
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর:: রোগীর সেবা দেওয়ার প্রধান কেন্দ্র, তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এখন যেন নিজেই অসুস্থ। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা, চিকিৎসক ও কর্মচারীদের খামখেয়ালি মনোভাব এবং অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম চুরি হলেও সে বিষয়ে কোনো কর্মকর্তার কাছে কোনো তথ্য নেই, যা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার চরম উদাসীনতার চিত্র তুলে ধরে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরকারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও তিনি এখনো স্বপদে বহাল আছেন। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি বাসভবনে (কোয়ার্টার) না থেকে তিনি নিজ বাসা চুকনগর থেকে আসা-যাওয়া করেন। এমনকি সপ্তাহে মাত্র দুই থেকে তিন দিন তিনি অফিসে আসেন এবং পূর্ণ সময় দায়িত্ব পালন করেন না। এর ফলে সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
১৮ আগস্ট দুপুরের দিকে সরজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের আউটডোরে যেখানে ৭জন চিকিৎসকের থাকার কথা, সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাত্র তিনজন। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই থেকে তিনশো রোগী সেবা নিতে আসেন, কিন্তু চিকিৎসকের স্বল্পতার কারণে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। রোগী আতাউর রহমান অভিযোগ করে বলেন, “আমাদের যত সমস্যাই থাকুক না কেন, একজন চিকিৎসকই (ডা. খালিদ হাসান নয়ন) সবাইকে প্রেসক্রিপশন দেন।”
হাসপাতালে ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। রোগী আব্দুল হামিদ জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ নিতে গেলে বলা হয়, “স্টকে কোনো ওষুধ নেই।” ফয়সাল নামের আরেকজন রোগী অভিযোগ করেন, “যে কোনো পরীক্ষা করাতে বললেই বাইরে থেকে করিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়।” অথচ, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরকার দাবি করেন, তাদের স্টকে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত আছে। তার এই বক্তব্যের সাথে রোগীদের অভিজ্ঞতার কোনো মিল নেই।
কর্মস্থলে চারজন চিকিৎসকের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. রাজিব সরকার নানা অজুহাত দেখান। তিনি বলেন, ডা. ফয়সাল সরদার ছুটিতে আছেন, ডা. জ্যোতির্ময় সরকার এসে চলে গেছেন, ডা. নাজমুন নাহার বাইরে আছেন, এবং ডা. মানোস কুমার সিংহ এক বছরের ছুটিতে আছেন। তবে এসব অনুপস্থিতি পূর্ব অনুমোদিত কিনা, সে বিষয়ে তিনি কোনো স্পষ্ট উত্তর দেননি।
বারবার চেষ্টা করেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপা রানীর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায়, তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যাবে