সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : শরতের আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে, মাঠের ধারে ফুটে থাকা কাশফুল জানিয়ে দিচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী বার্তা। শিশির ভেজা ভোরে যখন ধানক্ষেতের বাঁকে ভেসে আসে শঙ্খধ্বনি আর ঢাকের আওয়াজ, তখন মনে হয় উৎসব যেন কেবল দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। টানা পাঁচ দিন ধরে উৎসব চলবে ২ অক্টোম্বর বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমী।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দুই হাজার বেশি। ঢাকায় পূজা হবে ২৫৮টি ম-পে। শাস্ত্রীয় মতে, এ বছর দেবী দুর্গা আসছেন হাতির পিঠেÑযা সমৃদ্ধি ও শস্যশ্যামলার প্রতীক। তবে কৈলাসে ফিরবেন দোলায়, যা অশুভ সংকেত বহন করে।
সাতক্ষীরার গ্রাম থেকে শহরÑপ্রতিটি এলাকায় এখন চলছে পূজার সরব প্রস্তুতি। বাঁশ, খড়, কাদা, রং আর শিল্পীর নিপুণতায় প্রতিমা গড়ার কাজ শেষ পর্যায়ে। চলছে আলোক সজ্জার কাজ। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এ বছর সাতক্ষীরায় ৫৯৩টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা ভিত্তিক চিত্রে দেখা যায়Ñসবচেয়ে বেশি পূজা হবে তালা উপজেলায়, মোট ১৯৬টি ম-পে। আশাশুনিতে ১০৪টি, কলারোয়া উপজেলা ও পৌরসভায় ৪৫টি, শ্যামনগরে ৭০টি, দেবহাটায় ২১টি এবং সদর উপজেলা ও পৌর এলাকায় ১০৭টি ম-পে উৎসবের প্রস্তুতি চলছে।
আশাশুনির প্রতিমাশিল্পী উত্তম পরামান্য বলেন, “প্রতিমা গড়ার সঙ্গে শুধু জীবিকার সম্পর্ক নয়, মায়ের প্রতি ভক্তি আর ভালোবাসাও জড়িয়ে আছে। আমরা চেষ্টা করি যেন প্রতিটি প্রতিমায় জীবন্ত আবহ ফুটে ওঠে।” পূজাকে ঘিরে সাতক্ষীরার গ্রামগঞ্জে জমে উঠেছে কেনাকাটার হাট-বাজার।
নতুন পোশাক, অলংকার আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসে ব্যস্ত সবাই। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই নয়, বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষও প্রতিমা গড়ার কাজ দেখতে ভিড় করছেন ম-পে ম-পে। শ্যামনগরের এক তরুণ পূজারি বলেন, “বছরজুড়ে আমরা এই উৎসবের অপেক্ষায় থাকি। এখন চারদিকে যে সাজসজ্জা, ঢাক-ঢোল আর আলোকসজ্জা চলছে, তাতে মন ভরে যায়।”
দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সরকার এ বছর সারাদেশে ৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। এর মধ্যে ৪ কোটি টাকা সাধারণ ম-পে এবং ১ কোটি টাকা পার্বত্য জেলাগুলোর জন্য বরাদ্দ। সাতক্ষীরার প্রতিটি পূজাম-পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাÑজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যেই তা নিশ্চিত করেছে।
ইতিমধ্যে সরকারি চাল ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্ধ দিয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে দেবীদুর্গার বোধন ও আমন্ত্রণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, ১ অক্টোবর মহানবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
শরতের নীল আকাশ, শুভ্র কাশফুল আর ঢাকের বাদ্য যেন জানিয়ে দিচ্ছে আনন্দের আগমনী বার্তা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে দুর্গোৎসবকে পরিণত করছে সম্প্রীতির উৎসবে। সাতক্ষীরার প্রতিটি পূজাম-পে তাই এখন প্রতীক্ষা একটাইÑমা দুর্গার আবির্ভাবের, যিনি আসবেন দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের বাণী নিয়ে।
সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলায় এবার 70 টি দুর্গা মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই উপলক্ষে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রানী খাতুন সনাতন ধর্মেরঅবলম্বীদের শারদীয় দুর্গা উৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি তার শুভেচ্ছা বাণীতে বলেছেন এদেশে ধর্ম যার যার উৎসব সবার সে কারণে দূর্গা পূজা উপলক্ষে সবার অধিকার আছে উৎসবে অংশগ্রহণ করার কিন্তু কেহ খারাপ চিন্তা ধারা নিয়ে পূজা মন্ডপে প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলার সকলউপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ সনাতন ধর্ম অবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার শারদীয়া শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পাশাপাশি শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ এক শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছেন পৃথক এই শুভেচ্ছা বাণীতে তিনি বলেন সাতক্ষীরা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই জেলায় ২০২৫সালে ৫৯৩ টি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে তার মধ্য বেশ কিছু পূজা মন্ডপ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে আমরা ইতিমধ্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য ভিত্তিতে জানতে পেরেছি, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ পূজা মন্ডপ গুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করেছি। তিনি আরো বলেন এদেশে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই কথাটি মনে রেখে সকলকে শারদীয় দূর্গা উৎসবে আনন্দ উপভোগ করতে হবে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত