
একুশে পদক প্রাপ্ত প্রথিতযশা সাংবাদিক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এক সময়কার থিংক ট্যাংক হিসেবে পরিচিত দৈনিক জন্মভূমি ও দৈনিক রাজপথের দাবী পত্রিকার সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বালু হত্যাকাণ্ডের ১৯ তম বার্ষিকী আজ। ২০০৪ সালের এই দিনে নিজ অফিসের সামনে বোমা হামলায় তিনি নিহত হন।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সমর্থ না হওয়ায় সকল আসামি খালাশ পেলেও ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের মামলায় পাঁচ আসামিকে আদালত যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করেন। আর মামলার রায়ের পূর্বেই নিষিদ্ধ ঘোষিত জনযুদ্ধের প্রধান আব্দুর রশিদ মালিথা ওরফে তপন ক্রসফায়ারে নিহত হয়।
মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত উল্লেখ করেন, ‘এজাহারে বর্ণিত ঘটনার সময় অর্থাৎ ২০০৪ সালে নিহত হুমায়ূন কবীর বালু জনপ্রিয় দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় খুলনাসহ সমগ্র দক্ষিণ অঞ্চল সম্পূর্ণ সন্ত্রাস কবলিত জনপদ ছিল। তিনি জন্মভূমি ও সান্ধ্য দৈনিক রাজপথের দাবী পত্রিকাসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদী হিসেবে সোচ্চার ছিলেন। সে কারণে তিনি তখনকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী দল ও সংগঠনের টার্গেটে পরিণত হন। নির্ভিক সাংবাদিকতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার অবস্থানের কারণে নির্মমভাবে খুন হন। নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল জনযুদ্ধের সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় তিনি প্রাণ হারান। এজাহারকারী, তদন্ত কর্মকর্তাসহ কয়েকজন সাক্ষীর জবানবন্দিতে উঠে এসেছে-দণ্ডিতরা তখন ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিল। অকুতোভয় কলম সৈনিক বালু হত্যাকাণ্ড- তৎকালে ঘটে যাওয়া কয়েকজন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা খুনের ধারাবাহিকতা’।
মুলত খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মানিক চন্দ্র সাহা হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার চাওয়ায় তিনি খুন হন। এ হত্যাকান্ড অত্যন্ত পরিকল্পিত। হুমায়ূন কবীর বালু হত্যাকাণ্ডের পর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া মামলার পাঁচ আসামির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হলেও নেপথ্যের কুশীলবরা পর্দার অন্তরালেই থেকে গেছে। জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আরিফ মাহমুদ লিটন সেসময় বলেন, পুলিশের দুর্বল তদন্ত রিপোর্টের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে মন্তব্য করেছেন। দক্ষিণাঞ্চলের সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালু, মানিক চন্দ্র সাহা, যশোরের আর এম সাইফুল আলম মুকুল, শামছুর রহমান কেবল, রশিদ খোকন, শেখ বেলাল উদ্দিনসহ দেশের বেশিরভাগ সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার নানা কারণে বিলম্বিত হয়েছে। আমরা আশাকরি জাতির বিবেকখ্যাত সকল সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচারের রায় তরান্বিত হবে।
আজ ২৭ জুন হুমায়ুন কবির বালু’র শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে খুলনা প্রেস ক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, দৈনিক জন্মভুমি ও পরিবারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।