
জন্মভূমি ডেস্ক : এই আগস্টেই ক্ষমতালোভী নরপিশাচরা সপরিবারে হত্যা করে জাতির পিতাকে। বাঙালির হৃদয় থেকে চিরতরে মুছে দিতে শেষবারের জন্যও দেখতে দেয়নি মুখগুলো। দাফন করা হয়েছে কড়া প্রহরায়, অবহেলায়, অশ্রদ্ধায়। তারপর চলেছে কত ষড়যন্ত্র, ঘৃণ্য রাজনীতি। বিকৃত করা হয়েছে স্বাধীনতার ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম অবদান। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। কৃতজ্ঞ বাঙালি ভোলেনি সে মুখ, কণ্ঠ, আদল। সংকটে ও বিপন্নতায়, বিশৃঙ্খলা ও অনাহারে, রাজনীতি ও সমাজের ভাঙনে- এখনো তাই বাঙালি ফিরে যায় তারই কাছে। হাঁটে বঙ্গবন্ধুরই দেখানো পথে।
আর এ কারণেই তো স্বাধীনতার চার যুগ পরেও দেশের নানা স্থানেই যখন বেজে ওঠে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা সংবলিত সেই বজ্রনির্ঘোষ সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, তখনই নতুন করে শিহরিত হয়ে ওঠে বাঙালি। রক্তে জ্বলে ওঠে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতা রক্ষায় যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের মন্ত্র। স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার প্রেরণা জোগায়।
ইতিহাসে হয়তো এ মাসে অনেক বিজয়ের কাহিনী লেখা আছে। কিন্তু বিজয়ের সেসব কাহিনী রক্তের স্রোতধারায় মিশেছে আগস্টে এসে। এ মাস নতুন করে ভাবতে শেখায়। এ মাস প্রতিশোধের চেতনায় শাণিত করে সবাইকে। কেননা এ মাসেই আমরা হারিয়েছি ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ বাঙালি কালজয়ী মহাপুরুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বস্তুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ইতিহাসের বাঁকঘোরানো এক সিংহ পুরুষ। বাঙালি জাতির চরিত্র সম্পর্কে তার চেয়ে বোধকরি আর কেউ জানতেন না। তবুও তিনি জীবনের বিনিময়ে সেই জাতির জন্যই রচনা করেন ইতিহাসের এক অমোঘ অধ্যায়। পৃথিবীতে কোনো জাতিই মাত্র ৯ মাসে স্বাধীনতা লাভ করতে পারেনি। আর স্বাধীনতার জন্য এই স্বল্পতম সময়ে প্রায় ত্রিশ লাখ বাঙালির আত্মদানের ঘটনাও ইতিহাসে বিরল।
বঙ্গবন্ধুর এক তেজোদীপ্ত ভাষণেই উদ্বুদ্ধ গোটা জাতি সেই বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বভাব নেতা। কী বাল্য, কী কৈশোরে বা কী মত্ত যৌবনে সবখানেই ছিলেন তিনি এক কালজয়ী মহাপুরুষ। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক অবিভাজ্য সত্তা। আর সে জন্যই আগস্টের পুরো মাসজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হচ্ছে জাতির পিতার প্রতি।