সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : শ্যামনগরে অবৈধভাবে দখলকৃত পূর্বধানখালি খালটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে এক ঘণ্টার মধ্যে আবার খালটি দখল করে নেয়। ২৯ এপ্রিল সকাল ১১টায় খালের পারে দু-পাশের এলাকাবাসীর উদ্যোগে আবার তা দখলমুক্ত করা হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল রিফাত শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে গ্রামবাসী ও কৃষকদের সহযোগিতায় দেড় কিলোমিটার খালটি দখলমুক্ত করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের প্রতি বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে আইটপাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে পুনরায় খালটি আবার দখল করে।
পূর্ব ধানখালী খালের পাড়ের কৃষকগণ একত্রিত হয়ে আবার দখলমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করলে স্থানীয় সুধীমহলসহ উপজেলা প্রশাসন সাধুবাদ জানান। ২০২৪ সালে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন সিএনআরএস-এর উদ্যোগে এলাকার কৃষকদের কৃষি ফসল রক্ষায় ২৫০০ বিঘা কৃষি জমির পানি নিষ্কাশনের পথ ও কৃষি কাজের লক্ষ্যে খালটি খনন করে দেওয়া হয়। বর্তমানে এ বছরে শতাধিক পরিবার খালের পাড়সহ কৃষিতে ধান ও সবজি চাষ করেছে। বিশ্বব্যাপী জলেবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষিতে ব্যাপক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
ঠিক সে সময় খালটি খনন করার পরে পূর্ব ধানখালী গ্রামবাসী ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বোরো মৌসুমী খালের পানি দিয়ে দু-পাড়ের ধানসহ সরিষা, গম, ভুট্টা, পুঁইশাক, তিল, কুমড়াসহ কৃষি অফিসারের পরামর্শ অনুযায়ী অভিযোজিত ফসল উৎপাদন করেছে। উপকূলে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে সুপেয় খাবার পানি সংকটসহ চাষযোগ্য পানির সংকটের কারণে এলাকার কৃষকরা কাজের সন্ধানে বাইরে যেতে হতো।
খালটি খনন করার পরে পূর্বধানখালী গ্রামের শতাধিক পরিবারের কৃষিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান এলাকার কৃষক পরিবার।
স্থানীয় কৃষক সুভাষ মন্ডল জানান, খালটি স্থানীয় দখলবাজরা ডিসিআর/একশনা লিজ নিয়েছে। বিষয়টি ওই দিনেই উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা এবং এসিল্যান্ড মহোদয়কে অবহিত করা হয়। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আব্দুল্লাহ আল রিফাত বলেন, কৃষি নির্ভর জলাভূমিতে কোন কারণেই ইজরা দেওয়া হয়নি এবং হবেও না।ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ডিসিআর গ্রহণ করার জন্য একটি প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হয়েছে কিন্তু উপজেলা প্রশাসন ডিসিআর দেওয়ার মালিক, তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
এলাকাবাসী কৃষকদের তথ্যে জানা যায়, পূর্বধানখালী দেড় কিলোমিটার খালটি ডিসিআর নেয়ার জন্য একটি চক্রান্তকারী মহল উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু ২৩এপ্রিল বিকালে খালের বাকি অংশ দখল করে। গত ২৪ এপ্রিল ধানখালী খাল ডিসিআর/একশনা লিজ না দেওয়ার জন্য এবং খালটি দখলমুক্ত করার জন্য স্থানীয় জনগণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দরখাস্ত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাথে সাথে এসিল্যান্ডকে খালটি উন্মক্ত করার নির্দেশ দেন।
২৩ এপ্রিল সকাল ১১:৩০ থেতে ১২:৩০ পর্যন্ত এসিল্যান্ডের উপস্থিতিতে ধানখালী খাল উন্মুক্ত করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এসিল্যান্ড চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আর দখলদার বাহিনী খালটি দখল করে। এ সময় তাদের হাতে লাঠি, দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন এবং উচ্চস্বরে গালিগালাজ করতে থাকে। কেউ বাধা দিতে আসলে দেখে নিবে হুমকি দেয়। স্থানীয় কৃষকরা একত্রিত হয়ে পুনরায় খালটি দখলমুক্ত করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় কৃষি কাজের পানির ব্যাপক বিপর্যয় সময়ে খাল খনন করার ফলে অনেক মানুষ বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ধানখালী দখলমুক্ত এই খালটি দুই পাশে পাড়ে শতাধিক কৃষি পরিবার এক ফসলী জমিতে তিনটি ফসল উৎপাদন করছে। এলাকার কৃষকদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং কৃষি কাজে সুযোগ সৃষ্টি করতে কৃষি কাজের বিকল্প নেই।
এসময় সুবোল ম-ল বলেন, আমাদের এই পূর্বধানখালী গ্রাম থেকে প্রায় শতাধিক পরিবারের পুরুষ মানুষ বাইরে কাজের সন্ধানে যেতে হতো, এখন তাদের আর বাইরে যেতে হয় না, কৃষকদের এই জমিতে ফসল ফলিয়ে এই খালের পানি ব্যবহার করে একাধিক ফসল উৎপাদন করছে। কিন্তু খালটি দখল হয়ে গেলে আর এক ফোঁটা পানি ব্যবহার করার কৃষকদের সুযোগ থাকবে না।
এমনকি পানি নিষ্কাশনের খালটি ঠিকমতো পানি সরাতে না পারলে আড়াইহাজার বিঘা জমির ফসল নষ্ট হবে পূর্বের মতো। পরিবেশ কর্মী বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক গাজী আল ইমরান বলেন, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে খাপখাইয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করে আসছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কখনো নদী ভাঙন, কখনো জলোচ্ছ্বাস এমনকি আইলা থেকে শুরু করে গত ১০ বছরে ১৩টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলে আঘাত হেনেছে।
যার কারণে কৃষিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, সে কারণেই এই অঞ্চল থেকে প্রচুর মানুষ কাজের জন্য বাইরে চলে যেতে হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, শ্যামনগর উপকূল জনপদে কৃষি নির্ভর জলাভূমিগুলো মিষ্টি পানির সংরক্ষণ করতে পারলে দেশি প্রজাতির মাছসহ জীববৈচিত্র্য, প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা হবে। এছাড়া একাধিক কৃষক বিকল্প কর্মসংস্থানসহ একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করে কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবেন।