By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: সাতক্ষীরা উপকূলীয় নারীদের সংগ্রামী জীবনের গল্প
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ALL E-Paper
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > সাতক্ষীরা উপকূলীয় নারীদের সংগ্রামী জীবনের গল্প
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা উপকূলীয় নারীদের সংগ্রামী জীবনের গল্প

Last updated: 2025/11/14 at 3:42 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 2 months ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার শ্যামনগর হায়বাতপুর গ্রামের শেফালী বিবি (৫৫) কিংবা শ্যামনগর পৌরসভার হায়বাতপুর গ্রামের চন্দ্রিকা ব্যানার্জী (৫৫)। এরা সবাই পরিবারের প্রধান। উপকূলীয় এ এলাকার মাত্র এই ৩ জনই নয়, অনেক অসহায় নারী রয়েছেন যারা বেঁচে থাকার তাগিদে কাজ করছেন।
এদের মধ্যে কারও স্বামী সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের আক্রমণের শিকার হয়ে মারা গেছে, কারও স্বামী অসুখে মারা গেছেন, কারও স্বামী ফেলে চলে গেছেন, আবার কারও স্বামী দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত। সংসারের বোঝা নারীর কাঁধে। পরিবারে অভাব অনটন বারোমাস লেগেই রয়েছে। পরিবারের প্রধান দুস্থ-অভাবী নারীদের দুঃখ পিছু ছাড়ে না। এখানে ওখানে চেয়েচিন্তে খাওয়া, ধারকর্জ করে চলা, সাহায্যের জন্য সরকারি বেসরকারি সংস্থায় হাত বাড়ানো তাদের নিত্যসঙ্গী। তবুও জীবন ধারণে কখনো অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটে তাদের।
উপকূলের নারীদের-ভাগ্য বিড়ম্বিত জীবনে অবহেলা, বৈষম্য আর নির্যাতনের শিকার নিত্যদিনের তবে নেই সমাধান। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে সংসারে নারী হয়ে ওঠেন পরিবারের প্রধান। অথচ কোথাও নেই এতটুকু স্বীকৃতি। উপরন্তু আছে যৌতুকের চাপ, তালাকের ভয়। স্বামীর একাধিক বিয়ে শেষ জীবনেও নারীকে দেয় না স্বস্তি। জীবনের রঙিন দিনগুলোর শুরুতেই বাল্যবিয়ের ভোগান্তি চাপে নারীর কাঁধেই। তবুও নারীকে সইতে হয় নানাবিধ গঞ্জনা। দুর্যোগ এলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি বাড়ে নারীর। লঙ্ঘিত হয় অধিকার। ভয়াল নদীতে মাছ ধরার মতো পেশায় দেখা মেলে উপকূলের নারীর। জীবিকার তাগিদে নদীতে গিয়ে স্বামী ফিরে না এলেও নারীকে নামতে হয় জীবন সংগ্রামে।
সোনামনি ষাটোর্ধ্ব এক সংগ্রামী নারী। থাকেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ বাজারের পেছনে জেলেপাড়ায়। একাকী জীবন। ছোটবেলায় সোনামনির বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় ১৯৯৯ সালে সুন্দরবনে মাছ শিকারে গেলে স্বামীকে প্রাণ দিতে হয় বাঘের আক্রমণে। একমাস বয়সী শিশুসহ স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় শাশুড়ি। সমাজ সোনামনিকে ‘অপয়া’ বলে আখ্যা দেয়। যেন তার অপরাধের কারণে স্বামীকে বাঘে নিয়েছে। এভাবে দিন যেতে থাকে। কিছুদিন পরে দেবরের সঙ্গে বিয়ে হয় সোনামনির। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে ২০০২ সালে দ্বিতীয় স্বামীও সুন্দরবনে মাছ শিকরে গেলে তাকে ও বাঘের আক্রমণে প্রাণ দিতে হয়। দুই স্বামী বাঘের পেটে যাওয়ার পর সোনামনি ‘স্বামীখেকো’ বলে পরিচিতি পায়।
সমাজ তাকে দেখে ভিন্ন চোখে। কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত করত না তাকে। সমাজে চলাফেরাই তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। সমাজ তাকে অপয়া, অলক্ষ্মী বলে আখ্যা দেয়। শাশুড়ি তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখেন, যাতে সকালে ঘুম থেকে উঠে সোনামনির মুখ দেখতে না হয়।
সোনামনির প্রথম স্বামীর একটি সন্তান ও দ্বিতীয় স্বামীর তিনটি সন্তান। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলে মেয়েরা সবাই বিবাহিত এবং আলাদা আলাদা। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই মাকে ও তারা দেখে না।
বর্তমানে সংসার কিভাবে চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আর সংসার! আমি একলা! বাজারের দোকান ঝাড়ু দেই, গাঙে জাল টানি মাছ, কাঁকড়া ধরি, ঘেরে মাটি কাটার কাজ করি। যখন যে কাজ পাই তা করি। এভাবে চলতিছে।তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি বিধবা তা তোমরা জানো কিন্তু আমাগে চেয়ারম্যান, মেম্বাররা তা জানে না।
চন্দ্রিকা ব্যানার্জীর (৫৫)। শ্যামনগর পৌরসভার হায়বাতপুর গ্রামের মৃত অনিমেষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে। তাঁর পিতা অনিমেষ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দক্ষিণ খুলনার বিশিষ্ট সেতার বাদক ও সংগীতশিল্পী। তাঁর তিন মেয়েয় মধ্যে চন্দ্রিকা ব্যানার্জী সবার বড়।
চন্দ্রিকা ব্যানার্জী উপকূলীয় এলাকার সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া নারীদের একত্রিত করে তৈরি করেন নারী সংগঠন নকশীকাঁথা। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত নারী সংগঠন নকশীকাঁথার পরিচালক হিসেবে তিনি নিজস্ব কর্ম এলাকার নারীদের উন্নয়নে তথা এলাকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যক্রম, কৃষি, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ, সুপেয় পানির নিশ্চয়তা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছেন।তিনি ইতিপূর্বে জয়িতা পুরস্কার, সফল সংগঠক পুরস্কারসহ অন্যান্য সম্মাননা গ্রহণ করেছেন। তিনি উপজেলা সরকারি কৃষি কমিটি, ভূমি কমিটি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিটি, বেসরকারি পানি কমিটি, ভূমি কমিটি, জলবায়ু পরিষদ সদস্য, মহিলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তিনি গত কয়েক বছর আগে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের সহায়তায় ইউরোপ, সুইডেন, ডেনমার্কসহ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করে বাংলাদেশের নারীদের সাফল্য বিভিন্ন সেমিনারে তুলে ধরেছেন।
চন্দ্রিকা ব্যানার্জী জানান, ১৯৯৪ সালে সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর থেকে সকল ক্ষেত্রে নারীদের অধিক মাত্রায় প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় সুপেয় পানি সংরক্ষণে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রযুক্তি, পুকুর ফিল্টার স্থাপন, ঝরে পড়া শিশুকে উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিশু শিক্ষা প্রদান, বয়স্ক শিক্ষা প্রদান, নারী প্রধান কৃষি পরিবারে লবণসহিষ্ণু ধানবীজ বিতরণ, পুষ্টির চাহিদা পূরণে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ক্লাব গঠন ও প্রশিক্ষণ, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, হস্তশিল্প ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। নারী প্রধান ভূমিহীন পরিবারকে খাসজমি পেতে অস্থায়ী/স্থায়ী বন্দোবস্ত সহযোগিতাসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন।শেফালী বিবি (৫৫) সুন্দরবনঘেঁষা দাতিনাখালী গ্রামের ছবেদ আলী গাজী স্ত্রী। কেওড়ার টক-ঝাল-মিষ্টি আচার আর জেলি তৈরি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। মোম দিয়ে শোপিসসহ বিভিন্ন পণ্য বানিয়েও বাজারজাত করেন তিনি। তিনি এখন অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারীদের দৃষ্টান্ত।
শেফালী শুধু নিজের ভাগ্যের চাকাই ঘুরাননি, সুন্দরবনের সুরক্ষা ও বনজীবীদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য উপকূলীয় এলাকার বননির্ভর নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘দাতিনাখালী বনজীবী নারী উন্নয়ন সংগঠন’। শতাধিক নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে করেছেন আত্মনির্ভরশীল। প্রশিক্ষিত এসব নারীও কেওড়ার চকোলেট, আচার ও জেলি এবং সুন্দরবনের মধু বয়ামজাত করে বিক্রির মাধ্যমে উপার্জন করছেন অর্থ। এসব পণ্য বিক্রির লভ্যাংশ ব্যয় হচ্ছে ‘বাঘ বিধবা’ ও বনজীবী নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে।
শেফালী জানান, সুন্দরবনের কোলে চুনা নদীর পাড়ে এক টুকরো খাসজমিতে তাঁদের বাস। স্বামী ছবেদ আলী গাজী সুন্দরবন থেকে মোম, মধু, মাছ, কাঁকড়া ও গোলপাতা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন । কিন্তু তাতে পাঁচজনের সংসার ঠিকমতো চলত না।
তাই নিজেই কিছু করার কথা ভাবতে থাকেন। একপর্যায়ে উন্নয়ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বারসিকের পরামর্শে সুন্দরবনের ফল কেওড়ার টক, ঝাল ও মিষ্টি আচার, জেলি এবং চকোলেট তৈরি শুরু করেন। একই সঙ্গে মোম দিয়ে শোপিস, মোমবাতিসহ বিভিন্ন পণ্য বানিয়ে বিক্রি করতে থাকেন। এতে তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যের মুখ দেখেন তিনি।
এবিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মিসেস শাহানা হামিদ বলেন, উপকূলের নারীরা যেভাবে সংসারের হাল ধরছেন সেটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে নারীদের সরকারি সহায়তার মাধ্যমে এসব কাজে আরও উদ্যোগী করা প্রয়োজন। কারণ এরাই অর্থনীতি চাঙ্গা করার মূল হাতিয়ার। উপকূলে নারী জেলে শ্রমিক রয়েছেন এমন তথ্য সরকারের কাছে নেই। তাদের নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার।
উপকূলের নারীরা যেসব কাজে এগিয়ে, তা দেখতে হলে এখানে আসতে হবে। দেশের সামগ্রিক নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসব নারী অংশীদার। তাই সরকারের পক্ষ থেকে এসব নারীকে বিনা সুদে ঋণ সহায়তা দেওয়া উচিত।
খুলনার কয়রা উপজেলার কাঠমারচর গ্রামটি বরাবরই দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা হিসেবে পরিচিত। এ গ্রামের দিনমজুর আবদুল ওহাব তরফদারের মেয়ে শরীফা খাতুনের যখন বিয়ে হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। ওই অবস্থায় শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন, স্বামী মাহাবুবুর রহমানের আরেকটি বউ আছে। তারপরও সাংসারিক চাপ সামলে ধৈর্য ধরে স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন কিশোরী শরীফা। এক বছর পরেই মা হন শরীফা। এভাবে অল্প বয়সেই তিন সন্তানের মা হন তিনি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় স্বামী মারা যাওয়ায় শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে হয় তাঁকে।
শরীফা যখন কাঠমারচর গ্রামের বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন, তখন ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ছোবলে লন্ডভন্ড এলাকা। এ অবস্থায় গ্রামের লোকজনের সঙ্গে বাঁধের ওপর আশ্রয় হয় তাঁর। একসময় দুর্যোগ কেটে যায়। তবে নতুন দুর্যোগ নেমে আসে শরীফার জীবনে। বাবার সংসারেও তাঁকে নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। ভাই-ভাবিদের চাপে আলাদা হতে হয় তাঁকে। বর্তমানে ছোট্ট এক ঘরে তিন সন্তান নিয়ে আলাদা বসবাস করেন শরীফা। নিজে নদীতে জাল টেনে, কখনো অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে, কখনো চিংড়ির ঘেরে মজুরের কাজ করে সন্তানদের পড়ালেখার পাশাপাশি খাবার জুগিয়ে চলেছেন এই নারী।
উপকূলে শরীফা খাতুনের মতো নারীদের ভাগ্যবিড়ম্বিত জীবনে দুর্যোগ-দুর্বিপাকে স্বামীর অনুপস্থিতিতে সংসারে নারীরাই হয়ে ওঠেন পরিবারের প্রধান হয়ে।
তেমনই একজন কয়রার কাটাকাটি এলাকার মজিদা খাতুন। শাকবাড়িয়া নদীর ওপারের বাঁকের দিকে আঙুল উঁচিয়ে মজিদা খাতুন দেখাচ্ছিলেন কয়েক বছর আগে সেখানেই ছিল তাঁর বসতভিটা। ছিল গোলপাতার ঘর। সামনে ছিল একটুকরা উঠান। সারা দিনের কর্মক্লান্তি শেষে সে ঘরেই সুখের নিদ্রায় যেতেন স্বামী-সন্তানদের নিয়ে। আজ সেখানে কেওড়া, বাইন, গরানের বন। আর পরিবার নিয়ে মজিদা খাতুনের ঠাঁই হয়েছে বাঁধের ঢালে দুটি খুপরিঘরে।
মজিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা যেমনে থাকি গেরস্থদের হাঁস-মুরগিও এর চাইতে ভালো থাকে। গাঙে বেশি জোয়ার হলি ঘরের কোনায় পানি আসে। তখন ছোট ছাওয়াল-মাইয়েগুলো ভয় পায়।’
একটু দূরে হারেজখালি ক্লোজারের পাশে বাঁধের ঢালে দোচালা খুপরিঘরে মেয়ে ও তিন নাতি নিয়ে বাস করছেন জরিনা বেগম। দুই বছর ধরে সেখানেই আছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আম্পানে বাঁধের যে অংশ ভেঙে যায়, সেখানেই ছিল তাঁর এক বিঘার বসতভিটা। সে ভিটা এখন রিংবাঁধের তলায়। ভিটার সঙ্গে স্বামী মজিদ শেখের কবরটাও চাপা পড়েছে।
প্রতিবছর ভাঙনের ফলে গ্রামের নদীর তীরবর্তী অংশ বিলীন হচ্ছে। আর এভাবে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মজিদা খাতুন ও জরিনা বেগমের মতো নারীপ্রধান পরিবারগুলো। তাঁদের ঘর বাঁধার জায়গাটুকুও নেই। এসব পরিবারের সর্বশেষ আশ্রয় হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ঢালে। সেখানে নিরাপত্তাহীনতার সঙ্গে আছে আরও অজানা শঙ্কা। তবু উপায় নেই এসব বাস্তুহারা মানুষের। সব ভয়ডর সয়ে বছরের পর বছর মাথা গুঁজে পড়ে আছেন তাঁরা। অভিযোগ জানানোরও জায়গা নেই যেন।
কয়রার গাতিরঘেরী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চলতি বোরো আবাদ মৌসুমে পুরুষদের পাশাপাশি কৃষিকাজে নারী শ্রমিকেরাও শ্রম দিচ্ছেন। কিন্তু একই কাজে পুরুষের মজুরি যেখানে ৪০০ টাকা, সেখানে নারী শ্রমিকের মজুরি অর্ধেক দেওয়া হয়। এমন মজুরিবৈষম্য সর্বক্ষেত্রে বলে অভিযোগ করেন শ্রমজীবী নারীরা।
খুলনার কয়রা উপজেলার বড়বাড়ি এলাকায় একটি বোরো খেতে কাজ করছেন কয়েকজন নারী শ্রমিক
বোরো খেতের আগাছা পরিষ্কার করতে করতে তানজিলা খাতুন নামের এক নারী বলেন, ‘সকাল সাতটা থেকে একটানা জমির আগাছা বাইছে ১৫০ টাকা করে পাই। আবার এক-আধ ঘণ্টা দেরি করলি টাকা কম দেয়। কী করব এলাকায় কাজের অভাব, আয়-রোজগারের পথ নাই। প্যাটের দায়ে করতি হয়।’
বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে অনেকটা বিধ্বস্ত এলাকায় তেমন কোনো কাজ না থাকায় সংসারের খরচ জোগাতে কম পারিশ্রমিকে হাড়ভাঙা খাটুনি করতে হচ্ছে উপকূলের নারীদের। অথচ সে তুলনায় পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না তাঁরা।
বড়বাড়ি গ্রামের সাধনা রানী বলেন, ‘পুরুষ কিষানেরা সারাবেলায় যেটুকু কাজ করতি পারে, আমরাও তা–ই পারি। হয়তো একটু উনিশ-বিশ হতি পারে।’ একই গ্রামের কল্পনা মণ্ডল বলেন, ‘মজুরির কথা বলতি গেলি কাজে আসতি মানা করে জমিমালিকেরা। উপায়ান্তর না দেইখে মুখ বুজে কাজ করি। কী করব, প্যাটের ভাত তো জোগাতি হবে।’
সুন্দরবন–সংলগ্ন ৬ নম্বর কয়রা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার নারীরা ছোট নৌকায় করে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ খালি হাতে ফিরছেন। তাঁরা জানান, সুন্দরবনে প্রবেশে তাঁদের বন বিভাগের অনুমতিপত্র নেই। তবু পেটের তাগিদে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গিয়েছিলেন কাঁকড়া শিকারে। কিন্তু বন বিভাগের লোকজন তাঁদের ফিরিয়ে দিয়েছেন।
কাটকাটা এলাকায় বেড়িবাঁধের ওপর ঝুপড়িঘরে বসবাস মজিদা খাতুনের
গ্রামের বাসন্তী রানী বলেন, ‘এলাকায় এখন কাজ নেই বললেই চলে। বাড়ির পাশে সুন্দরবন আছে বলে সেখান থেকে কম বেশি আয়–রোজগারে কোনো রকমে খেয়েপরে বাঁচি আছি। না হলি কী যে হতো, ভগবানই জানেন।’
দেখা গেছে, ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ নদীর পানিতে গোসল ও ঘরগৃহস্থালির কাজ সারছেন। সেখানে বাঁধের পাশে রয়েছে সারি সারি ঝুলন্ত টয়লেট। আশপাশের জমিতে লোনা পানির চিংড়ির ঘের থাকায় পুকুরের পানিও লবণাক্ত। এ ছাড়া গ্রামের দু-তিন কিলোমিটারের কোথাও নলকূপ নেই। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, পানি সংগ্রহ করার দায়িত্ব নারীদের। খাবার পানির জন্য বাড়ির নারীরা প্রতিদিন বিকেলে দূরের মিঠা পানির পুকুর থেকে কলসি ভরে পানি আনেন। তাঁদের কথায়, এতে খাবার পানির সমস্যা এক রকম মিটলেও দূষিত পানি ব্যবহারে চর্মরোগের প্রকোপ রয়েছে সেখানে। এ ছাড়া জ্বালানির জন্য কাঠ সংগ্রহ করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বনের ভেতরে যেতে হয় নারীদের।
৬ নম্বর কয়রা গ্রামের গৃহিণী পুষ্প মুন্ডা বলেন, ‘পানির কারণে নানা সমস্যায় ভুগতি হয় আমাগের নারীদের। বাচ্চাদেরও অসুবিধা হয়।’ সাধারণত এসব অসুখবিসুখে পাশের দোকান থেকেই বড়ি কিনে খান তাঁরা। কারণ, ওই গ্রামসহ আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের কোথাও চিকিৎসক বা চিকিৎসাকেন্দ্র নেই।
কয়রার সুন্দরবনসংলগ্ন কয়েকটি গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, নদীতে অনেক নারী পিঠে দড়ি বেঁধে জাল টানছেন। সুন্দরবনের গহিনের নদী থেকে উজানে ভেসে আসা বাগদার পোনা ধরার জন্য অসংখ্য নারী জাল পেতে রেখেছেন নদীতে। লোকালয়ের কাছে ছোট–বড় নদীতে কেউ টানা জালের সাহায্যে, কেউ নৌকায় বসে জাল পেতে মাঝনদীতে অপেক্ষা করছেন। রেণু আহরণের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করেন তাঁরা।
৬ নম্বর কয়রা এলাকার বাবুর পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করছেন নারীরা
কয়রা গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী ফরিদা খাতুন জানান, প্রতিদিন এখানের নারীরা চিংড়িপোনা ধরার জন্য সাত-আট ঘণ্টা নদীর লবণাক্ত পানিতে থাকেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ততাও বেড়েছে এ অঞ্চলে। আর মাত্রাতিরিক্ত এসব নোনাপানি নিয়মিত ব্যবহারের কারণে জরায়ুসংক্রান্ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এখানকার নারীরা।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার সুজিত কুমার বৈদ্য বলেন, ‘বছরজুড়ে চিকিৎসা নিতে আসা উপকূলের নারীদের অধিকাংশের সমস্যা জরায়ু, ডিম্বনালি ও অন্যান্য প্রজনন অঙ্গের। এর অন্যতম কারণ মাটি ও পানিতে সহনশীল মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি লবণ। লবণাক্ততার সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস, সচেতনতার অভাব এবং অপুষ্টি এই সংক্রমণের অন্যতম কারণ।’
শ্যামনগরের উপকূলীয় অঞ্চলের নারীর অধিকার আদায়য়ের লক্ষ্যে এবং মানব কল্যাণে ৫ জয়িতার অবদানের কথা এখন মানুষের মুখে মুখে। সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নাম জয়িতা। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক জয়িতা। কেবল নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল করে চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এই জয়িতাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগটির নাম ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’। জয়িতাদের পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে ১. অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী; ২. শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী; ৩. সফল