By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
Reading: সাতক্ষীরা পৌরসভা এখন একটি দীর্ঘশ্বাস: জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য মৃত্যু নয়, বেঁচে থাকাই শাস্তি
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > সাতক্ষীরা পৌরসভা এখন একটি দীর্ঘশ্বাস: জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য মৃত্যু নয়, বেঁচে থাকাই শাস্তি
সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা পৌরসভা এখন একটি দীর্ঘশ্বাস: জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য মৃত্যু নয়, বেঁচে থাকাই শাস্তি

Last updated: 2025/07/09 at 2:00 PM
করেস্পন্ডেন্ট 3 days ago
Share
SHARE

সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর: ১৯৮৮ সালের এক শীতল সকালে, শ্যামনগরের এক বিধ্বস্ত গ্রামে দাঁড়িয়ে ছিল বারো বছরের এক কিশোরী। নাম তার আমিরুন বেগম। ঘূর্ণিঝড়ে ভেসে যাওয়া ঘর, নিঃস্ব পরিবার আর অশ্রুসিক্ত চোখে সে বুঝে গিয়েছিল—এই দেশ, এই মাটি তাকে আর আগলে রাখবে না। স্বামীর হাত ধরে যখন বস্তিতে আশ্রয় নেন, তখনও জানতেন না, সামনে অপেক্ষা করছে দীর্ঘতর এক দুঃস্বপ্ন।
৩৭ বছর কেটে গেছে। কিন্তু আমিরুনের জীবন থেমে আছে সেই প্রথম বাস্তুচ্যুতির দিনে।
তার ঘরে নেই বিদ্যুৎ, নেই স্যানিটেশন, নেই নিরাপদ পানি। রাত হলে একটিমাত্র কেরোসিন ল্যাম্পের আলোতে কাঁপে তার ছায়া, যেমন কাঁপে তার ভবিষ্যতের সমস্ত সম্ভাবনা। ৬ সন্তানের কেউ দেখেন না তাকে।
“পায়ে বল থাকলে ভিক্ষা করি, না থাকলে খালি পেটে শুয়ে থাকি। বস্তির এ মাথা থেকে ও মাথা কেউ জানে না, কে বাঁচে, কে মরে,”-নীরব গলায় বলেন আমিরুন।
স্বামীকে হারিয়েছেন দুই যুগ আগে। কিন্তু এই রাষ্ট্র এখনো খোঁজ নেয়নি তার। কোনো বিধবা ভাতা নেই, স্বাস্থ্যসেবা নেই, এমনকি কেউ জানতেও চায় না-তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কেমন আছে এই নারী। তার জীবনের প্রতিটি দিন যেন রাষ্ট্রীয় নিষ্ঠুরতার নতুন অধ্যায়।
এবং এই গল্প কেবল আমিরুনের নয়-এই গল্প সাতক্ষীরার বাস্তুচ্যুত এক লাখ মানুষের।
১৯৮৮ সালের সেই বিভীষিকাময় ঝড়ে শ্যামনগরের নিঃস্ব ঘরে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেছিলো অনেক স্বপ্ন। দশ বছরের নববধূ আমিরুন বেগম তখনও বুঝে উঠতে পারেননি-ঘর ভাঙার অর্থ কী। সেই থেকে শুরু হয় তার জীবনের একপাক্ষিক যুদ্ধ-যেখানে প্রতিপক্ষ ছিলো অনাহার, অন্ধকার আর রাষ্ট্রীয় অবহেলা।
৩৭ বছর ধরে তিনি আটকে আছেন সাতক্ষীরা পৌরসভার কুখরালী বলফিল্ড বস্তির একচালা ঘরে। বিদ্যুৎ নেই, ফ্যান নেই, রোদ বা বৃষ্টির দিনে ছাউনির টিন কাঁপে, আর রাত হলে একটিমাত্র ল্যাম্পের বাতিতে জ্বলে ওঠে তার জীবনের অন্তহীন ক্লান্তি।
