মোঃ মোস্তফা কামাল, লোহাগড়া : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের পার-শালনগর গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে সৈয়দ হাসমত আলী (হাসু) নামে এক ব্যক্তি লোহাগড়া সেটেলমেন্ট অফিসের মোহরি পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে জমি-সংক্রান্ত নানা প্রতারণা করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভুক্তভোগী মনি মোহন বিশ্বাস জানান, এই প্রতারক হাসমত আলী হাসু আমাদের জয়পুর মৌজায় ৫২ শতক জমি জোরপূর্বক স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে তার নিজের স্ত্রীসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের নামে রেকর্ড করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নিয়েছে। তিনি আরও জানান, হাসু উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষের জমি-জমা সংক্রান্ত কাগজপত্র ঠিক করে দেয়ার নাম করে ৫ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছেন।
আরও বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, হাসু নামজারি, দলিল সংশোধন, খতিয়ান পরিবর্তন এবং বিভিন্ন জমি সংক্রান্ত কাগজপত্রের নামে মোটা অংকের টাকা গ্রহণ করতেন। হাসুর দেওয়া বিভিন্ন পর্চায় দেখা গেছে, তিনি ইচ্ছামত কেস নাম্বার বসিয়ে ভুয়া পর্চা তৈরি করতেন এবং গ্রাহকদের হাতে তুলে দিতেন। গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর, হাসু কাজ শেষ না করে নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতেন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সংখ্যালঘু ভুক্তভোগী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, হাসু আমার তিন একর জমি আত্মসাৎ করেছে। আমি এখন সর্বস্বান্ত। আমার এখন ভারতে চলে যাওয়া ছাড়া কোন গতি নাই।
খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে, হাসু খুলনায় একটি ৪ তলা বাড়ি সহ নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর, ভুক্তভোগীরা স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। ইতিমধ্যে প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে।
লোহাগড়া সেটেলমেন্ট অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের অফিসে হাসু নামে কোনো মোহরি বা কর্মচারী নেই। যদি কেউ প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত হাসমত আলী হাসু, তাঁর বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কখনোই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।
এদিকে, স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ ও প্রতারক হাসুর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের প্রতারণার শিকার না হয়।