জননী নারী; ৪. নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যে নারী; ৫. সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছেন যে নারী। শ্যামনগর উপজেলায় জয়িতা বাছাই কাজটি পরিচালিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পাঁচজন জয়িতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর মনে করে, জয়িতারা বাংলাদেশের বাতিঘর। জয়িতাদের দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রাণিত হলে ঘরে ঘরে জয়িতা সৃষ্টি হবে। আর তা হলেই বাংলাদেশ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।
অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারীর নাম শংকরী মন্ডল। শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কুলতলী গ্রামের শংকরী মন্ডল প্রাাণবৈচিত্র্য সমৃদ্ধ কৃষি বাড়ি তেমনই একটি কৃষি পরিবার। স্বামী ও দুই সন্তানসহ চার সদস্যের ছোট্ট সংসার তার। স্বামী প্রশান্ত মন্ডল পেশায় ভ্যানচালক। বড় মেয়ে সুষ্মিতা বালা ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করে চাকরির খোঁজে ব্যস্ত এবং ছোট মেয়ে সংগীতা বালা জেলা শহরে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী। স্বামী দিনের অধিকাংশ সময়ে বাইরে ভ্যান চালানোর কাজ করেন। যদিও স্বামী ও সন্তানদের সহযোগিতায় কৃষি বাড়ির সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করতে হয় তার নিজ হাতেই। ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশীপ ফর ডেভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের কুলতলী গ্রামে ধুন্দল সিএসও দলে যুক্ত হয়। যুক্ত হওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক আলোচনায় সভায় অংশগ্রহন করে আসছেন। বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসাবে কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য একটি মোটর, ১টি কদবেল, পেয়ারার চারা, কিছু বীজ, ১টি ছাগল ও দুটি মুরগী সহযোগিতা পান তিনি। বারসিক-এর নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে তিনি নিজের প্রচেষ্টা, শ্রম ও মনোবল দিয়ে পারিবারিক কৃষি পরিচর্যা চলমান রাখেন তিনি।
তিনি মাত্র ১৫শতক বসতভিটায় বছরব্যাপী বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদসহ প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ করেন। ফলজ, বনজ, ঔষধীসহ বিভিন্ন চাষাবাদ ও সংরক্ষণ এবং প্রাণীসম্পদ হিসেবে ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করেন। এছাড়া নিজের মিষ্টি পানির পুকুরে সারা বছর স্থানীয় মৎস্যবৈচিত্র্য কৈ, শিং, মাগুর, মলা, শোল, ঢেলা, চ্যাং, ব্যাদলা, পুটি, মরুল্য, রুই, কাতলা, মৃগেল, তেলাপিয়া, টেংরা, চিংড়ি ইত্যাদি চাষাবাদ ও সংরক্ষণ করেছেন। সুব্যবস্থাপনার জন্য তার কৃষি খামারে সকল ফসলের নাম করণ দিয়ে ছোট সাইনবোর্ড দিয়ে সহায়তা করেছে বারসিক। শংকরী রানী আরও বলেন, ‘তার বসতভিটায় নানা ধরনের ফসল চাষাবাদ করেন, ফলে বাজার থেকে খুব বেশি সবজি ক্রয় করা লাগে না।’ পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের মাঝে মাঝে বিনামুল্যে বিনিময় ও বিক্রি করে কিছু টাকা সঞ্চয় করেন। যা কিনা সঞ্চয় জমা, মেয়েদের পড়ালেখার খরচসহ পারিবারিক কাজে ব্যয় করেন। শংকরী রানী নিজে একজন সফল কৃষানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেনি এর পাশাপাশি তিনি বাল্য বিবাহ বন্ধ করেছেন, স্থানীয় খালে সমবায় ভিত্তিক মৎস্য চাষে যুক্ত হয়ে পরিচিতি লাভ করেছেন। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারী সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং সে প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞানকে লাগিয়ে জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি খামার গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি আর্থিক দিক থেকে অনেকটা সাবলম্বী। তার পরিবার বর্তমানে অনেক সুখী। তিনি বিশ্বাস করেন নারী পুরুষ কোন ভেদাভেদ নেই। নারীরা ইচ্ছা করলে অনেক কিছু করতে পারে। তাই তিনি নিজেকে একজন অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী মনে করেন।
শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারীর নাম আঞ্জুয়ারা খাতুন। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ১০নং আটুলিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের দ: প: আটুলিয়া গ্রামের মো. আমজাদ আলী গাইনের কন্যা আঞ্জুয়ারা খাতুন। তার জীবনে চলার পথ ছিল অনেক কষ্টময়। তার পিতা একজন অত্যন্ত গরীব, অসহায় ও দিনমুজুর ছিলেন এবং আছেন। তিনি স্থানীয় প্রাতমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা সাধারণ বৃত্তি পেয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে আটুলিয়া আব্দুল কাদের স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে ৮ম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালীন সময়ে তার দাদা তাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের পরে তিনি পড়ালেখা করতে চাওয়ায় ও যৌতুক প্রথাসহ পারিকারিক বিভিন্ন কারণে তার ডিভোর্স হয়। ২০১১ সালে সে জেএসসি পাশ করার পর তার অভিভাবক ও গ্রামের মুরব্বীরা মিলে তার সেই স্বামীর সাথে পুনরায় বিয়ে দেয়। কিন্তু তার শ্বশুর বাড়ীতে মনোমালিন্য শুরু হয়। পড়ালেখা করতে নানা বাধা সৃষ্টি হয়। তাই তার স্বামী ও সেগ্রামের একটি সাধারণ বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করে। তার স্বামী একজন বাস শ্রমিক। সেখানে অত্যন্ত দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে তার স্বামীর অনুপ্রেরনায় ২০২২ সালে সে বিএ অনার্স ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে পাশ করে। তাহার সংসারে ৬বছর বয়সী ১টি পুত্র সন্তান রয়েছে। বর্তমানে সে শ্যামনগর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে ইউনিয়ন মহিলা উন্নয়ন কর্মী হিসাবে কর্মরত। তার চাকরি হতে প্রাপ্ত বেতনে স্বামী পুত্র নিয়ে একটি সুখী ও সুন্দর জীবন যাপন করছে। সে একজন আদর্শ জননী ও আদর্শ নাগরিক। সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে সে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। নিজের ইচ্ছাশক্তি ও অক্লান্ত পরিশ্রেমের কারনে সে নিজেকে একজন শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী মনে করেন।
সফল জননী নারীর নাম রাবেয়া খাতুন। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ৯নং বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম পোড়াকাটলা গ্রামে মো. আব্দুস সবুর গাজীর স্ত্রীর রাবেয়া খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। ২২বছর বয়সে তার বিয়ে হবার পর একটি অস্বচ্ছল পরিবারে সংসার যাপন করতে হয়। স্বামীর সীমিত আয়ে কোনভাবে দিন চলে মাত্র। কেননা স্বামী উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হয়। সাংসারিক টানাপোড়নের মাঝে একে একে ৪টি সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। সান্তানদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীতে পড়া চলমান থাকাবস্থায় তার স্বামীর ব্যবসায় লোকসানের কারণে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। সংসারিক ব্যয়, সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে থাকে সে। তৎকালীর সময়ে স্কুলে স্কুলে সরকারীভাবে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণকৃত চাল, গম খেয়ে ও পতিত-পরিত্যক্ত কৃষি জমির শাক-সবজি সংগ্রহ করে দিন ন্যুনতমভাবে চলতে থাকে তার। তাছাড়া হাঁস-মুরগী, ছাগল-ভেঁড়া পালনের মাধ্যমে সাংসারিক সম্পূরক ব্যয় মিটাতে থাকে এবং উক্ত সময়ে ঘর্ণিঝড় আইলায় সবকিছু ধ্বংস ও বিনষ্ট হয়ে যায় তার। সাংসারিক চাপ ও আর্থিক সংকট আরো বাড়তে থাকে। