
নিহত সিরাজ শেখ ইতনা ইউনিয়নের চর দৌলতপুর গ্রামের কৃষক শেখ ইকরাম আলীর ছোট ছেলে। সে চর দৌলতপুর সরস্বতী একাডেমি বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় তিনটি বিষয়ে অংশগ্রহণ করেছিল।