জন্মভূমি রিপোর্ট : এক সময়ের শিল্প নগরী খুলনার উন্নয়নই আমার মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য পূরণে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নগরবাসীর নিরঙ্কুশ সমর্থনে আমি মেয়র নির্বাচিত হই। সে সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুলনার উন্নয়নে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দ দেন। কিন্তু ২০১৩ সালের নির্বাচনে আমি মেয়র নির্বাচিত না হওয়ায় নগরবাসী সেই অর্থের সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এবারও চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী পুণরায় আমাকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়ন প্রদান করেছেন। বিদ্যমান প্রকল্পের পাশাপাশি আরও ১৫শ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। চলমান কাজের সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাপ্তিসহ প্রেরণকৃত প্রকল্পটির অনুমোদন সাপেক্ষে সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য আসন্ন মেয়র নির্বাচনে আপনাদের মাধ্যমে নগরবাসীর সার্বিক সহযোগীতা ও সমর্থন আশা করছি। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বাস্থ্যকর শহর গড়ে তুলতে বিশে^র ৫টি শহরকে মনোনীত করা হয়েছে যার মধ্যে খুলনা একটি। ‘হেলদি সিটি’ প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনাকে একটি আধুনিক, স্মার্ট, সবুজ, স্বাস্থ্যকর শহরে পরিণত করা সম্ভব হবে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সফল মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক গতকাল নগর ভবনে শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে দ্বিতীয় মেয়াদের বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরতে গিয়ে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বেই মহনগরীর উন্নয়নে প্রায় ১৫শ কোটি টাকার দু’টি প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাাসন প্রকল্পে বরাদ্দ হয় ৬শ’ ৭ কোটি ৫৬ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। মহানগরীর ৫৭১টি সড়ক উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরই মধ্যে ৪১৮টি সড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর চলমান রয়েছে ১১৪টি এবং টেন্ডারের অপেক্ষায় আছে ৩৯টি সড়ক। দ্বিতীয় প্রকল্পে শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয় ৮২৩ কোটি ৯৭ লক্ষ ৬ হাজার টাকা। মহানগরীর ২০৬টি ড্রেন উন্নয়নে এ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ প্রকল্পে ৫২টির কাজ শেষ হয়েছে। চলমান আছে ৮৫টি এবং টেন্ডারের অপেক্ষায় আছে ৭২টি।
২০১৮ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় থোক বরাদ্দ দেয়া হয় ৪৯ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা। এ অর্থে ৬৪৭টি প্রকল্পের উন্নয়ন করা হয়েছে এবং অপেক্ষায় আছে ১২৪টি প্রকল্প। প্রান্তিক জনগোষ্টির জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিগত ৫ বছরে ৩৭ কোটি ৭৪ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪০ হাজার ৫৮৭টি পরিবারের জীবনমান উন্নয়নে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি শিক্ষা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, খুলনা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নগরীর ২২টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। হাইটেক পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। নগরবাসীর মাঝে স্বাস্থ্যকর মাংস সরবরাহের জন্য মৎস্য ও প্রণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজবাঁধ এলাকায় সিঘ্রই একটি কসাইখানা নির্মাণ করা হবে।
তিনি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নগরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও মাটির নিচের পানি সংরক্ষণে প্রাতিক নদী, খাল ও জলাশয় সংরক্ষণ, চিত্তবিনোদনে পার্ক এবং খেলার মাঠ নির্মাণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ১টি করে এসটিএস নির্মাাণ, প্রান্তিক জনগোষ্টির উন্নয়নে কার্যক্রম চালু রাখা, নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে সিটি সেন্টার, ওয়ার্ড অফিস,কলেজিয়েট স্কুল, কেসিসির বিভিন্ন ছাদে ও স্থাপনায় সোলার প্যানেল স্থাপন, পানিচক্র প্রকল্প বাস্তবায়ন, সিটি ডেভেলপমেন্ট প্লান প্রস্তুত ও খুলনা স্মার্ট সিটি ব্যাসিক প্লান প্রস্তুত করা হবে।