“পায়ে বল থাকলে ভিক্ষা করি। না থাকলে উপোস করে ঘুম,”-এই বাক্যেই বন্দি তার ৩৭ বছরের বেঁচে থাকা। স্বামী হারিয়েছেন দুই যুগ আগে, রাষ্ট্র দিয়েছে কেবল নীরবতা।
ইব্রাহীমের ঘরে আলো নেই, ছেলের শরীরে জীবন নেই:
ইব্রাহীম হোসেন জন্ম নিয়েছেন বস্তিতে, নদীভাঙনে উদ্বাস্তু এক পিতার সন্তান। এখন তিনিও বন্দি-এক প্রতিবন্ধী সন্তানের কান্না আর রাষ্ট্রের নীরবতার ভিতর।
ইব্রাহীমের ৪ বছর বয়সী ছেলে নয়ন গাজীর শরীরে পুষ্টি নেই, চোখে দৃষ্টি আছে, কিন্তু ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সারাদিন মাটিতে পড়ে থাকে-একটা শরীর, যেটা কেবল শ্বাস নেয়, বাঁচে না।
“ভাতার টাকায় একদিনের ওষুধ হয় না,”-বলতে বলতে গলা কাঁপে ইব্রাহীমের। হুইলচেয়ার নেই, চিকিৎসা নেই।“
ইব্রাহীম বলেন, “ঘরে জ্বলে একমাত্র বাল্ব-সেটিও করুণা টানা তারে। অন্যের বাসা থেকে সাইট লাইনে বিদ্যুৎ আসে, মাসে ১০০ টাকার বিনিময়ে। ফ্যান, ফ্রিজ নিষিদ্ধ। মোবাইল চার্জ দেওয়া যায়—কিন্তু, শর্ত একটাই—বাল্ব যেন বেশি জ্বলে না। আলো নয়, অভাবই এই ঘরের নিয়তি।”
ডলি শান্তা: পানি মানেই লড়াই:
শহর যেখানে বোতলজাত পানি টেবিলে উঠে, সেই শহরেরই আরেকপাশে পিপাসার নাম-সাতক্ষীরা। সেখানেই বাস করেন ডলি শান্তা, সাতক্ষীরা পৌর এলাকার এক বস্তিতে। তার সকাল শুরু হয় আধা কিলোমিটার দূরের টিউবওয়েলে। তিন শতাধিক পরিবারের ভিড়ে পানির লাইনে দাঁড়িয়ে।
এক কলস পানির জন্য প্রতিদিন হারান ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আর সময় হারালে কাজ হারান। যার প্রভাব পড়ে সংসারে।
“কাজ করতে পারি, ঘাম ঝরাতে পারি-কিন্তু মালিকের চোখে আমি ‘পানি আনতে দেরি করা মেয়েমানুষ’। একটা কলসের জন্য অনেক বার কাজ চলে গেছে।”
সরেজমিন চিত্র: কংক্রিটের শহরের নিচে চাপা পড়া মানুষ:
শুধু আমিরুন-ইব্রাহীম কিংবা নন। বরং সাতক্ষীরা পৌরসভার ৪৭ বস্তিতে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা প্রায় একলাখ মানুষের গল্প একই ধরণের। এসমস্ত বস্তিবাসীদের একটি বড় অংশ এসেছে উপকূলীয় ও নদীভাঙন প্রবল অঞ্চল থেকে। সহায় সম্বল হারিয়ে বেঁচে থাকার আশা নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে বাঁচার জন্য তাদের অধিকাংশ বছরের পর বছর ধরে সাতক্ষীরা পৌর শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় কোনভাবে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু অভাব, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, বন্যা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তাদের পিছু ছাড়েনা। কয়েক ফুটের ছোট্ট ঘরেই রান্না বান্না খাওয়া ঘুম এক ঘরেই । আর সে ঘরে বন্দি তাদের কষ্টের জীবন।
ক্সপানি সংকট: বেঁচে থাকাটাই বিলাসিতা
সাতক্ষীরার বস্তিগুলোতে সুপেয় পানি পাওয়াই সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। প্রতিটি টিউবওয়েলের ওপর নির্ভর করে শতশত পরিবার। গ্রীষ্মকালে টিউবওয়েল শুকিয়ে যায়। তখন জারের পানি কিনতে হয় ২৫-৩০ টাকা দিয়ে। সেই পানি দিয়েই রান্না। আর নোংরা অপরিচ্ছন্ন পানিতে গোসল, প্রগ্রাব–পায়খানা—সব কিছু হয়।
* স্যানিটেশন: স্বাস্থ্য নয়, অপমান:
সাতক্ষীরা পৌর এলাকার প্রতিটি বস্তিতে শৌচাগারের অবস্থা ভয়াবহ। অধিকাংশই রিংবিহীন, খোলা পরিবেশে, পলিথিন বা টিন দিয়ে ঘেরা। নারীরা রাতে টয়লেট যেতে ভয় পান, আর শিশুদের জন্য এটি জীবনের ঝুঁকি।
কামালনগরের এক গৃহবধূ জানান, “গর্ভবতী অবস্থায় টয়লেটের কাছে পড়ে গিয়ে দুইবার রক্তপাত হয়েছে। ডাক্তার বলেছিল বিশ্রাম দরকার, কিন্তু বিশ্রামের জায়গা কোথায়?”
* স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংকট: ধুকে ধুকে বেঁচে থাকা
বস্তিগুলোতে শিশুরা জন্ম নেয়, কিন্তু বড় হয় না-ওজন কম, শরীর দুর্বল, চোখে অনাগত অসুখের ছায়া। ইজঅঈ টৎনধহ ঐবধষঃয ঝঁৎাবু অনুযায়ী, সাতক্ষীরা পৌরসভার বস্তিগুলোর অন্তত ৪৬% শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। জন্ম থেকেই তাদের শরীর হয় লড়াইয়ের মাঠ-ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড যেন ঘরোয়া রোগ। অপুষ্টি শুধু পেটের ক্ষুধা নয়, এটি দৃষ্টি নষ্ট করে, শিখতে দেয় না, জীবনকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল বাশার আরমান বলেন, “বস্তির শিশুরা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অব্যবস্থা চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম অসুস্থ, দুর্বল ও বিপন্ন হবে। এটা শুধু স্বাস্থ্য সমস্যা না, এটা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন।”
* কর্মসংস্থান ও আয় সংকট: ঘামের বদলে অপমান
এই বস্তিগুলোর অধিকাংশ পুরুষ ও নারী কাজ পান না প্রতিদিন। কেউ রিকশা চালান, কেউ দিনমজুরি করেন, কেউ কেউ হকারি। কিন্তু আয় অস্থায়ী। দিনে ২০০-৩০০ টাকা, কোনদিন খালি হাতে ফিরতে হয়। দিনে যেটা পান সেই টাকায় খাওয়া, ভাড়া, ওষুধ, স্কুল—সবকিছু সামলানো অসম্ভব।
ইব্রাহীম হোসেন বলেন, “সকাল ৬টা থেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকি। কাজ পাই না। ছেলে প্রতিবন্ধী, বছরে ৩বার ভাতা পাই। সেটা দিয়েও সংসার চালাতে হয়।‘ আর এভাবে ৪বছর বয়সি প্রতিবন্ধী নয়নের তিনবছর ধরে পাওয়া ভাতার টাকাতে ইব্রাহীমের সংসার চলছে।”

