জন্মভূমি ডেস্ক : এ বছরও জুলাই মাসে ৫ শতাংশ হারে সাধারণ ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি গত অর্থবছরের মতো মূল বেতনের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে (ন্যূনতম ১ হাজার টাকা) প্রণোদনা পাবেন সরকারি চাকরিজীবী, পেনশনভোগী ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা। গত অর্থবছরে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে চাকরিজীবীদের জন্য বার্ষিক বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা ঘোষণা করে সরকার।
রপ্তানি প্রণোদনাসহ বিভিন্ন খাতের প্রণোদনার হার প্রতি বছর বাজেটে নতুন করে নির্ধারণ করা হলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঘোষিত সরকারি চাকরিজীবীদের এই প্রণোদনা সরকার বাতিল না করা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গতবছর ঘোষিত প্রণোদনা সরকার যতদিন বাতিল না করবে, ততদিন পর্যন্ত তারা জেনারেল ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি প্রণোদনা সুবিধা ভোগ করবেন।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত নতুন পে-স্কেল ঘোষণার সময় এ ধরনের বিশেষ ভাতা বা প্রণোদনা বাতিল করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বেতন প্রায় দ্বিগুণ করে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন করেছে সরকার।
ওই পে-স্কেল অনুযায়ী, প্রতি বছর ১ জুলাই সরকারি চাকরিজীবীদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে জেনারেল ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতির হার ৫ শতাংশের বেশি হলে তার সঙ্গে সমন্বয় করে ইনক্রিমেন্টের হার নির্ধারণের সুপারিশ করেছিল পে-কমিশন।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আর কোনো পে-স্কেল না সমন্বয় না করতে সুপারিশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পে-কমিশন। তবে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে নতুন পে-কমিশন গঠনের দাবি ওঠে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ঘোষণা দেন। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দের পরিমাণ হঠাৎ করেই বেশ বেড়ে যায়।
আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ থাকছে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বেতন-ভাতায় বরাদ্দের তুলনায় প্রায় ৭.৭৬ শতাংশ বা ৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৭৭ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা।
বেতন-ভাতার পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনুতোষিক সুবিধা ও গ্রাচুইটিতে বরাদ্দের অর্থ যোগ করলে আগামী অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ৭৭ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় প্রকৃত ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬৩ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) এ খাতে প্রকৃত ব্যয় ছিল ৬২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় প্রকৃত ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা।
তৈরি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতের শ্রমিক-কর্মকর্তাদের মজুরি নির্ধারণ করে সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড। তাতে বছরান্তে শ্রমিকদের মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার বিধান রয়েছে। তবে বিশেষ প্রণোদনা চালুর পর চলতি অর্থবছর থেকে সরকারি খাতের চাকরিজীবীদের গ্রস বেতন বেসরকারি খাতের তুলনায় বেশি হারে বাড়ছে।