সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সাতক্ষীরায় অনলাইন ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া জুয়া খেলার অভিযোগ উঠেছে। জেলার শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। দেশীয় আইনে অবৈধ এসব জুয়ার আসর তৈরি করা হয় ওয়েবসাইট ও অ্যাপ ব্যবহার করে।
হাজার হাজার টাকার লেনদেন চলে প্রতিদিন। এই লেনদেনের একটি বড় অংশ পাচার হয়ে যায় দেশের বাইরে। অভিযোগ উঠেছে, জুয়ার মাধ্যমে অল্প সময়ে ধনী হওয়ার নেশায় সর্বশান্ত হচ্ছেন অনেকেই। একটি গোষ্ঠী হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। জানা গেছে, এই জুয়া খেলা জমে ওঠে সাধারণত কোন বিশেষ ইভেন্টকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে ফুটবল, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ইভেন্ট তৈরি করে জুয়ার বোর্ড সাজানো হয় ভার্চুয়ালের মাধ্যমে। এ জুয়ার বোর্ডে অংশ নেয় বিভিন্ন বয়সের ও পেশার নারী পুরুষ। অনুসন্ধানে জানা যায়, শহর থেকে গ্রাম অঞ্চলের অলিতে গলিতে ও চায়ের দোকানে হরহামেশাই চলছে জোয়ার রমরমা আসর। পাঁচশত টাকার বিনিময়ে খোলা হয় আইডি। এরপর বিভিন্ন প্লাটফর্মে খেলা ঘিরে বাড়তে থাকে জোয়ার বিটের পরিমাণ। সুপার এজেন্টরা প্রতিটি ভার্চুয়াল কারেন্সি ১০০টাকায় বিক্রি করে। আর দেশীয় মাস্টার এজেন্টরা লোকাল এজেন্টদের কাছের তা বিক্রি করে ১৫০টাকা থেকে ২০০টাকায়। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র বলছে, ১০লাখ থেকে ১২লাখ টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয় লোকাল এজেন্ট। তারা আবার লোকাল জুয়ারীদের কাছে পিবিইউ বিক্রি করে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশে বন্ধ করা হয় অনলাইনে জুয়া খেলার ১৭৬টি সাইট। এরপর থেকে নানা সময়ের জোয়ার সাইড বন্ধ করা হলেও থেমে থাকিনি জোয়ার এই রমরমা অনলাইন আয়োজন। ভিপিএন ব্যবহার করে অংশ নিচ্ছে জোয়ারীরা। সিআইডি সাইবার সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখানে বেশ কিছু আইনি জটিলতা রয়েছে। ১৮৬৭সালের আইনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে আমাদের। ১৫৮বছরের এই পুরনো আইনে সকলে আটক করলে বিকালে জামিন পেয়ে যায় আসামিরা। জুয়াতে যে শাস্তির বিধান রয়েছে তা খুবই সামান্য। চলমান আইনে জুয়া খেললে ২০০টাকা জরিমান আর দুই মাসের জেলের বিধান রয়েছে।
আমরা ৩০ধারায় বহির্ভূত ই-ট্রানজেকশনে মামলা দিতে পারতাম। বর্তমানে এই আইনে মামলা নেওয়া যাচ্ছে না। অনুসন্ধান নিয়ে যারা গেছে, শহর ও গ্রামঞ্চলের জুয়ারীদের মধ্যে উঠতি বয়সের তরুণরা বেশি। এছাড়াও মধ্যবয়স্ক, বৃদ্ধ, শিক্ষিত নিরক্ষর সভায় জড়িয়েছে অনলাইন জুয়া খেলার জালে। লাখ লাখ টাকা খুইয়ে নিঃস্ব হচ্ছে না অনেকেই। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, অনলাইন জুয়ার প্রকোপ বন্ধ করা না গেলে রসাতলে যাবে তরুণ প্রজন্ম।
সাতক্ষীরায় অনলাইন জুয়া জমজমাট

Leave a comment