জন্মভূমি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাংবাদিক ও পুলিশকে মাটিতে ফেলে পিটিয়ে মারা অমানবিক। হামলাকারীদের শাস্তি পেতেই হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টসের (বিএফইউজে) প্রতিনিধি সম্মেলন যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণের এই সম্মেলনে যোগ দেন সরকার প্রধান।
এসময় প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবর বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সরকার প্রধান বলেন, কে গুণগান করল আর কে করল না তার পরোয়া করি না, দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কোন কোন পত্রিকা বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে অন্যভাবে দেখাতে চায়, এদের ধিক্কার জানাই।
অনুষ্ঠানে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে সেদিন যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়েছে তা দুঃখজনক।
‘২৮ অক্টোবর সমাবেশ করতে চেয়েছে বিএনপি। আরও কয়েকটি ছোট ছোট দল ছিল। আমরা বাধা দেইনি। তারা কথা দিয়েছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। কিন্তু দেখা গেল শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে তারা সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করল। তাদের লক্ষ্যবস্তু দেখা গেল সাংবাদিক ও পুলিশ। সাংবাদিকদের যেভাবে মাটিতে ফেলে পেটানো হলো, নির্যাতন চালানো হলো এটা অমানবিক। এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা আর দেখা যায়নি। এটা কেন করা হলো। সেই প্রশ্নের উত্তর বিএনপিকে দিতে হবে। যারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে তাদের শাস্তি পেতেই হবে।-বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে প্রতিটি ক্ষেত্রকে বেসরকারির জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর প্রতিটি ক্ষেত্রকে বেসরকারির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। ৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আমরা সরকারে ছিলাম। সরকারে আসার পর মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রকে বেসরকারির জন্য উন্মুক্ত করে দেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। করোনা শুরু হওয়ার পর বাইরে যাওয়া একবারে বন্ধ ছিল। সাক্ষাৎকার বন্ধ ছিল। মনে হতো একটা বড় জেলে বন্দি। আজ আপনাদের মাঝে আসতে পেরেছি, সেজন্য শুকরিয়া।
তিনি বলেন, বাঙালি জাতি যেন যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে যেন দাঁড়াতে পারে, এটাই ছিল তার (বঙ্গবন্ধু) লক্ষ্য। জাতির পিতার সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য নিয়ে আমি দেশে ফিরে আসি। তিন বছর সাত মাস তিনি সময় পেয়েছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে তিনি স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের সাংবাদিক এবং কলাকৌশলীসহ মানুষের কর্মসংস্থান যাতে ব্যাপকহারে হয় তার জন্য বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দিই। আমাদের একটি মাত্র টেলিভিশন ছিল। যারা সরকারের থাকত তাদেরই অধীন ছিল। কে আমার গুণগান গাইল, কে আমার গুণগান গাইল না, সেটা আমি দেখি না। আমি সব কিছু মুক্ত করে দিই। ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকারে আসি তখন তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করি। তথ্য কমিশন গঠন করি, অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়ন করি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে মানুষ যত বেশি, সংবাদপত্রও তত বেশি। অনেক উন্নত দেশ কিংবা ধনী দেশেও এত সংবাদপত্র নেই। বর্তমানে আমাদের পত্রিকার সংখ্যা ৩২৪১টি। অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল রয়েছে ৩৮৭টি। বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি ৩৩টি টেলিভিশন সম্প্রচারে রয়েছে।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক কল্যাণ ফান্ডে ১০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন সরকারপ্রধান।
বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে প্রতিনিধি সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বিকেল ৩টায় একই স্থানে দেশের সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হবে।