
মামুন খান
রূপসা থানায় দায়ের হওয়া মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলার একজন আসামি সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। তিনি খুলনা জেলা কারাগারের রূপসা ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে ছিলেন। আলাপকালে তিনি বলেন, ওই কক্ষে ৮০-৯০ জন বন্দী ছিলেন। একটি কম্বল বিছিয়ে ছয় জন ঘুমাতেন। নড়া-চড়ার অবস্থা থাকতো না। ভীষণ কষ্ট হতো। টয়লেটের সামনে প্রায় সময় লাইন পড়ত। মল-মূত্র ত্যাগের জন্য অপেক্ষার যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে উঠত। শৌচাগারগুলোও অপরিচ্ছন্ন।
খুলনা জেলা কারাগারে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ বন্দী অবস্থান করছেন। হাজতী-কয়েদীদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে। গরমকালে তাদের কষ্টে নতুন মাত্রা যোগ হয় বলে জানা গেছে।
ভৈরব নদের তীরে ৫ দশমিক ৩১ একর জমির উপর ১৯১২ সালে এ কারাগারটি গড়ে উঠেছিল। যেখানে ৬শ’ ৭৮ জন বন্দী ধারণ ক্ষমতার বিপরীতে গত মঙ্গলবার এক হাজার ৩শ’ ১২ জন অবস্থান করছিলেন। যাদের মধ্যে হাজতী এক হাজার ৩৮ জন। কয়েদী ছিলেন-২শ’৭৪ জন। ফাঁসির দÐপ্রাপ্ত ৪৪ জন। কারাগারে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১৪শ’ বন্দী অবস্থান করেন বলে কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছেন।
সূত্র জানান, রূপসা ভবনে আট টি ওয়ার্ড, কপোতাক্ষ ভবনে ছয়টি ওয়ার্ড, ভৈরব ও শিবসা ভবনে দুইটি ওয়ার্ড এবং সাধারণ সেলে পাঁচটি ওয়ার্ড রয়েছে। রূপসা বাদে অন্য ভবনগুলো একতলা। নারী বন্দীরা একতলা একটি ভবনে থাকনে, ভবনটির নাম মহিলা ওয়ার্ড। ৩০ সেলের তিন তলা ভবনটিতে মৃত্যুদÐে দÐিতরা এবং দুর্ধর্ষ প্রকৃতির হাজতী-কয়েদীরা অবস্থান করেন।
সূত্রমতে, চার তলা বিশিষ্ট রূপসা ভবনটিতে গত পাঁচ-ছয় বছর আগে ফাটল ধরেছিল। প্লাস্টার খসে পড়ছিল। জানালা-দরজাও ভেঙ্গে পড়ছিল। তখন কর্তৃপক্ষ ভবনটির সংস্কার করান। ভবনটিতে রঙের প্রলেপ থাকলেও কাঠামো নড়বড়ে রয়ে গেছে। ঝড়-বৃষ্টির সময় বন্দীরা আতংকে থাকেন। ওই রকম পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত বন্দী থাকা ওয়ার্ডগুলোতে চাপ কমানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। কিছু বন্দীকে অন্য ভবনে স্থানান্তর করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ৩০ সেলের তিন তলা ভবনটির বিভিন্ন স্থান থেকে প্লাস্টার খসে পড়ছে।
সূত্র জানান, কারাগারের একেকটা টয়লেট ৮০ থেকে ৯০ জন বন্দী ব্যবহার করেন। কক্ষের বাইরে সিমিত সংখ্যক টয়লেট রয়েছে, সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গোসলের সময়ও মাঝে-মধ্যে তাদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মোঃ ওমর ফারুক দৈনিক জন্মভ‚মিকে বলেন, চলমান আধুনিক কারাগারের নির্মাণ কাজ আগামী ২০২৩ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তখন বন্দীদের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি অবস্থান জনিত সমস্যা-সংকট থাকবে না। সে সময় নতুন কারাগারটি পার্ট-১ এবং পুরাতন কারগারটি পার্ট-২ হিসেবে ব্যবহার হবে। পুরাতন কারাগারের জরাজীর্ন ভবনগুলো ভেঙ্গে নতুন স্থপানা নির্মাণের জন্য কর্র্তৃপক্ষ প্রকল্প গ্রহণ করবেন।
প্রসঙ্গত, ডুমুরিয়া উপজেলার চক হাসানখালি মৌজায় ৩০ একর জমির উপর ২শ’ ৫১ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে গত ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে নতুন কারগার নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেখানে ছোট-বড় অর্ধশত বহুতল ভবনসহ বন্দীদের জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকছে। দুই হাজার বন্দী ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অবকাঠামো নির্মাণ হলেও ভবিষ্যতে সেখানে আরও দুই হাজার হাজতী-কয়েদীর অবস্থানের মতো স্থাপনা তৈরির জন্য স্থান সংরক্ষিত থাকছে। নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ গণপূর্ত অধিদপ্তর-২ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, কারাগারের ৮০ শতাংশের বেশি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকী কাজ সম্পন্নের জন্য গত ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ২শ’৮৮ কোটি ২৬ লাখ টাকার একটি ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরি করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশন ওই টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে।