
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সময়ের ব্যবধানে কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া তাঁতের শাড়ি ছিল এক সময়ের গ্রাম বাংলার গৃহবধূদের ঐতিহ্য। তাই তো তৎকালীন বিয়ের তোড়জোড় শুরু হলেই নববধূর জন্য কিনতে হত উন্নত মানের রংবেরঙের নকশি করা তাঁতের শাড়ী। ফলে বরপক্ষকে নববধূর পছন্দের তাঁতের শাড়ি ক্রয় করতে বের হতে হতো এ গ্রাম থেকে ওই গ্রামে। যে সময় প্রায় ঘরে ঘরে তাঁত বুনুণের খটখট শব্দে মুখরিত ছিলো গ্রাম পাড়া মহল্লা জুড়ে। কারিগররা রাত জেগে শুঁতা আটানো, রং করা,কাপড়ে মাড় দেওয়া সহ নানান কাজে ব্যস্ত সময় পার করতেন। সকাল হলেই নারী-পুরুষ কারিগররা বুঁনতে বসতো তাঁত শাড়ি, গামছা এবং লুঙ্গি। এই ৩ ধরনের কাপড় বুনতে দেখা যেতো তাদের। সে সময় পেশাটি রুটি রোজগারের একমাত্র অবলম্বন হওয়ায়, সময়ের ব্যবধানে এখন শুধুই পেছনে ফেলে আসা পুরনো স্মৃতি তাঁত শিল্পের প্রতি ছিলো তাদের বেশ মনোনিবেশ। দামও ছিল ক্রেতা সাধারণের নাগালের মধ্যে। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক শিল্পের সাথে তাল মিলিয়ে উঠতে না পেরে এ শিল্পটি আজ অবলীলাক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কারিগররা জানান, এক সময় তাদের একমাত্র আয়ের উৎস ছিলো এই তাঁতশিল্প। যেটা দিয়ে তাদের সংসার খরচ মিটিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা করার খরচ জুগিয়েছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে তাঁত শিল্পের কাজে দফায় দফায় লোসকানের মুখে এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে সবাই। জীবন জীবিকার তাগিদে বেঁছে নিয়েছেন নানান ধরনের পেশা । তবে বাপ -দাদার এ পেশাকে আকড়ে ধরে রাখতে না পারলেও স্মৃতি স্বরূপ এ শিল্পের সকল পরিত্যক্ত সরঞ্জামাদি বসত ঘরের বারান্দার এক কোণে বা চালে ঝুলিয়ে রেখেছেন তারা । তথ্যানুসন্ধানে, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাহমুদপুুর,হাজরাপাড়া,ভারসা,
তৈলকুপি,যুগিপুকুরিয়া,বারাত, মীর্জাপুর সহ উপজেলায় অবস্থিত প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামের বহু বাড়িতে এই শিল্পের প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। কারিগররা জানান, বর্তমানে রং এবং শুঁতার মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ শিল্পের প্রতি পড়েছে চরম খড়গ। ফলে লাভের পরিবর্তে লোকসানের দিকটা ভারী হওয়ায় এ শিল্পের মূখ থুবড়ে পড়েছে। তাছাড়া গার্মেন্টস শিল্পের তৈরি পোশাক বাজারজাত করার কারণে এ শিল্পটির ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গতকাল সরজমিনে,উপজেলার বারত গ্রামের ৮০ বছরের বয়োবৃদ্ধ করিম মোড়ল জানান, তাঁত শিল্পের উপর সরকারের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে ২ বার লোন দেওয়া হয়েছিল। একবার সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এবং দ্বিতীয় বার সাবেক প্রেসিডেন্ট মরহুম এ,এইচ,এম এরশাদের শাসনামলে। সবমিলিয়ে বর্তমানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তোবা প্রাচীন ঐতিহ্য এ শিল্পটিকে নতুন করে দাঁড় করানো সম্ভব বলে হাজারো ভুক্তভোগী সহ এলাকার সচেতন মহলের এমনটি ধারণা।