জন্মভূমি ডেস্ক : শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ভিডিও ধারণ করতে যাওয়ায় মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যানপ্রার্থী হাজী মুহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজির সমর্থকদের হামলায় অন্তত ১০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২১ মে) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের ফরাজী দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে সাতজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়, যায়যায়দিনের জাজিরা প্রতিনিধি ইমরান হোসাইন, দৈনিক জবাবদিহির জাজিরা প্রতিনিধি সুজন মাহমুদ, দৈনিক সংবাদের জাজিরা প্রতিনিধি পলাশ খান, ঢাকা ক্যানভাসের প্রতিনিধি বরকত মোল্লা, বাংলাদেশ সমাচারের রুহুল আমিন, কালবেলার জাজিরা প্রতিনিধি আব্দুর রহিম।
আহতদের মধ্যে দৈনিক সংবাদের জাজিরা প্রতিনিধি পলাশ খান, জবাবদিহির প্রতিনিধি সুজন মাহমুদ, বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয় ও ঢাকা ক্যানভাসের প্রতিনিধি বরকত মোল্লাসহ অন্যান্যদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে জাজিরা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইদ্রিস ফরাজী। বেলা ১১টার দিকে সেনেরচর ইউনিয়নের ফরাজী দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদরাসা কেদ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা ভোটারদের চাপ প্রয়োগ করে প্রকাশ্যে ভোট নিচ্ছিলেন। এমন অভিযোগ পেয়ে কেন্দ্রে ভিডিও ধারণ করতে যান বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়সহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় মোটরসাইকেল প্রতীকের ব্যাচ পরিহিত এক ব্যক্তি তাদের প্রথমে বাধা দেন, পরে তাদের কাছ থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে সঙ্গে থাকা অন্য সাংবাদিকরা তাদের ছাড়াতে গেলে কমপক্ষে ৫০ জন মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থক তাদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। পরে আহতদের মধ্যে চারজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
হামলায় আহত সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয় বলেন, আমরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ জানতে পারি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা। পরে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ভিডিও ধারণ করতে গেলে সবুজ শার্ট ও মোটরসাইকেলের ব্যাচ পরা এক যুবক আমাদের বাধা দেয় এবং মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে আমার সঙ্গে থাকা অন্য সহকর্মীরা আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে এলে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থীর ভাই ইমন ফরাজীর নেতৃত্বে অনেক লোক এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা পুলিশের সাহায্য চাইলেও তারা আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
আহত আরেক সাংবাদিক বরকত মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের ওপর যখন হামলা চালানো হয়, আমরা প্রশাসনের কাছে হাতজোড় করে বাঁচাতে অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু তারা তখন সরে যায়। কেউ আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। সাংবাদিক পরিচয়পত্র দেখলেই হামলাকারীরা মারধর শুরু করেছে।
যায়যায়দিনের প্রতিনিধি ইমরান হোসেন বলেন, আমাদের ওপর যখন হামলা চালানো হয় প্রশাসন শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে। হামলাকারীরা যখন আমাদের অবরুদ্ধ করে সন্ত্রাসী কায়দায় মারছিল প্রশাসনের লোকজন তখন মজা নিচ্ছিল। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে সঠিক বিচার চাই।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, এখানে বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল। এদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া একজনের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে, তার অবস্থার উন্নতি না হলে ঢাকায় পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যানপ্রার্থী মুহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজিকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জাজিরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টির খোঁজখবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, আমরা খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। যারা আহত হয়েছেন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।