সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত “কুমিল্লা ও সাতক্ষীরার জন্য বিশেষ প্রকল্প”শিরোনামের প্রতিবেদনে সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়ন চাহিদা সম্পর্কে আংশিক ও ত্রুটিপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী এ. এস. এম. তরিকুল হাসান খান। তিনি জানান, জেলার বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়েছে এবং কিছু তথ্য সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত।
তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় মোট ৫৭৮৮টি সড়কের দৈর্ঘ্য ১১ হাজার ২ কিলোমিটার। এর মধ্যে ২২৩০ কিলোমিটার পাকা হলেও প্রায় ৮০ শতাংশ সড়ক এখনো কাঁচা। অথচ সংবাদপত্রে ‘মেরামত’ প্রসঙ্গকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যেখানে অধিকাংশ রাস্তা এখনো কাঁচা, সেখানে মেরামতের প্রসঙ্গই বা আসে কীভাবে?
এলজিইডি কর্মকর্তা আরও জানান, পত্রিকায় উল্লেখিত “সাতক্ষীরায় ১ হাজার ৫০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজ চলছে”তথ্যটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বাজেট ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের কোনো জেলাতেই এত বিপুল পরিমাণ সড়ক সংস্কার একসাথে করা সম্ভব নয়।
প্রস্তাবিত “সাতক্ষীরা জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প”বাস্তবায়িত হলেও নতুন করে মাত্র ১৩১০ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হবে। তখনও জেলার প্রায় ৬৬ শতাংশ রাস্তা কাঁচা থেকে যাবে। অথচ প্রতিবেশী নোয়াখালী ও ফেনীর মতো জেলায় ইতোমধ্যেই অধিকাংশ সড়ক পাকা হওয়ায় সেসব জেলায় মেরামতের বিষয় প্রাসঙ্গিক হলেও সাতক্ষীরার ক্ষেত্রে মূল চাহিদা হলো রাস্তা পাকাকরণ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সাতক্ষীরার মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১৯টি জেলার একক উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে, ১০-১২টি জেলার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এবং বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়াধীন থাকলেও সাতক্ষীরার নামে এর আগে কোনো একক জেলা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। নতুন প্রস্তাবিত প্রকল্পের বাজেটও অন্য জেলার তুলনায় অর্ধেকের মতো।
অবহেলিত সাতক্ষীরার আরেকটি বড় সমস্যা হলো আধুনিক অবকাঠামোর ঘাটতি। জেলা সদরে নেই আধুনিক বাস টার্মিনাল, জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে জেলা স্টেডিয়াম। অথচ এখান থেকেই জন্ম নিয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার সৌম্য সরকার, মুস্তাফিজুর রহমান এবং নারী ফুটবলার সাবিনা খাতুন ও আফিদারা।
প্রকৌশলী তরিকুল হাসান আরও জানান, সাতক্ষীরা একটি উপকূলীয় ও দুর্যোগপ্রবণ জেলা। ঝুঁকিপূর্ণ মাটি ও অপ্রতুল পরিকল্পনার কারণে এখানে সড়ক নির্মাণ ব্যয় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত হয়। প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততার কারণে জেলার দক্ষিণাঞ্চলের গাবুরা, প্রতাপনগর ও পদ্মপুকুরের মতো এলাকাগুলোতে দুর্ভোগ সীমাহীন। দুর্যোগকালে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ত্রাণ ও উদ্ধারকাজেও ব্যাপক সমস্যা দেখা দেয়।
তিনি মনে করেন, সাতক্ষীরার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে অবিলম্বে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ এবং অবকাঠামো খাতে বাড়তি বরাদ্দ প্রয়োজন। পাশাপাশি সুন্দরবন রক্ষায় “সুন্দরবন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি”গঠন করা জরুরি।
তিনি বলেন, “সাতক্ষীরার উন্নতি হলে জাতীয় অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখবে। বাগদা-গলদা চিংড়ি, সুন্দরবনের মধু এবং হিমসাগর আম রপ্তানি করে এই জেলা দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে আসছে। তাই অবকাঠামোগত উন্নয়নই এখন সাতক্ষীরার প্রধান চাহিদা।”
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত