অনিয়মের অভিযোগ নদী পাড়ের মানুষের
মোজাফ্ফর রহমান, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর ও কালিগঞ্জ উপজেলা সদর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদী পুঃখননে ব্যাপক অনিয়ম দেখা দিয়েছে। যমুনা নদী পাড়ে বসবাসরত সাধারন মানুষের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের লোকজন স্কেবেটর মেসিন দিয়ে যে ভাবে নদী খনন করছে তা কোনো উপকারে আসবেনা। নদী খনন করে খাল বানানো হচ্ছে। কোথাও-কোথাও এরই মধ্যে খননকৃত নদীর পাড় ধসে যাচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।
তবে নদী খননে অনিয়মের কথা স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ছোট যমুনা নদী পুঃখননে কোনো রকম অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। সিডিউল অনুযায়ীই কাজ বুঝে নেয়া হবে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১ এর কার্যালয় থেকে জানা গিয়েছে, গত ২০২২ সালে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুঃখনন প্রকল্প (১ম পর্যায় ২য় সংশোধনীর অধিনে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার ছোট যমুনা নদী ১৫.৯০ কিলোমিটার পুঃখননের কাজ পায় বরিশালের ঠিকাদারী প্রতিষ্টান ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২৭ অক্টবর থেকে খনন কাজ শুরু করে আসামি ৩০ মে ২০২৩ এ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। কিন্ত কাজের যে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে শংসয় রয়েছে। তাছাড়া স্থান ভেদে কোথাও তলদেশ ২৮ ফুট প্রস্থ উপরে অংশে ৮০ ফুট আবার কোথাও প্রস্থ ১০০ ফুট সিডিউল অনুযায়ী পুঃখনন করতে হবে।
গতকাল ছোট যমুনা নদী পুঃখনন এলাকা সরেজমিন কালিগঞ্জ উপজেলার দুদলী গ্রামে যেয়ে দেখা গেছে, দুই প্রান্তে চারটি স্কেবেটর মেসিন দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে পলি মাটি তুলে নদী পাড়েই রাখা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের দাবি কোনো রকম বৃষ্টি হলেই ওই মাটি ধসে পুনরায় ভরাট হয়ে যাবে ছোট যমুনা নদী।
এব্যাপারে ছোট যমুনা নদী সংলগ্ন দুদলী গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম, সোহেল হোসেন ও হোসেন জানান, যমুনা নদী পুঃখনন করে সরু খাল করা হচ্ছে। তাদের দাবি পুর্বের যে নদী ছিলো তার এক চত্বুরাংশও খনন হচ্ছে না। সরকার যে লক্ষ উদ্দেশ্য নিয়ে ছোট যমুনা নদীটি পুঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে তার কোনোই কাজে আসবেনা। তলার পলিমাটি তুলে উপরে রাখা হচ্ছে। যা কিছু দিন যেতে না যেতেই পুনরায় নদী গর্ভে ধসে পড়বে। এভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় মথুরাশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসিনতার কারনে ছোট যমুনা নদী পুঃখননে চরম অনিয়ম হচ্ছে। তিনি বলেন, এভাবে খনন কাজ সম্পন্ন করা হলে সরকারের টাকায় নষ্ট হবে। প্রয়োজনে এলাকার লোকজন সাথে নিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ করা হবে বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্টান ইউনুস এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্তাধিকারী মো. ইউনুস এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ছোট যমুনা নদী পুঃখননে কোনো অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়নি। তবে নদী পাড়ে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা রয়েছে যা উচ্ছেদ করার জন্য বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কিন্ত শেষ পর্যন্ত ওই সব অবৈধ উচ্ছেদ না হওয়ায় নদী খনন কাজে খুবই ব্যাহত হচ্ছে। স্থাপনাগুলো এতই নদীর পাড়ে অবস্থিত যে খননকৃত মাটি রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। তার পরও খুব কষ্ট করে খনন করা হচ্ছে ছোট যমুনা নদী।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ সালাউদ্দিন ছোট যমুনা নদী পুঃখননে অনিয়মের কথা স্বীকার করে জানান, খনন কাজে কোনো রকম অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। সিডিউল অনুযায়ী খনন কাজ বুঝে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। তিনি আরো বলেন, সাতক্ষীরায় তিনি অল্পকিছুদিন যোগদান করেছেন। তার পরও খনন এলাকা পরিদর্শন করে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান তিনি।