
জন্মভূমি ডেস্ক : এ মাসে জাতি হারিয়েছে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, বাঙালিকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন।
তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলছিলেন, ঠিক সেই সময় স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরের মাথায় ঘাতকের বুলেটের নির্মম আঘাতে প্রাণ হারান তিনি।
স্বাধীনতার পর দেশে সমস্যার কোনো অন্ত ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশে ছিল না অবকাঠামো ব্যবস্থা। অর্থনীতির অবস্থাও ছিল করুণ। এ অবস্থা থেকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও দৃঢ় পরিচালনায় দেশ একটি সুন্দর গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিল। জাতির জনকের দূরদর্শিতায় ১৯৭৪-এর প্রায় দুর্ভিক্ষ অবস্থা মোকাবেলাও আমরা করেছি, কিন্তু মানুষের ভেতর উদ্দীপনা ছিল, সহনশীলতা ছিল, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ ছিল এবং অসাম্প্রদায়িক একটা চেতনাও ছিল।
কিন্তু তার হত্যা সেখান থেকে একটা বড় বিচ্যুতি ঘটিয়েছিল। দেশে চেপে বসেছিল স্বৈরশাসন। জাতির টুঁটি চেপে ধরেছিল সাম্প্রদায়িকতা। স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতা দখল করে পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশকে ফিরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর দেশে জেঁকে বসে পুঁজিবাদের শাসন, বাড়তে থাকে মানুষে মানুষে বিচ্ছিন্নতা এবং সমাজে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করে। এরপর দশটি বছরও পার হয়নি, আমরা গণতন্ত্র হারিয়েছি।
সমাজতন্ত্রের আদর্শ হয় ভূলুণ্ঠিত। সমাজে বিত্তশালী ও ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে আর প্রভাব-প্রতিপত্তি হয় দীর্ঘস্থায়ী। বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্বপ্ন ছিল। তার কিছু কিছু বাস্তবায়ন স্বাধীনতার পর থেকেই শুরু হয়েছে। কিন্তু সেগুলো অধরাই রয়ে গেছে। দেশের ভেতরে নানা অপশক্তির তৎপরতা, নৈতিকতা-মূল্যবোধ-সততা ও আদর্শহীন কিছু মানুষের ক্ষমতা এবং বিত্তের প্রতি লোভ থমকে দেয় বাঙালির মর্যাদাশীল জাতি হওয়ার স্বপ্ন।