উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্য অর্জন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাসহ আগামী দিনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য দেশে উপযুক্ত কারিকুলাম ও পাঠ্যবই দরকার। এ লক্ষ্য সামনে রেখেই তৈরি করা হয়েছে রূপরেখা, যার আলোকে কারিকুলাম চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। দুই বছর আগে নতুন কারিকুলাম তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই অনুযায়ী হালনাগাদ কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই তৈরির কথা।
দেশে প্রথমবারের মতো একটি অভিন্ন ধারার এবং একই উদ্দেশ্যমুখী কারিকুলাম তৈরির সুযোগ এলেও বর্তমানে এ নিয়ে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। শিক্ষাবিদরা দীর্ঘদিন ধরে অভিন্ন ধারার এবং একই উদ্দেশ্যমুখী কারিকুলামের কথা বলে আসছেন। কাজেই অভিন্ন কারিকুলামের মাধ্যমে সমন্বিত শিক্ষা বাস্তবায়নের সব বাধা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হলেও এ প্রয়াস ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। জানা গেছে, পুরোনো ধাঁচেই প্রাথমিকের কারিকুলামের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে; নতুন ধারায় তৈরি হচ্ছে মাধ্যমিক স্তরেরটি। অথচ দুই ধাপেই নতুন ও আধুনিক কারিকুলাম হওয়ার কথা। তা না-হলে মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বর্তমানে যা হচ্ছে তাতে দুই পথে হাঁটছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর।
জানা গেছে, প্রাথমিক স্তরের প্রস্তাবিত কারিকুলাম কোনোভাবেই অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা রূপরেখার সঙ্গে মিলবে না। প্রাথমিকের কারিকুলাম অনেকটা আগের মতোই রয়ে গেছে। আলাদা কারিকুলাম হলে আমাদের লক্ষ্য অর্জন যে বাধাগ্রস্ত হবে, তা বলাই বাহুল্য। প্রস্তাবিত রূপরেখা অনুযায়ী কারিকুলামে দুই ধরনের শৃঙ্খলা বা আন্তঃসম্পর্ক প্রস্তাব করা হয়েছে। একটি হচ্ছে আনুভূমিক, অপরটি ঊর্ধ্বমুখী।
প্রথমটি এক শ্রেণির সঙ্গে আরেক শ্রেণির সম্পর্ক নির্দেশ করে। দ্বিতীয়টি পঠিত বিভিন্ন বিষয়ের সম্পর্ককে বোঝায়। কারিকুলামের ‘আলাদা চলো নীতির’ কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে যেসব ক্ষতি হতে পারে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : দক্ষতা তৈরি বিঘিœত হতে পারে; কারিকুলাম বিন্যাস ও প্রয়োগের পরিবেশ নষ্ট হতে পারে; শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক স্তরে গিয়ে নতুন পরিস্থিতিতে পড়ার কারণে ঝরে পড়ার হার বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে পড়বে আরও নানামুখী প্রভাব।
বিজ্ঞানের গবেষণা বর্তমানে এমন উচ্চপর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সেখানে মানুষের মস্তিষ্ক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যৌথভাবে কাজ করে সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া খুঁজে বের করে। এসব বিষয়ও শিশুশিক্ষার্থীর সামনে তুলে ধরতে হবে। বয়স অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক তথ্য শিশুদের সামনে তুলে ধরা না-হলে তারা পিছিয়ে পড়বে। আমরা জ্ঞানসমৃদ্ধ সমাজ নির্মাণ করতে চাই।