* সুদের চক্র: পুঁজি নয়, বেঁচে থাকার মূলধনই বন্ধক:
সাতক্ষীরা পৌর এলাকার বস্তিবাসীরা চিকিৎসা, খাবার কিংবা স্কুলের ফিস—সবকিছুর জন্যই ঋণ করেন। তাদের কাছে ঋণ মানে করুণা নয়, এক জ্যান্ত দাসত্ব। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বস্তিবাসীরা সহায়তা পাননা। ১০০০ টাকা ধার নিলে, সেখানে সুদ দিতে হয়। কেউ সুদের টাকা ফেরাতে ফেরাতে শেষমেষ নিজের শরীরটাই বিকিয়ে দিতে বসেন। এই চক্র থেকে কেউ বের হতে পারেন না-কারণ ঋণ থেকে বেরিয়ে আসা মানে বাঁচা নয়, বরং অস্তিত্ব হারানো।
কেউ এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে হাঁস-মুরগি পালন শুরু করেন, কেউ ছোট চায়ের দোকান দেন। কিন্তু পুঁজি বাড়ার আগেই কিস্তি এসে দাঁড়ায় দরজায়-জীবন থেমে যায়, ব্যবসা ভেঙে পড়ে।
সাতক্ষীরা শহরের বস্তি এলাকাগুলোতে সুদের চক্রে আটকে আছে শতশত পরিবার। একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, “ঋণ করে সরকারি জমিতে একচালা ঘর বা দোকান তুলছিলাম। কিন্তু গতবছর প্রশাসন সেই ঘর-দোকান উচ্ছেদ করে দেয়। এখন কিস্তির টাকা দিতে না পেরে বাড়ি ফেলে পালিয়ে থাকতে হয়। সুদের লোক ঘরে আসলে, শুধু টাকা না-আমাদের বেঁচে থাকার জায়গাটুকুও আর থাকে না।”
এই শহরে আশ্রয় নেই, ব্যবসা নেই, আস্থাও নেই।
থেকে যায় শুধু কিস্তির খাতা আর ভাঙা ঘরের স্মৃতি। এনিয়ে অনেকের মাঝে আক্ষেপ থাকলে বাস্তবতাকে মেনে এই জীবনে অভ্যস্ত হয়েছেন তারা।
* শিক্ষা সংকট: ভবিষ্যৎহীন প্রজন্ম
বস্তির শিশুরা স্কুলে যায় না বললেই চলে। সরকারি স্কুলে জায়গা হয় না, বেসরকারি স্কুলে ফি দেওয়া অসম্ভব। মেয়েদের জন্য নিরাপদ যাতায়াত নেই বলে ১২-১৩ বছরেই তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।
সাতক্ষীরা প্রাণসায়ের খালধারের বস্তিতে বাস করা আজিবার রহমান বলেন, “আমার মেয়ে ক্লাস থ্রি তে থাকতে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ের বয়স এখন সতেরো। তার কোলে তিনবছরের সন্তান। তিনি বলেন, ভাবছিলাম মেয়েটারে পড়াবো, কিন্তু ছেলেরা উত্ত্যক্ত করতো। সম্মানের তাগিদে মেয়েকে বিয়ে দেয়।”
* প্রাণসায়েরে এখন গ্রোত নয়, শোক বইছে
যে খালে একসময় জল বইত, এখন সেখানে বইছে বস্তির গন্ধ, গ্লানি আর গর্হিত রাষ্ট্রের মুখোশহীনতা।
সাতক্ষীরা শহরে বস্তিগুলোর জন্য নেই কোনো বর্জ্য ব্যবস্থা। যা পচে, যা দগদগে, যা সমাজ ছুঁতে চায় না- তার বড় একটি অংশ ফেলে দেওয়া হয় প্রাণসায়ের খালে।
এখন আর এটা খাল নয়-একটা চলমান শবগৃহ।
প্লাস্টিক, ডায়াপার, পঁচা খাবার, মল-মূত্র আর দিনের দুবার সেই গন্ধভরা স্রোত ফিরে আসে জোয়ারে। শহরের মিনারেল ওয়াটার ঘরে ঢোকে, আর খালে ভেসে চলে গরিবের অপমান। এই পানিতে গোসল করে শিশুরা, খেলে, হাসে, কাশে, ঘুমায়ৃ এবং চুপচাপ অসুস্থ হয়।
