সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : ভারতে যখন অতিখরা দেখা দেয়, তখন ঋণের বোঝা কমাতে না পেরে গলায় দঁড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে সেখানকার কৃষক। তবে বাংলাদেশে ভারতের ন্যায় খরা দেখা না দিলেও পরিস্থিতি তৈরী করে হয়েছে সাতক্ষীরার আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের জন্য।সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি বিভাগের সমন্বয়ে প্রকাশিত আম ক্যালেন্ডারের কারণে পথে বসতে শুরু করেছে এখানকার প্রান্তিক পর্যায়ের আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। দেশের প্রথম সারির একটি পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছর নির্ধারিত সময়ের আগে আম ভেঙে বাজারজাত করণের সময় ২২হাজার ৩০০মেট্রিকটন আম ধ্বংস করেছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য শত কোটি টাকারও বেশি। প্রশাসনের অভিযোগ, আমগুলো কারবাইড ও ইথোফেন দিয়ে পাকানো হয়েছে।অথচ সাম্প্রতিক নানা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এসেছে ইথোফেন দিয়ে ফল পাকালে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। নির্ধারিত মাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহার করা কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে না। ফলমূল ও শাকসবজিতে ফরমালিন কাজ করে না। এছাড়া আমসহ ফলমূলে প্রাকৃতিকভাবেই ফরমালিন রয়েছে যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। যেটার সাথে একমত পোষণ করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।সেখানে কারবাইড ও ইথোফেনের অভিযোগে প্রতি বছর হাজার হাজার মেট্রিক টন আম ধ্বংস করে আসছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ।অথচ, আমের আতুরঘর হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২০২১সাল থেকে আম ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেনা সেখানকার জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ। এবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭হাজার ৫০৪হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪লাখ মেট্রিকটন। সেখানে চাষকৃত ওই আম কেউ যাতে অপরিপক্ব অবস্থায় ভাঙতে বা বাজারজাত করতে না পারে সেক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং করলেও তারা কোনপ্রকার আম ক্যালেন্ডার প্রকাশ করিনি। মূলত, আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেন তারা। প্রশ্ন থেকে যায়! আমের রাজধানী খ্যাত চাপাইনবাবগঞ্জে ৩৭হাজার ৫০৪হেক্টর জমির উৎপাদিত আমের বাজার ব্যবস্থাপনা ও অপরিপক্ক আম বাজারজাত ঠেকাতে সেখানকার প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ আম ক্যালেন্ডার প্রকাশ না করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে কেন ৪হাজার ১৩৫হেক্টরের সাতক্ষীরার আম বাগানের ক্ষেত্রে আম ক্যালেন্ডার করা লাগবে? আম ক্যালেন্ডার প্রকাশ করাটা কী দায়িত্বে গাফিলতি নয়? এভাবে চলতে থাকলে গাছে আর আম থাকবেনা। পাতাগুলো ছাগলকে খাওয়াতে হবে, আর ডালগুলো জ্বালানিতে। কেননা, বিগত বছরগুলোতে সাতক্ষীরার আম বাজারজাতকরণে প্রকাশিত আম ক্যালেন্ডার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলার চাষি ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। যে সময়ে আম ক্যালেন্ডারে আম ভাঙার অনুমতি দেয়া হয়েছে সে সময়ে একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে একদিকে যেমন কৃষক ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাশাপাশি জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ফলমূলের বাজার অন্য দেশের দখলে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।