সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ১০০শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন উন্নত মানের বরই চাষ হয়েছে। যা থেকে চাষিরা আয় করবেন ২ কোটি টাকা। এর আগে অন্য বার শ্যামনগর উপজেলায় বরই উৎপাদন হতো মাএ ২৫ হেক্টর জমিতে। শ্যামনগরে লবন পানির চিংড়ি চাষ থেকে ফিরে এসে কৃষকরা বিভিন্ন পেশায় ফিরে যাচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নে ২৮ হেক্টর কাশিমাড়ি ইউনিয়নে ২০ হেক্টর শ্যামনগর সদর ইউনিয়নে ২১ হেক্টর নূরনগর ইউনিয়নে ১০ হেক্টর ইশ্বরীপুর ইউনিয়নে ৫ হেক্টর মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নে ৩ হেক্টর কৈ খালি ইউনিয়নে ৩ হেক্টর রমজান ইউনিয়নে ৩ হেক্টর আটুলিয়া ইউনিয়নে ৩ হেক্টর বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে ২ হেক্টর পদ্মপুকুর ইউনিয়নে ১ হেক্টর ও গাবুরা ইউনিয়নে ১ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন উন্নত মানের বরই চাষ হয়েছে।এছাড়া সাতক্ষীরা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে বরই বা কুল চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে কুল চাষিদের। স্বল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে কুল চাষের পরিমাণ। জানা গেছে, গত বছর প্রায় ৭ কোটি টাকার কুল বিক্রি করেছেন কুল চাষিরা। যেটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় একটি হাতিয়ার হিসাবে কাজ করছে।জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে দিন দিন এই অঞ্চলে কুলের চাষ বেড়েই চলেছে। এখানকার অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে কুল বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করছে। মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় জেলায় কুলের চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সাতক্ষীরা জেলার কুল দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে, বাউকুল, আপেলকুল, নারকেলকুল, বিলাতিকুল, নাইনটি ও মিষ্টিকুল অন্যতম। দেশব্যাপী সাতক্ষীরার উৎপাদিত এসব কুল ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
জেলার তালা উপজেলার জাতপুর গ্রামের কুলচাষি মো. পান্জাব আলী জানান, গত ১০ বছর যাবত তিনি বিভিন্ন প্রকার কুল চাষ করেন। চলতি মৌসুমেও ৩ বিঘা পরিমাণ জমিতে নারকেল ও আপেল কুল চাষ করেছেন। জমি নিজের হওয়াতে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কম। কুল গাছে ভিটামিন স্প্রে, সার ও পোকা দমন ঔষধ ব্যবহারে তিন বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে কুল বিক্রি শুরু করেছেন। তিনি আশা করছেন তিন বিঘা জমির কুল এবার কমপক্ষে ৪ লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি হবে।
তিনি আরও জানান, গত বছর একই পরিমাণ জমিতে কুল উৎপাদন করে সব খরচ তুলেও ৩ লাখ টাকা লাভ হয়েছে তার।
পার্শ্ববর্তী কলারোয়া উপজেলার কুল চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কুলের ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে, তাছাড়া দামও বেশি। এ বছর পাইকারি হারে ৭০-৮০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি করে থাকে, এভাবে যদি বাজার থাকে তাহলে অনেক লাভবান হবেন।
এদিকে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে ৬৯৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার কুলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৩০ হেক্টর, কলারোয়ায় ২১০ হেক্টর, তালায় ২০৫ হেক্টর, দেবহাটায় ১৫ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২০ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৫ হেক্টর ও শ্যামনগরে ১০০ হেক্টর। প্রতি বিঘায় ৭০ থেকে ৮০ মণ উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ।
তবে গত বছরের তুলনায় এবার কুলের আবাদ কিছুটা বেড়েছে বলে জানান সূত্রটি। গেল মৌসুমে জেলায় কুল চাষ হয়েছিলো ৬২০ হেক্টর জমিতে। সেখানে এবছর ৭৫ হেক্টর পরিমাণ বেড়েছে।
কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কুল চাষ। এ জেলার উৎপাদিত কুল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে খুলনা, গোপালগঞ্জ, ঢাকা ও চট্রোগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়ে থাকে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর সাতক্ষীরায় কুলের ভালো ফলন হয়েছে। কৃষকরা দামও পাবে ভালো। ফলে এবার কুল চাষিরা বেশ লাভবান হবে। সরকার কুল চাষিদের সব ধরণের সহযোগিতা করেছে । তিনি আরো বলেন, প্রায় গত দুই দশক থেকে সাতক্ষীরা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু হয়। ফসলটি লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই এর আবাদ বাড়ছে।