শ্যামনগর প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেঁকী বাজারে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে এক ডজনেরও বেশি করাতকল। অভিযোগ রয়েছে, সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ চোরাইপথে এনে এসব করাতকলে কাটা হয়। তবে অনুমতি ছাড়া করাতকল চললেও ভ্রুক্ষেপ নেই বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, অবৈধ এসব করাতকলের কারণে নওয়াবেঁকীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বৃক্ষ নিধনের হার বাড়ছে। করাতকলের অবস্থান সুন্দরবন-সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর তীরে হওয়ায় রাতে নিষিদ্ধ কাঠ কাটা হয়। তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশে করাতকল পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। করাতকলের কারণে প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনষ্টের পাশাপাশি চোরাকারবারিদের তৎপরতায় সুন্দরবনে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্দরবনের মধ্য ভাগ দিয়ে লোকালয়ের দিকে চলে আসা খোলপেটুয়া নদীর পূর্ব প্রান্তে নওয়াবেঁকী বাজার। এ বাজার-সংলগ্ন এলাকায় সারিবদ্ধভাবে ১৪টি করাতকল গড়ে উঠেছে। ছোট-বড় নানা আকৃতির হাজারো কাঠের গুঁড়ি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে করাতকলের চারপাশে। পাঁচ-ছয়জন শ্রমিক প্রতিটি করাতকলে কাজ করছেন।
নওয়াবেঁকী বাজারের মো. শাহ আলম বলেন, অবৈধ করাতকলের কারণে এলাকার গাছ-গাছালি আশঙ্কাজনকহারে কমতে শুরু করেছে। আশপাশের এলাকা থেকে গাছ এনে করাতকলে কেটে তা ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
আজিজুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, সুন্দরবন কাছে হওয়ার সুযোগে কাঠ পাচারকারীদের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে এসব করাতকল। দিনের বেলায় সুন্দরবনের মধ্যে কেটে রাখা হয় গাছ। রাতে খোলপেটুয়া নদী-তীরবর্তী এসব করাতকলে নিয়ে চেরাই করা হয়। পরে শ্যামনগর, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর কিংবা সামাজিক বন বিভাগ বা প্রশাসনের খবরদারি না থাকায় অবৈধ করাতকলগুলো ক্ষতির কারণে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় আজমল হোসেন জানান, নওয়াবেঁকীর করাতকলগুলোর সবই অনুমোদনহীন। দিনের তুলনায় রাতে সেখানে বেশি কাঠ কাটা হয়।
স্থানীয় জয়নাল গাজীর দাবি, অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে এসব করাতকলে কাজ চলে। প্রশাসন, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে মাসোহারা দিয়ে মালিকরা করাতকলগুলো চালু রাখছেন। স্থানীয়ভাবে কেউ বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করলে তাকেও করাতকল মালিকরা ‘খুশি’ করেন।
মিলের এক শ্রমিক জানান, প্রতিদিন করাতকলপিছু তারা ২০০ থেকে ২৫০ ঘনফুট পর্যন্ত কাঠ চেরাই করে থাকে। নদীর অপর পাশের পদ্মপুকুর, কয়রাসহ নওয়াবেঁকী, গাবুরা, আটুলিয়া, বুড়িগোয়ালিনী ও কাশিমাড়ী এলাকা থেকে আসা কাঠ তাঁরা চেরাই করেন।
করাতকল মালিক সমিতির সভাপতি মো. নুর আহম্মদ আলীর দাবি, নতুন কয়েকটি করাতকলের অনুমতি নেই। ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চের মতো দিবসে প্রশাসনকে কিছু ‘খরচাপাতি’ দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। সুন্দরবনের কাঠ সেখানে চেরাইয়ের জন্য আসে না।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, বন বিভাগ এসব করাতকলের অনুমোদন দিয়ে থাকে। সুন্দরবনের সন্নিকটস্থ হলেও কড়া তদারকির কারণে সেখানে সুন্দরবনের কাঠ যাওয়ার সুযোগ কেউ পায় না।
সামাজিক বন বিভাগের শ্যামনগর অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মশহিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি একটি অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ‘নওয়াবেঁকীতে সম্প্রতি গড়ে ওঠা কয়েকটি করাতকলের অনুমতি নেই’ নিশ্চিত করে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসব করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর ক্ষমতা রাখেন, যা তাঁর নেই।