জন্মভূমি ডেস্ক : সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শুধু খালেদা জিয়াকে এ অবস্থায় (অসুস্থ) রেখে নয়, হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন হবে।’
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল প্রশ্ন তুলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য তিনি কীভাবে দিতে পারেন? আমাদের বোধগম্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে দ্রুত বিদেশে নিতে হবে। নয়তো এর সব দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছেন কোনো শর্ত সাপেক্ষে তিনি দেশের বাইরে যাবেন না। সরকার চাইলেই তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে। এজন্য সরকারের সদিচ্ছা দরকার।
সরকার খালেদা জিয়াকে ইচ্ছা করে আটকে রেখেছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, লিভারের জটিল রোগের পাশাপাশি দুটি কিডনি দুর্বল হয়ে পড়েছে খালেদা জিয়ার। ১৫ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড দ্রুত তাকে বিদেশে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দণ্ডপ্রাপ্ত অনেকেই বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। সারাবিশ্বে এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে। চিকিৎসা পাওয়া খালেদা জিয়ার মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার।
খালেদার সাজা স্থগিতের শর্ত প্রত্যাহার করুন
সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের শর্ত প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। দলের প্রধানের বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে না দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার তার দণ্ড স্থগিতের শর্তগুলো প্রত্যাহার করে নিলে গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসা প্রাপ্তি থেকে আর বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আইনে কোথায়ও উল্লেখ নেই চিকিৎসার জন্য শর্ত প্রত্যাহার করার সুযোগ থাকবে না। অসুস্থ জেনেই সরকার বাড়িতে থাকার শর্তে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়েছিল। সুতরাং যে অসুস্থতার সুচিকিৎসার সুযোগ দেশে নেই, সেই রোগের চিকিৎসা যে জায়গায় রয়েছে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে না। অন্যদিকে সুচিকিৎসার সুযোগ পাওয়া একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এই মৌলিক অধিকার আমাদের দেশের সংবিধানও নিশ্চিত করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে তা কোনো নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে না বরং প্রতিষ্ঠিত মানবিক ও আইনানুগ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা হবে।
বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে আইনী ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে তার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের আইনমন্ত্রী ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার দোহাই দিয়ে বলছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়ার সুযোগ আইনে নাই। যদিও সিনিয়র আইনজীবীরা গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে ইতোমধ্যেই বলেছেন সরকার চাইলে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে আইনে কোনো বাধা নেই।
যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, তা না হলে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সরকারকে দায়ী থাকতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন হবে।