ক্রীড়া প্রতিবেদক : কোটা সংস্কার আন্দোলনে জাতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান অনেক ক্রিকেটার প্রতিক্রিয়া জানালেও নিশ্চুপ ছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। অনেক আগে থেকেই তাকে নিয়ে সমালোচনা চলছিল এই আন্দলনে নিশ্চুপ থাকায়। শেষে গণআন্দোলনের মুখে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর পদত্যাগ করার দিনে বিক্ষুব্ধ জনতা ক্ষোভে নড়াইলে মাশরাফির বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং দিয়ে থাকে আগুনও।
এ নিয়ে এতদিন কিছু না বললেও অবশেষে দেশের খেলাধুলা ভিত্তিক এক ইউটিউব চ্যানেলে মুখ খুলেছেন সাবেক বাংলাদেশ ক্রিকেটের অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাশরাফি। দেশের কোটা সংস্কারের দাবির সময় এবং গণআন্দোলনের মূহুর্তে মানুষের পাশে থাকতে না পারায় দায় নিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
খেলাধুলা ভিত্তিক এক ইউটিউব চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে দেশের কোটা সংস্কারের দাবির মূহুর্তে পাশে না থাকার দায় নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘এই কষ্ট থাকবেই। হয়তো আজীবন থাকবে। দেশের একটা ক্রাইসিস মুহূর্তে পাশে থাকতে পারিনি, কিছু করতে পারিনি, এটা আমাকে সবসময়ই ভোগাবে, পোড়াবে। সবসময়ই থেকে যাবে। সবসময় সব কথা বলা যায় না।’
‘কিছু জিনিস হয়তো বলার ব্যাপারও নয়। এতদিন চুপ ছিলাম। আজকে কিছু বলছি। কিছু হয়তো সামনে বলব। জীবনে অনেক কিছু হবে। তবে এই কষ্টটা রয়ে যাবে। যত কিছুই হোক, এটা কখনও যাবে না। নিজের ওপর সেই হতাশা সবসময়ই থাকবে।’
আমি ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ না করার ব্যর্থতার কষ্ট আমাকে শুরু থেকে পোড়াচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ম্যাশ বলেন, ‘বিশেষ করে, মানুষের যে আবেগ-ভালোবাসার জায়গা ছিল, ক্রিকেটার মাশরাফির প্রতি যে দাবি ছিল, সেটা পূরণ করতে পারিনি এবং সেই দায় মাথাপেতেই নিচ্ছি। আমি ব্যর্থ হয়েছি এবং সেটা আমাকে সেই শুরু থেকেই পোড়াচ্ছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে, আমি কিছু করার চেষ্টা করেছি। পারিনি।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে দাবি যৌক্তিক স্বীকার করে তিনি বলেন,‘কোটা সংস্করারের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক ছিল। আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছিল, এটা হয়ে যাবে। তবে সবাই যখন চাচ্ছিল যে আমি কিছু একটা বলি বা স্ট্যাটাস দেই (ফেইসবুকে)… ততক্ষণে আসলে সবকিছু এত দ্রুত হচ্ছিল… ভাবছিলাম যে আমি যদি কিছু লিখি বা মন্তব্য করি, সেটার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে… অনেক কিছু ভাবছিলাম আর কী… সব মিলিয়ে কিছু লেখা হয়নি।’
দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার দিনে তার বাড়িতে আগুণ লাগানোয় কষ্ট পেলেও কারো প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই বলে জানিয়েছেন মাশরাফি। একই সঙ্গে তার প্রতি কারও এখনও ক্ষোভ থাকলে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। মাশরাফি বলেন, ‘নড়াইলের বাড়িটা করেছিলাম মায়ের জন্য। এখন শেষ। অনেকেই বলেছেন মামলা করতে, ব্যবস্থা নিতে। ছবি-ভিডিও সবই আছে অনেকের কাছে। তবে আমি বলেছি, এসব করব না। আমার বাবাকেও বলে দিয়েছি। এখনকার সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচন করেও যে সরকার আসুক, কারও কাছেই বিচার চাইব না। কোনো অভিযোগ নেই।’
নড়াইলের মানুষের বিরুদ্ধে বিচার চাইবো না বলে ম্যাশ বলেন, ‘খুলনা-যশোর থেকে বা ঢাকা থেকে গিয়ে কেউ এই বাড়ি ভাঙেনি। নড়াইলের কোনো না কোনো জায়গা থেকে উঠে আসা মানুষই পুড়িয়েছে। নড়াইলের মানুষের বিরুদ্ধে বিচার আমি চাইব না। নিজের ভাগ্য মেনে নিয়েছি। হয়তো কোনো ভুল করেছি, সেটার ফল পেয়েছি। কষ্ট আছে অবশ্যই, তবে রাগ-ক্ষোভ নেই কারও প্রতি। আমার প্রতি এখনও কারও ক্ষোভ থাকলে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’