এম সাইফুল ইসলাম
মোঃ শরিফুল ইসলাম স্বপন। শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক আলী হাজরার ছেলে। বর্তমানে আহসান আহমেদ রোডের এ এ ডায়াগনিষ্ট সেন্টারের পরিচালনা করছেন। একাত্তর সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা থেকে তার বাবা নিখোঁজ হয়ে যান। তিনি তখন মায়ের কোলের শিশু। বয়স মাত্র পাচ বছর। বুঝতেন না বাবা কাকে বলে। যখন তিনি বুঝতেন শিখলেন তখন আর কাউকে বাবা বলে ডাকার ছিল। যে শূণ্যতা আজও তাকে কাদায়।
তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমার বাবা শহীদ মোবারক আলী হাজরা ১৯৩৮ সালে বাগেরহাট জেলা কচুয়া থানার ট্যাংরাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃতঃ আলহাজ্জ্ব হাশেম আলী হাজরা এবং মাতার নাম মৃতঃ জোবেদা খাতুন। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পিতা-মাতার কনিষ্ঠ সন্তান।
তিনি ট্যাংরাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কচুয়া পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি পিসি কলেজ বাগেরহাটে শিক্ষাগ্রহণ করেন।
তিনি ১৯৬১ সালে স্ত্রী মোস্ম্মাৎ আরিফা খানমকে বিয়ে করেন। তিনি চার পুত্র ও এক কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তার কর্মজীবন নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি জানান, পহেলা জানুয়ারি ১৯৬২ সালে ঢাকাস্থ লালবাগ থানায় সরাসরি এস আই পদে যোগদান করে। ১৯৬৫ সালে তিনি নরসিংদী থানায় নিযুক্ত হন। এরপর সূত্রাপুর, টুংগীবাড়ি ও আড়াইহাজার থানায় দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি রায়পুরা থানায় ওসি হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
নিখোঁজের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকসেনারা নরসিংদির রায়পুরা থানা আক্রমণ করলে তিনি তার স্ত্রীর বড়ভাই খন্দকার সহিদ উদ্দিনের গোপিবাগের বাসায় অবস্থান করেন। পরে গ্রামের বাড়িতে স্থানীয়ভাবে গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ রাখেন। এরই মধ্যে একদিন সংগঠনের প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে ঢাকা রাজারবাগের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলে পথিমধ্যে তাকে তার মোটর সাইকেলসহ পাক বাহিনি আটক করে। এসময় বাবা পাশেই তার এক আত্বীয় বাড়িতে গাড়ি রেখে শেষ বিদায় আর্মির সাথে চলে যান। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ। আর কোনদিন তার খোজ মেলেনি।
যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ মহান মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে এককালীন দুই হাজার টাকা প্রদান করেন। ১৯৯৭-৯৮ সালে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে ক্রেষ্ট ও ১৭টি ১০০ টাকার প্রাইজবন্ড এবং ১৯৭৯ সাল থেকে শহীদের স্ত্রীকে সম্মাননা ভাতা বাবদ ৫০০ টাকা প্রদান করা হয়।
শহীদ মোবারকের ছেলে স্বপন এখনও বিশ্বাস করে বাবা ফিরে আসবে
Leave a comment