সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর: ‘এই ৩ বছর মাছ রাখা। আমার মেয়েটি সেয়ানা তাই মাছকটা রেখে দিছিলাম, মাছ বিক্রি করি মেয়ের বিয়ে দেব। কিন্তু, আমার ৫, ৬, ৭ মণ মাছ সবটাই ভেসে গেল।’ কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর ইউনিয়নের সুবিদখালী-রামনগর এলাকার বাসিন্দা বাসন্তী আরতি।গত বুধবার (২৮ মে) বিকালে জোয়ারের পানির প্রবল চাপে বন্ধ থাকা সুবিদখালী স্লুইজ গেটের পাশে কপোতাক্ষ নদীর প্রায় ২০ ফুট রিংবাঁধ ভেঙে যায়। এতে দরগাহপুর ও রামনগর গ্রামের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। ভেসে যায় ছোট-বড় শতাধিক মাছের ঘের।আর এই বিলে তিনবিঘা ঘেরে মাছ চাষ করে সংসার চালাতেন বাসন্তী আরতি। তিনবছর ধরে চাষে রাখা বড় বড় মাছ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে রেখে দিয়েছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া মেয়ের বিয়েকে ঘিরে। কথা ছিল এবারের এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর মেয়েকে বিয়ে দিবেন তিনি। তবে নদীর রিংবাঁধ ভেঙে বাসন্তী আরতির মৎস্য ঘেরের মতোই তলিয়ে যায় তার স্বপ্নগুলোও। বুধবার যখন প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা বেড় জাল নিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছিলেন সেসময়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও দরগাহপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মুকুলের ক্যামেরা বন্দী হন ওই নারী। আবেগাপ্লূত কণ্ঠে নিজের স্বপ্নভঙ্গের কথা জানান। ধারণকৃত ১৯ সেকেন্ডের ভিডিওটি মুহুর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।ভুক্তভোগী বাসন্তী আরতির উদ্ধৃতি দিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মুকুল জানান, বাসন্তী আরতির বাসা সুবেদখালী-রামনগর এলাকার পালপাড়া এলাকাতে। রামনগর চরের বিলে তিন বিঘার মৎস্য ঘের রয়েছে তার। সমাজে সনাতন ধর্মালম্বী মেয়েদের শিক্ষানিয়ে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এজন্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরপরই মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাসন্তী। সেই মোতাবেক পাত্রও দেখাদেখি চলছিল একই সাথে বিয়ের মুলধনের উৎস হিসেবে ঘের ছিল তাদের ভরসা।তিনি বলেন, রিংবাঁধ ভাঙার দু’দিন আগেও ওই ঘেরে দুই মণ মাছ ছেড়েছিল বাসন্তী আরতি। একদিকে সংসারের খরচ অপরদিকে মেয়ের বিয়ে এর সবটা জুড়ে একমাত্র ভরসা ছিল ওই ঘের। তবে ঘেরের মতো তার স্বপ্ন গুলোও তলিয়ে গেছে। এতে বাসন্তী আরতির ৪-৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।তিনি আরও বলেন, রিংবাঁধ ভেঙে যাওয়াতে তার ইউনিয়নের ৪০০ বিঘার অধিক জমির মৎস্য ঘের পানিতে ভেসে গেছে। এতে কমপক্ষে ৫০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে মৎস্য চাষিরা। আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি রেখেছি যাতে ক্ষতিগ্রস্থ এসমস্ত মানুষদের সহযোগিতা করা হয়।স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল হক জানান, রিংবাঁধ ভেঙে ২টি গ্রামের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে, মৎস্য খামার ভেসে গেছে। দ্রুততম সময়ে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হওয়াতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমেছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর ইউনিয়নের সুবিদখালী স্লুইস গেইট সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের পাড়ে ভেঙে যাওয়া রিংবাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করা হয়েছে। বুধবার এলাকার মানুষ দীর্ঘ পরিশ্রমে রাত দুইটার দিকে বাঁধটি মেরামত করা হয়। বেড়িবাঁধ ছিদ্র করে নাইনটি পাইপ বসিয়ে ওই এলাকার আব্দুস সবুরের ছেলে মফিজুল গাজী নদী ঘেরে পানি সরবরাহ করতেন। তিনি পাইপটি অপসারণ করলেও খুড়ে রাখা বাঁধ বেঁধে দেননি। যেকারণে বাঁধটি ভেঙে যায় এবং প্লাবিত হয় ৪০০ বিঘা মাছের ঘের।