
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন নামে পরিচিত গাবুরা ইউনিয়নের উপকূলীয় টেকসই মজবুত ভেড়িবাদের জন্য ১০৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া হয় একটি মেগা প্রকল্প। এই মেগা প্রকল্পের সাথে জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারীদের দিনের পর দিন বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন দুর্নীতির পাহাড়। এর সাথে সবচেয়ে বেশি জড়িত তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী সালাহউদ্দিন আহমেদ তৎকালীন উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুর রহমান ও বর্তমান উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইমরান সরদার এবং উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম। এরাই গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কিছুদিন বিলম্ব হওয়ায় এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে শতশত কোটি টাকা। যার প্রমাণ ওই এলাকার প্রতিবেশী প্রত্যক্ষদর্শীরা। এই প্রতিবেদক ওই এলাকার এলাকাবাসী প্রত্যক্ষদর্শীদের মতামতের ভিত্তিতে ইতিপূর্বে ধারাবাহিকভাবে অনলাইন পত্রিকাও প্রিন্ট পত্রিকায় গাবুরা মেগা প্রকল্পের পাহাড় সমান দুর্নীতির খবর ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় দিন দিন নতুন নতুন দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসছে। আজকের এই প্রতিবেদনে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা থেকে আড়াই বছর আগে বিদায় নেওয়া একজন নির্বাহী প্রকৌশলী এই প্রতিবেদককে লোমহর্ষকসঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ওই নির্বাহী প্রকৌশলীর তথ্য মতে গাবুরা মেগা প্রকল্পের আয়তন ২৯ কিলোমিটার। মোট মেগা
প্রকল্পের প্যাকেজ ৪৭ টি এর মধ্যে বস্তা ড্যাম্পিং ছিল ২৭টি প্যাকেজে। বাকি ২০ টি প্যাকেজ কোন বস্তা ড্যাম্পিং নেই কারণ ২০টিপ্যাকেজ চর ভাড়াটি সে কারণে সেখানে নকশাতে ডাম্পিং ধরা হয়নি। ড্যাম্পিং কূত ২৭ টি প্যাকেজে ২৭ লক্ষ বস্তা ডাম্পিং করার কথা ছিল কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন এই ঝুঁকিপূর্ণ ২৭ টি প্যাকেজে আম্পানের পর থেকে একের পর এক ইমারজেন্সি প্রকল্পের ডাম্পিং করা হয়েছিল। সে কারণে মেগা প্রকল্পে কোন বস্তা ডাম্পিং করা হয়নি। ২৭ লক্ষ বস্তা প্রতি বস্তা সরকারি মূল্য ৩৫২ টাকা মোট টাকা ৯৫ কোটি ৪০ লক্ষ সম্পূর্ণ টাকা এই চার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আর ট্যাগ ফোরসের কর্মকর্তারা পকেটে ভরেছে। প্রকল্প এলাকায় ট্যাক্স ফোর্সের কর্মকর্তারা না গিয়ে শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেস্ট হাউসে বসে সমুদয় বস্তা কাগজপত্র জায়েজ করে দেয়। এরপরে এই প্রকল্পে রয়েছে পাঁচটি খাল খনন প্রকল্প যার বরাদ্দ ১০ কোটি টাকা কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা এ ব্যাপারে বর্ণনা দিয়েছেন খালগুলোর সামান্য একটু সেটে মেটে পানি উত্তোলন করে দিয়েছে। বরাদ্দকৃত এ টাকাগুলো ও এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ট্যাক্স ফোর্সের কর্মকর্তাদের পকেটে। এই প্রকল্পে পাঁচটি সুইচগেট যাহাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা কিন্তু এখনো সুইচগেটের কাজ শুরু হয়নি তারপরেও সুইচগেটের কমিশন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ঠিকাদারদের কাজ থাকে নিয়ে এনেছে বলে একাধিক ঠিকাদার এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানিয়েছেন। পরে আসি ব্লক নির্মাণ ৪০ লক্ষ প্রতিটি ব্লকের মূল্য সরকারি ৩৬০ টাকা মোট টাকা ১৪৪ কোটি এখানে ৮০% ব্লক নির্মাণ করা হয়ে গেছে এখান থেকে মোটা অংকের টাকা এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিয়েছে। ১০৪০ কোটি টাকার আর বাকি টাকা মাটির কাজে প্রতি স্কয়ার ফুট মাটি এক ১ শত৬০ টাকা পয়সা থেকে দ২২০ কুড়ি টাকা পর্যন্ত সরকারি মূল্য নির্ধারণ ছিল কিন্তু প্রতি স্কয়ার ফুট মাটিতে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ৫২ টাকা বাকি টাকা ঠিকাদার, এই দুর্নীতিবাজ ৪ কর্মকর্তা ও ট্যাক্সের কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিয়েছে। এক কথায় সাতক্ষীরা জেলার বাবুরা ইউনিয়নে মেগা প্রকল্পের আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই মজবুত ভেড়ি বাঁধের অর্থ শত শত কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। এই সমস্ত অবৈধ অর্থ লোড পাঠের পর উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুর রহমান ও নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দিন আহমেদ তড়িঘড়ি করে বদলি হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন। আর বাকি দুজন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ইমরান সরদার ও উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম বদলি হওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছে কিন্তু এই প্রতিবেদকের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মহাপরিচালক পানি উন্নয়ন বোর্ড পানিভবন ঢাকা ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মহোদয়ের বক্তব্য সংযুক্ত পেপার কাটিং সহ অভিযোগ দাখিল করায় আপাতত এই অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইমরান সরদার ও ফরিদুল ইসলামের বদলির সুযোগ নেই। তবে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে এবং এই দাবিটা ওই এলাকাবাসীও করেছেন এই দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের তদন্তের স্বার্থে ওএসডি করার জন্য। কারণ এলাকায় তাদের কিছু পালিত দালাল আছে তদন্তের সময় অভিযুক্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলে ওই সমস্ত দালালরা তদন্ত কাজে বিঘ্ন ঘটাবে সে কারণে জানা যাচ্ছে অতি শীঘ্রই দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের তদন্তের স্বার্থে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা দের ওএসডি করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এই ৪জন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার মধ্যে ৩ জন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা জন্মলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এই তিনজন হলেন তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দিন আহমেদ তৎকালীন উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুর রহমান বর্তমান উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইমরান সরদার। এখনো তাদের ভাই, বাবা ,চাচা ও আত্মীয়-স্বজন সক্রিয় ভাবে আওয়ামী লীগের পথ পদবীতে বহাল তবিয়তে জড়িয়ে আছে এবং এই তিন কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্রলীগ করতেন সক্রিয়ভাবে সেই সুবাদে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাকরিতে যোগদান করেন। আর একজন উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম তিনি ও তার পরিবার কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত তা এখনো সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি সংগ্রহ করতে পারলে তা প্রতিবেদন আকারে পত্রিকায় প্রকাশ করা হবে।
এদিকে সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে মেগা প্রকল্পে এই সমস্ত কর্মকর্তাদের দুর্নীতি শত শত কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্যের বিষয় সদ্য যোগদানকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন আমি তো সবে মাত্র যোগদান করেছি বস্তা ড্যাম্পিং সহ এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় আমি তো এখানে ছিলাম না কাজেই দুর্নীতি হয়েছে কিনা হয়েছে আমি কিছুই বলতে পারব না। তিনি আরো বলেন আমার চেয়ে আপনারা ও এলাকাবাসী প্রত্যক্ষদর্শীরা ভালো বলতে পারবেন সে কারণে অহেতুক আমার বক্তব্য শোনা আর না শোনা একই কথা।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত