সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সাতক্ষীরায় মৌসুমী আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও জমি চাষের উপযোগী হওয়ায় ‘সোনালী আঁশ বলে খ্যাত’ পাটের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।
কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও পানির অভাবে পাটজাগ দেওয়া, বিভিন্ন সময়ে দরপতন, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তালা উপজেলার পাটচাষিরা।তবে কৃষি বিভাগের দাবি, পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সময় এখনো পার হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারের সুনজর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার পাট চাষীরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, ২০১৩-১৪ মৌসুমে ছিল ৩২ হাজার ২৩০ বেল। ২০১৫-১৬ খরিপ মৌসুমে এ উপজেলায় পাটের উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৯২৫ বেল। ২০১৬-১৭ মৌসুমে তালা উপজেলায় তিন হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে ৩৬হাজার ৮৫০ বেল পাট উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৯-২০ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ৩৩ হাজার ৮৬২ বেল। কিন্তু মাত্র ২ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা সম্ভব হয়েছিল। চলতি বছর উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছিল ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সদর, মাগুরা, জালালপুর, খলিলনগর ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আশানুরুপ বাম্পার ফলন হয়েছে। পাটের গাছগুলো কোথাও কোথাও ৫ থেকে ৬ ফুট লম্বা আবার কোথাও ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা হয়েছে। পাটের ফলনও বেশ ভালো। আর মাত্র সপ্তাহ খানেক পর থেকে পাট কাটা শুরু হবে। কিন্তু তীব্র রোদ আর বৃষ্টির অভাবে পাটগাছ বড় হওয়ার পর অনেক স্থানে গাছের পাতা শুকিয়ে মারা যাচ্ছে।
অন্যদিকে অতি বৃষ্টি না হওয়ায় আশপাশের খাল-বিল, ডোবায় পানি জমেনি। ফলে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। পানি না থাকায় অনেকে পাট কেটে তা ক্ষেতেই রেখে দিয়ে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছেন অনেকে। এতে পাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পাট চাষী শেখ মালেক এই প্রতিবেদককে জানান, এবারের মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এবছর আশানুরুপ বৃষ্টি না হওয়ায় খাল-বিল, ডোবায় পানি জমেনি, তাই পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। আবার পাটের ফলন ভালো হলেও ভরা মৌসুমে পাটের বাজার মূল্য কম থাকে। এসময় ব্যবসায়ীরা কম দামে কিনে মজুত করে পরবর্তী সময়ে বেশি দামে বিক্রি করায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয় পাট চাষীদের। সরকার ন্যায্য দামে পাট কিনলেও কৃষকরা কিন্তু ন্যায্য দাম পায় না। বেপারিরা শুধু বলে পাটের দাম কম, চাহিদা কম। আমরা কৃষকরা পড়েছি বিপদে।
উপজেলার পাট ব্যবসায়ী আছাদুজ্জামান রাজু এই প্রতিবেদককে বলেন, সপ্তাহ খানেক আগেও পুরোনো পাটের দাম ছিল ২ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। বর্তমানে সেই পাট আরো কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে নতুন পাট উঠলে ২ হাজারের নিচে নেমে আসবে এবং নতুন পটের দাম নির্ধারণ করতে পারবো।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নূরুল ইসলাম ঢাকা ওয়েভকে জানান, গত বছরের চেয়ে সাতক্ষীরায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের একটি মনিটরিং টিমের মাধ্যমে সর্বক্ষণ বিভিন্ন রোগবালাই থেকে পাটকে মুক্ত রাখতেও পরিমিত পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। পাটের ন্যায্যমূল্য পেলে চাষিদের মধ্যে পাট চাষে আগ্রহ আরো বাড়বে। তাই চাষীরা যেন পাটের ন্যায্যমূল্য পায় তার জন্য একটি তদারকি টিম গঠন করা হবে।