সাতক্ষীরা কুখরালী এলাকার খালধারের মানুষেরা বলেন, “খাল ছাড়া পথ নাই। ওখানেই ধুই। এরপর জ্বর, পুঁজ, গা-পোড়া লাগে। কিন্তু কিছুতো করার নেই!”
*
সাতক্ষীরার বিভিন্ন বস্তী এলাকায় যেয়ে দেখা যায়, এখানে টয়লেট মানে নয় গোপনতা, নয় নিরাপত্তা-বরং এক অমানবিক খাঁচা। রিংবিহীন গর্ত, চারদিকে পলিথিনে মোড়া লজ্জার দেয়াল। মেঝেতে পানি, কাদা, এবং ভেসে থাকা মানুষের অপমান। সকালে যেতে লজ্জা, রাতে যেতে ভয়। মায়েরা তাদের কিশোরী মেয়েকে দুপুরে যেতে দেয় না-“দিনের আলোয় ওখানে গেলে, মেয়েটা আর মেয়ে থাকে না।”
এই টয়লেটগুলো কেবল মলমূত্র রাখে না-এগুলো গিলে ফেলে নারীর সম্মান, শিশুর নিরাপত্তা, আর মানুষের মর্যাদা।
শৌচাগার নয়, এ যেন প্রতিদিনের এক বোবা অত্যাচার-যেখানে প্রতিটি প্রবেশ এক অপমান, আর প্রতিটি বের হওয়া এক ক্ষত।
ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প: অন্ধকারেও সম্ভাবনার আলো
সব অন্ধকারে কিছু মানুষ জ্বলে ওঠেন আশার মতো। পারকুখরালী এলাকার বস্তির ইয়াসমিন খাতুন ছিলেন একসময় গৃহবধূ, স্বামীর অকার্যকর সংসারের বোঝা। এখন নিজের ঘরের সামনে গড়ে তুলেছেন পুষ্টি বাগান, পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্নার কাজ করেন।
৫ হাজার টাকার এনজিও ঋণেই শুরু করেছিলেন।
আজ দিনে আয় হয় ৫০০-১০০০ টাকা।
“স্বামী আয়ে সংসার চলছিল। বাধ্য হয়ে ১২ বছরের মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম। তারপরেও সংসারে স্বচ্ছতা ফিরিনি। একদিন ভাবলাম-এই ঘর বাঁচাতে হলে আমাকে দাঁড়াতেই হবে। এখন কিস্তিও দেই, কিছু জমেও যাচ্ছে।” – বলেন ইয়াসমিন।
একই এলাকার আজমির হোসেন। অনেক কষ্টে টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ নিয়ে হয়েছেন একজন প্লাম্বার (স্যানিটারি মিস্ত্রি)। আগে ছিলেন বেকার, এখন দিনে আয় করেন ৫০০-৭০০ টাকা।
“সবসময় কাজ থাকে না। কিন্তু একটা জিনিস বুঝেছি—নিজের হাতের কাজ থাকলে কেউ ঠকাতে পারে না।” – বলেন আজমির।
এই গল্পগুলো ছোট, কিন্তু বার্তা বড়: সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ আর সম্মান পেলে, প্রান্তিকরাও পেছনে থাকেন না-তারা উঠতে জানে। যারা অন্ধকারে জন্মায়, তারাও আলো বানিয়ে নেয়।
সাতক্ষীরার বাস্তুচ্যুতরা কী জানেন, আর কী জানেন না:
সাতক্ষীরা শহরের যেসব এলাকায় জলবায়ু বাস্তুচ্যুত মানুষজন বসতি গড়েছেন-সেগুলো শহরের মানচিত্রে থাকলেও, নাগরিক সেবার খাতায় প্রায় অদৃশ্য। বস্তির মানুষ জানেন না কোথায় গেলে পানীয় জল মিলবে, কোথায় গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে, আর কিভাবে সরকারি সহায়তা পাওয়ার আবেদন করতে হয়।

সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদৌস বলেন— “সাতক্ষীরা শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জমির সংকট, পুরনো অবকাঠামো আর বাজেটের ঘাটতি আমাদের কাক্সিক্ষত সেবা দিতে দিচ্ছে না। যেখানে ডাস্টবিন বসাতে চাই, সেখানেও স্থানীয়ভাবে বাধা আসে।”
তিনি আরও জানান, পৌরসভা এখন উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করছে এবং মন্ত্রণালয়কে বলেছে যেন এ জন্য বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হয়।
গবেষক ও উন্নয়ন সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গি:
শিশুদের পুষ্টি, নারীর স্বনির্ভরতা, নিরাপদ পানি ইত্যাদি নিয়ে কাজ হয় বটে, কিন্তু তা প্রকল্পভিত্তিক। প্রকল্প শেষ মানেই সহায়তা শেষ। স্থানীয় বাস্তবতা নীতিতে প্রতিফলিত হয় না-এটাই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।
বস্তিবাসীর উপলব্ধি ও অজ্ঞতা:
অনেকে জানেন না, তারা কোথায় অভিযোগ জানাতে পারেন। কিভাবে চিকিৎসার ভাতা পাওয়া যায়, সেটাও স্পষ্ট না। কেউ কেউ নিজের চেষ্টা ও এনজিওর সহায়তায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন—তবে এসবই বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ।
কিন্তু অনেকেই জানেন না-তাদেরও আছে বলার অধিকার, জানার অধিকার
রাষ্ট্রীয় আইন কী বলছে?
বাংলাদেশের সংবিধান (ধারা ১৫) অনুযায়ী:
“প্রত্যেক নাগরিকের জন্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।” আর ২০০১ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী: “পুনর্বাসন ছাড়া কোনো বস্তি উচ্ছেদ করা যাবে না।”
ঘরহীনদের নামে নীরব রাষ্ট্র-কী হতে পারে সমাধান:
মাধব চন্দ্র দত্ত, সাতক্ষীরার বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক নেতা, দীর্ঘদিন ধরে বস্তিবাসীর মানবিক অধিকার ও পুনর্বাসনের দাবিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “সাতক্ষীরায় উপকূল ও নদীভাঙন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বস্তিতে ঠাঁই নেওয়া মানুষরা এখন রাষ্ট্রীয় সেবাব্যবস্থার বাইরে। তারা নাগরিক, কিন্তু নাগরিক হিসেবে গণ্য নন।
এই বাস্তুচ্যুতি শুধুই পরিবেশগত নয়, এটি একটি জটিল মানবিক সংকট-যেখানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, নিরাপত্তা ও মর্যাদা সবই অনিশ্চিত। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান বলছে, ‘অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে সিডিজি (ঝউএ), সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক ও টঘ এঁরফরহম চৎরহপরঢ়ষবং ড়হ ওহঃবৎহধষ উরংঢ়ষধপবসবহঃ–এ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেখানে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
কিন্তু সাতক্ষীরা আজ সেই প্রতিশ্রুতির বিপরীতে দাঁড়িয়ে এক নীরব বিপর্যয়ের নাম।
এই নীরবতা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়-এটি আন্তর্জাতিক দায় অস্বীকারের সমান। সাতক্ষীরার বাস্তুচ্যুতরা এখন আমাদের উন্নয়ন নীতির আয়নায় সবচেয়ে স্পষ্ট অথচ উপেক্ষিত প্রতিবিম্ব। তাদের পাশে দাঁড়ানো এখন আর দয়ার বিষয় নয়, এটি রাষ্ট্র ও বিশ্বের যৌথ নৈতিক, সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক দায়িত্ব।”

করেস্পন্ডেন্ট July 9, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article নড়াইলে মাদক ও দেশীয় অস্ত্রসহ যুবক আটক
Next Article সাতক্ষীরা ‌সমাজকর্মীর বাড়িতে চেতনানাশক খাইয়ে ডাকাতি

দিনপঞ্জি

July 2025
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
« Jun    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত সাতক্ষীরা: কী করলে রক্ষা মিলবে?

By করেস্পন্ডেন্ট 10 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

আজ তালার জালালপুর গণহত্যা দিবস

By করেস্পন্ডেন্ট 11 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

ত্বকের যত্নে মধু, জেনে নিন ব্যবহারের নিয়ম আপনিও হতে পারেন সুন্দরী

By করেস্পন্ডেন্ট 14 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত সাতক্ষীরা: কী করলে রক্ষা মিলবে?

By করেস্পন্ডেন্ট 10 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

আজ তালার জালালপুর গণহত্যা দিবস

By করেস্পন্ডেন্ট 11 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

ত্বকের যত্নে মধু, জেনে নিন ব্যবহারের নিয়ম আপনিও হতে পারেন সুন্দরী

By করেস্পন্ডেন্ট 14 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?