
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : “একদিন তুমি পৃথিবী গড়েছো, আজ আমি স্বপ্ন গড়ব, সযতেœ তোমায় রাখব আগলে” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক প্রবীন দিবস উপলক্ষে শ্যামনগরে ব্যতিক্রমী নবীন-প্রবীন গল্পের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গোপালপুর পল্লী সমাজ যুব নারী সংগঠন, সবুজ সংহতি, সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিমের উদ্যোগে ও বারসিক এর সহযোগীতায় গোপালপুর গ্রামে বুধবার (১লা অক্টোবর) সকাল ১০টায় ব্যতিক্রমী নবীন-প্রবীন গল্পের আসর অনুষ্ঠিত হয়।
গোপালপুর গ্রামের প্রবীন ব্যাক্তি প্রভাষ চন্দ্র মন্ডল (৮৫) সভাপতিত্বে এবং বারসিক এর কর্মসূচী কর্মকর্তা মারুফ হোসেন (মিলন) এর সঞ্চালনায় গল্পের আসরে ১২ জন প্রবীন, ১৫ জন যুবক, ১০ জন নবীন গৃহবধুসহ গোপালপুর পল্লী সমাজ যুব নারী সংগঠনের সভাপতি ও সবুজ সংহতির সদস্য দেলোয়ারা বেগম, বারসিক এর সহযোগী কর্মসূচি কর্মকর্তা প্রতিমা চ্যাটার্জী উপস্থিত ছিলেন।
গল্পের আসরে প্রবীণ ব্যক্তিরা তদের আগেকার দিনের পরিবেশ কেমন ছিল, তাদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল, এলাকাতে কি কি প্রাণবৈচিত্র ছিল, রাস্তাঘাটের অবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের অবস্থা, খাদ্যের মান, চিকিৎসা পদ্ধতি, বিবাহ, পারিবারিক প্রথা, রীতিনীতি, রাজনীতি, সহ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান কেমন ছিলো তা গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেন। এছড়াও যুব, কিশোর, গৃহবধূরা প্রবীনদের কিভাবে শ্রদ্ধা করত, সেসময় নবীন-প্রবীনের সম্পর্ক কেমন ছিল ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেন।
ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবীনরা নবীনদের সাথে গল্পের মাধ্যমে বর্তমানে নিত্যদিনের জীবনযাত্রা কেমন কাটছে সেটিও তুলে ধরেন। নবীনরা প্রবীনদের গল্পগুলো মনোযোগ সহকারে শুনে যেমন আনন্দও পেয়েছে আবার কষ্টের কথাগুলো শুনেও অনেকেই কেঁদেও ফেলেছেন। এসময় অনেক নবীনরা অভিজ্ঞতা সঞ্চারও করেছে।
প্রবীন ব্যক্তি অরবিন্দ মন্ডল বলেন, “এখন আর আগের মতো পরিবেশ নেই, এখন আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি কিন্তু সে খাবার শুধু বেঁচে থাকার জন্য খাই। খাওয়ারে নেই কোন স্বাদ। আগে একবেলা খেয়ে তা হজম করার জন্য খেলাধুলা ও কাজ করতে হতো তা না হলে ক্ষুধা লাগতো না। আমাদের এখানে অনেকেই ছিল খাবার খাওয়ার প্রতিযোগিতা হতো আর এখন যেসব খাবার তা একবার মুখে দিলে আর খেতে মন চায় না। এখন মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত এমন কোন পরিবারে নেই যে পরিবারে অসুস্থ্য ব্যক্তি নেই।
আলোচনায় অপর এক প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল খালেক বলেন, ‘এখন যুব সমাজে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে। আগে যেমন বিভিন্ন ধরনের গান বাজনাসহ, লাঠিখেলা, জারি গান, গজল, কবিগান ফুটবল, হাডুডু, গাদনসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদন ছিল। এখন যুবরা মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তাদের পারিপার্শিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা কমে যাচ্ছে। আর আমরা যারা প্রবীণ তারা তো বাদ পড়ার খাতে পড়েছি। ছেলে মেয়ে ও পরিবারের সাথে একসাথে তাল মিলিয়ে টিভি দেখতে, তাদের কোন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারি না।
আমরা যে আমাদের সন্তানদের মানুষ করেছি কত কষ্ট করে এখনকার ছেলে ও ছেলের বৌরা তা মানতে চায় না। তাই তো এখন রাস্তায় বের হলে অনেক বৃদ্ধ ভিক্ষুক দেখা যায়। টিভি ও খবরের পাতা খুললে শুনতে পাই পিতা মাতার নির্যাতনের খবর। আর এ নির্যাতন শুধু অশিক্ষিত মানুষ নয় আমাদের শিক্ষিত ব্যক্তিরা এসব কাজ করেন। আমরা সন্তানদের যেমন শিক্ষা দেবো আমাদের সন্তারাও কিন্তু তেমন শিখবে তারা চোখে যা দেখবে তাই করবে। এটা আমাদের মনে রাখা উচিৎ।’
এসময় অংশগ্রহণকারী নবীন শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের প্রবীণদেরকে শ্রদ্ধা করতে হবে। তাঁরা তো আমাদের পথ দেখাচ্ছেন। আজকে আমরা তো আমাদের না জানা অনেক কিছু তাঁদের মুখ দিয়ে শুনতে পেলাম। তাঁরা যে গল্পগুলো বললেন তা যেন রূপকথার মতো মনে হয়েছে আমাদের কাছে। আমাদের চারপাশ সম্পর্কে আরো ভালো করে জানতে হলে তাঁদের খুবই দরকার। প্রবীণরা সত্যিকার অর্থেই আমাদের বন্ধু।’ আজ থেকে আমরা আমাদের মা, বাবা, দাদা,দাদীদের ভালো রাখার জন্য যেটুকু দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য আছে সেগুলো অবশ্যই পালন করার চেষ্টা করব।’
গৃহবধুরা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমারা এই অনুষ্ঠান থেকে অনেক শিক্ষা অর্জন করেছি। আজ থেকে আমরা আমাদের সন্তানদের যেভাবে ভালো রাখার চেষ্টা করি ঠিক তেমনি ভাবে বয়ষ্ক শশুর, শাশুড়ি, প্রবীনের সার্বক্ষনিক ভালো রাখার চেষ্টা করব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রবীন-নবীরা মাঝেমধ্যে এমন আয়োজন করার জন্য আবেদন জানান।