সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : কৃষকরা এতদিন জানতো শীত মৌসুমেই শুধু টমেটো চাষ হয়। কিন্তু সেই ধারণা এখন পাল্টেছে। শুধু শীত মৌসুমে নয়, বছরের ১২ মাসই এখন টমেটো চাষ করা সম্ভব। সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও বিভিন্ন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টায় সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় সারা বছর ধরে চাষ হচ্ছে টমেটো। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই জেলায় গ্রীষ্মকালীন টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে।
চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১২৫ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করা হয়েছে। উন্নত বীজ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে টমেটো চাষিরা বেশ লাভবানও হচ্ছেন। অন্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন টমেটো চাষে বেশি ঝুঁকছেন।
টমেটো চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমন একজন কৃষক জেলার কলারোয়া উপজেলার কামারালী গ্রামের আব্দুস সালাম মোল্যা। তিনি জানান, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি দুই বিঘা জমিতে টমেটো চাষ শুরু করেন। প্রতি মৌসুমে তার খরচ হয় দুই লাখ টাকা। সেখানে তিনি টমেটো বিক্রি করেন প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। খরচ বাদে তার বিঘাপ্রতি প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা লাভ থাকে।
আব্দুস সালাম জানান, তার ক্ষেতে সারা বছর ধরে চলে আধুনিক প্রযুক্তিতে এই টমেটো চাষ। সারা বছরই সেখানে সাত জন নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন। তিনি টমেটো চাষ করে একদিকে যেমন নিজে স্বালম্বী হয়েছেন অন্যদিকে তারই ক্ষেতে কাজ করে আরো সাতটি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। স্থানীয় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন নারী ও পুরুষ কৃষককে তিনি প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
কৃষি গবেষকরা জানান, শস্য ব্যবস্থাপনা ও শস্য বিন্যাস প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করার লক্ষ্যে তারা কৃষকদেরকে বছরের ১২ মাসই জমিতে ফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধ করছেন। এরই অংশ হিসাবে তারা কৃষকদের মাঝে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ পদ্ধতি ছড়িয়ে দিয়েছেন। আধুনিক এই চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা এখন বেশ লাভবান হচ্ছেন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১২৫ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা এখন টমেটো চাষে বেশি ঝুঁকছেন।
: সাতক্ষীরার কলারোয়ার বাটরা গ্রামে গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে টমেটো চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। ফলন ও দাম দুটিই ভালো হওয়ায় জেলায় গত বছর ৭০ হেক্টর জমির আবাদ বেড়ে এবার দাঁড়িয়েছে ৯৫ হেক্টরে।
কৃষকরা জানান, গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ বেশ লাভজনক। সারাবছর সবজির চাহিদা পূরণ করতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ এ অঞ্চলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ টমেটো সংগ্রহের প্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। সাদা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ খুবই সহজ।
কৃষকরা বলেন, হঠাৎ করে অস্বাভাবিকহারে ডিজেল, সার ও কীটনাশকের মূল্য বৃৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। সে তুলনায় পণ্যের দাম বাড়েনি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। ভরা মৌসুমে ভারত থেকে টমেটো আমদানি না করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এদিকে কৃষকদের টমেটো চাষে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, সাতক্ষীরা জেলার মাটি ও আবহাওয়া গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের জন্য খুবই উপযোগী। স্বল্প সময়ে অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা টমেটো চাষে ঝুঁকছেন। বর্তমানে জেলায় বারি-৮, বারি-১০ ও বারি-১১ জাতের উচ্চফলনশীল গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, জেলার কলারোয়া উপজেলার বাটরা গ্রামে আট বছর আগে স্বল্প পরিসরে গ্রীষ্মকালীন হাইাব্র্রিড টমেটো চাষ শুরু করেন কয়েকজন কৃষক। প্রথম বছর থেকেই টমেটোর ভালো ফলন পাচ্ছেন তারা। বর্তমানে প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে ১৫০ কৃষক এ টমেটো চাষ করেছেন। সাবলম্বী হয়েছেন কৃষক, কর্মসংস্থান হয়েছে দেড় হাজার শ্রমিকের। বাটরা গ্রমের মতোই সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার অনেক এলাকায় এখন গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ হচ্ছে।
বাটরা গ্রামের টমেটো চাষি মোহাম্মদ রায়হান, তরিকুল ইসলাম ও আব্দুল আলিম জানান, এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করতে কৃষকের খরচ হয় প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। ফলন ভালো হলে এক বিঘা জমির টমেটো বিক্রি হয় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকায়। তবে ডিজেল, সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। তারা আরও জানান, টমেটোর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে ভরা মৌসুমে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ রাখা। একই সঙ্গে কোল্ডস্টোরেজ চালু করারও দাবি জানান তারা।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, স্বল্প সময়ে অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। গত বছর সাতক্ষীরা জেলার ৭০ হেক্টর জমিতে সবজিটি চাষ করেছিলেন কৃষক। চলতি বছর চাষ হয়েছে ৯৫ হেক্টর জমিতে। তিনি জানান, সাদা পলিথিনের ছাউনি দিয়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করা হয়। সাধারণত মে মাসের প্রথম দিকে বীজ বপন এবং জুন মাসে ওই চারা ক্ষেতে রোপণ করতে হয়। জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আসতে শুরু করে। একাধারে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত টমেটো পাওয়া যায়। গ্রীষ্মকালীন বারি হাইব্রিড টমেটো খেতে বেশ সুস্বাদু। বাজারেও রয়েছে এ টমেটোর ব্যাপক চাহিদা।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত