সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর: শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট এলাকার জিয়াউর রহমান নামের এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে অতি ভাঙা একটি বাশের সাঁকোর ছবি পোষ্ট করেছিলেন। প্রায় একশ সাত ফুট দীর্ঘ ঐ সাঁকো পার হয়ে শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে বলেও ছবির ক্যাপশনে লেখেন তিনি। সে লেখায় তিনি আরও উল্লেখ করেন ঐ সাঁকো ব্যবহারে প্রাপ্ত বয়স্করা রীতিমত ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে। অথচ প্রয়োজনের তাগিদে নানা বয়সী মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা সত্ত্বেও একই সাঁকো ব্যবহার করে পারাপার হচ্ছে।
বিষয়টি চোখে পড়তেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন। সরেজমিন পরিদর্শনকালে পিআইও মিয়ারাজ হোসেন খান স্থানীয় ভুক্তোভোগীদের দুর্দশার কথা জানতে পারেন। তিনি আরও অবগত হন যে বাঁশের ঐ সাঁকো উপজেলার ঈশ^রীপুর ও মুন্সিগঞ্জের যথাক্রমে হরিনগর আর ধুমঘাট গ্রাম দু’টিকে সংযুক্ত করেছে।
জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়া সাঁকোটির কারনে বিপরীত পারে বসবাসরত দুই গ্রামের হাজারো পরিবারকে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় অন্তত ১১ কি:মি: কম ঘুরতে হয়। প্রতিদিন শত শত মানুষের চলাচলের উক্ত সাঁকো বছরের পর ধরে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকলেও জনপ্রতিনিধিরা কখনো তা মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি।
জানা গেছে পরিদর্শনকারী সহকর্মীর মাধ্যমে সোমবার (৭ জুলাই) সকালে সমগ্র বিষয়ে অবহিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এছাড়া দুই ইউনিয়নের প্রায় ৫৫ হাজার জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাঁকোস্থল দিয়ে উন্নত যোগযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাকা একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠাতে নির্দেশ।
খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই রীতিমত উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে সাঁকো সংলগ্ন দুই গ্রামের হাজারো পরিবার। সামান্য একটা পোষ্ট এর সুত্র ধরে এতদাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা দুরীকরণের উদ্যোগে ইউএনও’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
পোষ্টাদাতা জিয়াউর রহমান জানান তিনি নিজে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দু’দিন আগে ফেসবুকে ক্ষোভ থেকে কিচু কথা লিখেছিল। এসময় ভাঙাচোরা ঐ সাঁকোর ছবিও তিনি পোষ্ট করেন। কিন্তু তারপর এতকিছু ঘটবে সেটা তার চিন্তায় আসেনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম জানান তাদের কল্পনায় ছিল না সেখানে কোনদিন পাকা বিজ্র হবে। সামান্য একজনের ফেসবুক পোষ্টকে এভাবে আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বাঁশের সাঁকো সরিয়ে কাঠের ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগে তারা উৎফুল্ল।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিয়ারাজ হোসেন খান জানান, ইউএনও স্যার হঠাৎ একদিন আগে তাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঐ সাঁকোর এলাকা পরিদর্শনে যেতে বলেন। সেখানে পৌছে স্থানীয়দের সমস্যার কথা জানতে পেরে তিনি তা ইউএনওকে শেয়ার করেন। পরমুহুর্তে আপাতত কাঠের ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে মন্ত্রণালয়ে একটি ব্রিজের প্রস্তাবনা পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন জানান এলাকার উন্নয়নের জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়ে থাকে। ভুলবশতঃ হয়ত জনপ্রতিনিধিরা অতি গুরুত্বপুর্ণ একটি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু একজন সচেতন ব্যক্তির পোষ্ট দেখার পর সত্যতা নিশ্চিত হয়ে সেখানে কাঠের ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন যেসব শিশুরা ঐ ঝুঁকিপুর্ণ সাঁকো ব্যবহার করে স্কুলে যাতায়াত করে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত