
জন্মভূমি ডেস্ক : আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের সংঘাত চান না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবাইকে সকাল সকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেছেন, যাকে খুশি ভোট দিন, ভোটটা জরুরি।
বুধবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে দেশের ছয়টি এলাকার নির্বাচনী জনসভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে কোনো সংঘাত চাই না। যাকে খুশি ভোট দেবেন। ভোটটা অনেক জরুরি। ভোটে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
সবাইকে নিজেদের পছন্দমতো ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থী আছে। সে সাথে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমাদেরই স্লোগান-আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। কাজেই আপনাদের মত ভোট দেবেন, কিন্তু কোনো রকম অনিয়ম ও সংঘাত আমি চাই না।
নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো রকম কোনো দুর্ঘটনা যেন না হয়, সে সহনশীলতা আপনাদের দেখাতে হবে। নির্বাচনে যার যার ভোট শান্তি মত দেবে। সে পরিবেশটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটা বাংলাদেশের জন্য একান্তভাবে জরুরি। কারণ বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক রকম খেলা অনেকে খেলতে চায়। যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না, জয় বাংলা স্লোগান যারা নিষিদ্ধ করে দেয়। যারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা ধ্বংস করে তারা দেশটাকেই ধ্বংস করবে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে।
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার পতন ঘটে। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়। তারপর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু ওদের শিক্ষা হয়নি। তাই ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে আবারও ভোট কারচুপি, ভোট চুরি, জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলা শুরু করে। তাদের দুঃশাসনের কারণে দেশে ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা জারি) হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আমি যখন গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হইনি, তখন ষড়যন্ত্রের শিকার হই। ক্ষমতায় আসতে পারিনি। গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসেই তারা দুর্নীতি লুটপাত, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলা এবং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের অকাট্য নির্যাতন শুরু করে। তাদের দুর্নীতি এমন পর্যায়ে চলে যায়, একদিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আরেক দিকে তারেক, যে হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতির আখড়া গড়ে তোলে। ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে। যার ফলে দেশে চরম অরাজকতার সৃষ্টি হয়। তারা জানত জনগণ তাদের ভোট দেবে না, প্রত্যাখ্যান করবে। তখন তারা এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার লিস্ট তৈরি করে। সেভাবে নির্বাচন করার প্রচেষ্টা নেয়। সেখানে তারা ব্যর্থ হয়।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০টি সিট পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ ২৩৩ সিটে জয়ী হয়। আর অন্য সিটগুলো আমাদের জোটের শরিকরা পেয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৮ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকারে আসি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ধারাবাহিকভাবে গণতন্ত্র এবং দেশের উন্নয়নের কাজ করার সৌভাগ্য আমাদের হয়। যার ফলে আজকের বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, আমার যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম, আমরা বাংলাদেশকে উন্নত করব, বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেব, আমরা কিন্তু সেই বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছি। আজকে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে আমরা নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় আমরা বৃদ্ধি করেছি। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি। হতদরিদ্রের হার ২৫.১ ভাগ থেকে ৫.৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ বাংলাদেশের ব্যাপকভাবে উন্নয়ন করা হয়েছে। মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টির জন্য বেসরকারিখাতকে উন্মুক্ত করে দিয়ে কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৯৬ সাল থেকে যেটা শুরু করেছিলাম সেটা আরো প্রসারিত করেছে। প্রতিটি বড় বড় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। প্রতিটি উপজেলায় ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা সারাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করবো বলেছিলাম, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, এখন সবার হাতে মোবাইল ফোন আছে, ওয়াইফাই কানেকশন দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ আমরা আমরা উৎক্ষেপণ করেছি।
তিনি বলেন, দারিদ্র্যের হার কমানোর পাশাপাশি বেকারত্বের হারও কমিয়েছে। এখন বাংলাদেশে মাত্র ৩ শতাংশ বেকারত্ব হার। সবাই যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে যে কোনো কাজ করতে পারে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে একটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসতে পেরেছি। দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি-জামায়াতের চরিত্র হচ্ছে দুর্নীতি করা, মানুষ খুন করা। তারা অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষ খুন করে, এর চেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারে না। ২০১৩-১৪ সালের যেমন করেছে ঠিক এ নির্বাচনের আগে ভয়াল রূপ নিয়ে তারা মানুষের সামনে হাজির।
বিএনপির দুর্বৃত্তায়নের জবাব দিতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে মানুষকে বিএনপির দুর্বৃত্তায়নের জবাব দিতে হবে। আপনার নৌকা ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে এর জবাব দেবেন এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন। সেটাই আমরা চাই। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থী আছে। আমরা নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দেব, এটা আমাদের স্লোগান। আপনারা আপনাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবেন। তবে কোনোরকম গন্ডগোল আমি চাই না। আপনাদের সহনশীলতা দেখাতে হবে, কোনরকম দ্বিধাদ্বন্দ্ব যেন না থাকে। নির্বাচনে যার যার ভোট সে শান্তি মতো দেবে, সেই পরিবেশটা আমাদের রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে এই নির্বাচনটা বাংলাদেশের জন্য একান্তভাবে জরুরি। কারণ বাংলাদেশ নিয়ে অনেকে অনেক রকম খেলা খেলতে চায়। যারা স্বাধীনতার চেতনা বিশ্বাস করে না, জয় বাংলা স্লোগান যারা নিষিদ্ধ করে দেয়, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা ধ্বংস করে, তারা দেশটা কি ধ্বংস করবে। এ দেশে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। কাজে এদেশে মানুষ ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেটা আমাদের লক্ষ্য।
এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

