শেখ হাসান আল মাহমুদ, শরণখোলা : শেষ হয়েছে দুবলারচরের শুঁটকি মৌশুম । দীর্ঘ পাঁচ মাস সাগরে মাছ ধরা শেষে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের অনেকেই লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ী ফিরতে শুরু করেছেন। অপরদিকে এবছর বনবিভাগের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হবেনা বলে বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে দুবলারচরে শুঁটকি মৌশুম শুরু হয়ে ৩১ মার্চ মৌশুম শেষ হওয়ার কথা কিন্তু জেলেদের আবেদনে বিশেষ বিবেচনায় ৮দিন বাড়িয়ে এপ্রিলের ৮ তারিখ পর্যন্ত মৌসুমের সীমা বাড়িয়েছে বনবিভাগ। দুবলার আলোরকোল, মাঝেরকেল্লা, শেলারচর ও নারিকেলবাড়ীয়া এ চারটি চরে অবস্থান নিয়ে জেলেরা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরে শুঁটকি করে থাকেন।্এ বছর দুবলারচরে ১০ হাজার জেলে ও মৎস্যজীবি জড়ো হয়েছিলেন। আলোরকোলের রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিম ফরাজী, মাঝেরকেল্লার জেলে পিরোজপুরের ফরিদ মিয়া, আলোরকোলের জেলে রামপালের তাহের আলী, নারিকেলবাড়ীয়ার জেলে আঃ খালেক. শেলারচরের জেলে তুষখালীর আঃ রহিম বলেন, এবছর হাতে গোনা কয়েকজন জেলের ব্যবসা মোটামুটি ভালো হলেও বেশির ভাগ জেলে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ী ফিরেছেন।
দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বছর দুবলার ৯৯ ভাগ জেলে মহাজন দেনার দায় মাথায় নিয়ে বাড়ী ফিরেছেন কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মৌসুমের ৫ মাসে জেলেরা সাগরে ১০টি গোন মাছ ধরে। প্রথম দিকে সাতটি গোনের সময় ছিলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং জেলেরা সাগরে তেমন মাছ পায়নি। মৌসুম শেষের তিন গোনে সাগরে প্রবল পশ্চিমা বায়ু ও ডাকাতের ভয়ে জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে পারেনি। জেলেরা মাছ না পেলেও বনবিভাগকে দ্বিগুন হারে রাজস্ব দিতে হয়েছে। এ সকল কারণে জেলে ও মহাজনরা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে মলিন মুখে বাড়ী ফিরে যাচ্ছেন বলে ফিসারমেন গ্রুপ সভাপতি জানান।
জেলেপল্লী শেলারচর ফরেষ্ট টহল ফাড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার দিলীপ মজুমদার বলেন, পাঁচ মাসের দুবলারচরের শুঁটকি মৌশুম শেষ হয়েছে। অধিকাংশ জেলে ইতোমধ্যে বাড়ীর পথে রওয়ানা হয়েছেন এবং অনেকে তাদের অস্থায়ী বাসা ভেঙ্গে মালামাল নৌকা ট্রলারে বোঝাই করছেন। সব জেলেকে ৮ এপ্রিলের মধ্যে দুবলারচর ছেড়ে চলে যেতে হবে।
জেলেপল্লী দুবলা ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্ট রেঞ্জার মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, দুবলার শুটকি আহরণ মৌসুম ৩১ মার্চ শেষ হলেও বিশেষ বিবেচনায় জেলেদের ৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। অনেক জেলে ইতিমধ্যে দুবলারচর ছেড়ে বাড়ী ফিরে গেছেন। এ বছর বনবিভাগের রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবেনা। এ বছর গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজস্ব আয় হয়েছে ৬ কোটি ২০ লাখ ৯৫২ টাকা মাত্র। গত বছর একই সময়ে রাজস্ব আয় হয়েছিলো ৭ কোটি ২৩ লাখ ৭৯ হাজার ৯৯০ টাকা মাত্র। এবার সাগরে কম মাছ পাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলদস্যুদের ভয়ে জেলেরা সাগরে না যাওয়ায় রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম কারণ বলে দুবলা ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।