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী এনজিও থেকে বরাদ্দকৃত দো-চালা টিনের ঘরে বসবাস করতে থাকি। শারীরিকভাবেও স্বামী-স্ত্রী দুজনে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সামাজিকভাবে কোন কর্মসংস্থানের উপায় ছিল না। তার ও তার স্বামীর দৃঢ় ইচ্ছা ছিল সন্তানদের যতদুর সম্ভব শিক্ষায় শিক্ষিত করা। এজন্য বিভিন্ন এনজিও, মহাজনের নিকট হতে চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে সংসার, সন্তানদেরকে যথাসম্ভব পড়ালেখা চালানোর ক্ষেত্রে চেষ্টা অব্যাহত রাখে। সুদ সব বিশ থেকে পঁচিশ লক্ষ টাকা ঋণ কাঁধে নিয়ে চার সন্তানের পড়ালেখা সম্পন্ন করতে সক্ষম হই। বর্তমানে আমার সন্তানেরা স্নাকোত্তর সম্পন্ন করেছে এবং স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী দপ্তরে চাকুরী করছে। তিনি অনেক দুঃখ, কষ্ট সহ্য করে ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করেছেন। যার কারণে তিনি একজন সফল জননী নারী হিসেবে সমাজের মানুষের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা অর্জন করেছেন। সে মনে করে আমার সন্তান সততা ও নিষ্ঠার সাথে দেশের দায়িত্ব পালন করবেন এবং সুনাগরিক হিসাবে নিজেকে তুলে ধরবেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাবেন। সে তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে নিজেকে একজন সফল জননী নারী মনে করেন।
নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যে নারী তার নাম হোসনেয়ারা পারভীন। তিনি তার জীবন কাহিনীতে লিখেছেন- আমি হোসনেয়ারা পারভীন, পিতা-মো. অজিয়ার গাজী, মাতা-জাহানারা খাতুন, গ্রাম-বাইনতলা, ডাকঘর-পদ্মপুকুর, উপজেলা- শ্যামনগর, জেলা-সাতক্ষীরা। আমার প্রাপ্ত বয়সে আমার পিতা আমাকে বিবাহ দেন। আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ য়ে স্বামী সংসারে শান্তিপূর্ণভাবে সংসার করতে থাকি। আমার সংসার জীবনে আমি একটি পুত্র সন্তান ও একটি কন্যা সন্তানের জন্ম গ্রহণ করে। আমার সংসার চলাকালীন সময়ে এক পর্যায়ে আমার স্বামী আমার উপর অত্যান্ত নির্যাতন করতে থাকে।

জন্মভূমি ডেস্ক November 15, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article বনজীবীদের কষ্টের কথা কেউ কি চিন্তা করে?
Next Article সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ র ক্ষা করা বন বিভাগের জন্য চ্যালেঞ্জ

দিনপঞ্জি

January 2026
S M T W T F S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
« Dec    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
সাতক্ষীরা

ফিরে দেখা ২০২৫ সাল

By জন্মভূমি ডেস্ক 8 hours ago
জাতীয়

তারেক রহমানকে সহমর্মিতা জানালেন পাকিস্তানের স্পিকার

By জন্মভূমি ডেস্ক 10 hours ago
জাতীয়

দীর্ঘ ৪৪ বছরের ব্যবধানে আবারও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

By জন্মভূমি ডেস্ক 10 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

ফিরে দেখা ২০২৫ সাল

By জন্মভূমি ডেস্ক 8 hours ago
জাতীয়তাজা খবর

দীর্ঘ ৪৪ বছরের ব্যবধানে আবারও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

By জন্মভূমি ডেস্ক 11 hours ago
সাতক্ষীরা

জলবায়ুর ক্ষত বহন করছেন বাংলাদেশের উপকূলের নারীরা

By জন্মভূমি ডেস্ক 18 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?