
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সাতক্ষীরা পৌরসভা অধিকাংশ স্থান এখনো পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে কোথাও কোথাও এক ফুট থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানি জলবদ্ধতা রয়ে গেছে । এর প্রভাব পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর । প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজে যেতে অনেক লাঞ্ছনা বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে । অথচ এর বিকল্প কোন চিন্তা এখনো পর্যন্ত নির্ণয় করা যায়নি । ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে অতি দ্রুত যদি সাতক্ষীরা শহরের জলবদ্ধতা নিরেশননা হয় তাহলে নারী শিশু বৃদ্ধা সহ মানুষের জীবনে নানান রোগব্যাধির সৃষ্টি হবে বাঁধাকরস্থ হবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ।আষাঢ়ের শেষ ১৫ দিনের টানা বর্ষনে সাতক্ষীরা পৌরসভার নিম্মাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। কোথাও কলাগাছের ভেলা, কোথাও আবার কর্কশিটের ভেলা বানিয়ে শিশু ও জিনিসপত্র নিয়ে যাতায়াত করছেন পানিতে আটকেপড়া লোকজন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌর এলাকার হাজারো পরিবার। একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সদর উপজেলার নিম্মাঞ্চলে।
এদিকে পৌর সভার নিম্মাঞ্চলের জলাবদ্ধা নিরসনে সাতক্ষীরার জেলা জলবদ্ধতা নিরসন কমিটির এক সভা বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ এর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিষ্ণুপদ পাল, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ সাইফুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, জেলা সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক মোঃ ওমর ফারুক, সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমেদ, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী ফরিদা আক্তার বিউটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক জেলা আহ্বায়ক আরাফাত হোসেন, মুখপাত্র মাহিনী তাবাসসুম, জেলা শিক্ষা অফিসার মুহা. আবুল খায়ের প্রমুখ।
সভায় বক্তারা পৌরসভার নিম্মাঞ্চলের জলাবদ্ধতার প্রধান সমস্যা হিসেবে খাল, নদী দখল, দূষণ, অবৈধ স্থাপনা ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে চিহ্নিত করে তার প্রতিকারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণসহ জনসচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রসঙ্গতঃ সাগরে নিম্মচাপের প্রভাবে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌরসভার কামালনগর, ইটাগাছা, পলাশপোলের মধুমোল্লারডাঙি, মেহেদীবাগ, রসুলপুর, বদ্দিপুর কলোনি, রইচপুর, মধ্য কাটিয়া, রথখোলা, রাজারবাগান, গদাইবিল, মাঠপাড়া, পার-মাছখোলা ও পুরাতন সাতক্ষীরার মতো নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পৌরসভার ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা। বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহর সাতক্ষীরা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এই শহরটি এক ভয়াবহ মানবিক সংকটের সম্মুখীন হয়, যার নাম জলাবদ্ধতা। সামান্য থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতেই শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায় এবং সৃষ্টি হয় এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি অফিস পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকে মাসের পর মাস। এই জলাবদ্ধতা কেবল জনদুর্ভোগই বাড়ায় না, শহরের আর্থ-সামাজিক কাঠামো, জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উপরও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একটি আধুনিক শহরের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে সাতক্ষীরার মানুষ যেন এক প্রকার বন্দিজীবন কাটাতে বাধ্য হয় বছরের বেশির ভাগ সময়। এই ভয়াবহ সমস্যার মূলে রয়েছে প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণের এক জটিল মিশ্রণ। আজকের আলোচনায় আমি আপনাদের তুলে ধরবো সাতক্ষীরা শহরের জলাবদ্ধতার কারণ ও প্রতিকারের বাস্তব উপায় সমূহ।সাতক্ষীরা শহরের জলাবদ্ধতার কারণগুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট। যদিও প্রাকৃতিক কারণগুলো একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় দায়ী, তবে মানবসৃষ্ট কারণগুলোই এই সমস্যাকে ভয়াবহ রূপ দিয়েছে।প্রাকৃতিক কারণ:ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে সাতক্ষীরা অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। স্বল্প সময়ে অতি ভারী বর্ষণের কারণে পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যা আকস্মিক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। বর্ষা মৌসুমে মাত্র কয়েকদিনে টানা বর্ষণে কয়েক শত মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার ধারণক্ষমতার বাইরে চলে গিয়ে শহর জুড়ে স্থায়ী ও অস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে।সাতক্ষীরা শহরের পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথ হলো বেতনা, মরিচ্চাপ, ও কপোতাক্ষের মতো নদ-নদী গুলো। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে উজানের পলি জমে এই নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। নাব্যতা হারিয়ে নদীগুলো এখন পানি প্রবাহের পরিবর্তে উল্টো জলাবদ্ধতা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। ভরা মৌসুমে নদীগুলো শহরের পানি নিষ্কাশন করতে পারে না, বরং অনেক সময় নদীর পানিই শহরে প্রবেশ করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। গত কয়েক বছরে এই নদীগুলো পুনরায় খনন করা হলেও দুর্নীতি ও ব্যক্তি-স্বার্থের কারণে নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা যুগোপযোগী করা হয়নি। ফলে এই নদী গুলো জলাবদ্ধতায় পানি নিষ্কাশনে তেমন কোনও অবদান রাখতে পারছে না।মানবসৃষ্ট কারণ:দ্রুত নগরায়নের ফলে সাতক্ষীরা শহরে কংক্রিটের অবকাঠামো বেড়েছে বহুগুণ। নতুন নতুন ভবন, রাস্তাঘাট ও স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের পথ বা জলাধার সংরক্ষণের বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি মাটিতে শোষিত হওয়ার সুযোগ পায় না এবং কংক্রিটের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিচু এলাকাগুলোকে দ্রুত প্লাবিত করে। গত কয়েক বছরে শহরের খুব দ্রুত অবকাঠামোগত উন্নয়ন বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু সেই তুলনায় সরকারি বা ব্যক্তিগত ভাবে পানি নিষ্কাশনের কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।সাতক্ষীরা পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত পুরনো, অপ্রতুল এবং অপরিকল্পিত। শহরের সমস্ত এলাকার জন্য সমন্বিত কোনও ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নেই। যেটুকু আছে তারও নিয়মিত সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব প্রকট। দীর্ঘ বছর পরিষ্কার করার অভাবে অনেক ড্রেন ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে পানি প্রবাহের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, ড্রেন নির্মাণে প্রযুক্তিগত ত্রুটি থাকায় তা পানি নিষ্কাশনের বদলে উল্টো পানি আটকে রাখছে। শহরের নতুন নতুন এলাকায় আবাসিক ভবন ও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সেই সব এলাকায় কোনও ড্রেনেজ সিস্টেম তৈরি না করায় পানি এক স্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তর হতে পারছে না।
সাতক্ষীরা শহরের পানি নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক আঁধার ছিল এর আশপাশের অসংখ্য খাল ও বিল। কিন্তু প্রভাবশালী ভূমিদস্যু এবং স্থানীয়দের একটি অংশ এসব খাল ও বিল দখল করে অবৈধভাবে মাছের ঘের, স্থাপনা ও বাড়িঘর নির্মাণ করেছে। শহরের পানি ধারণ ও নিষ্কাশনের এই প্রাকৃতিক পথগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি যাওয়ার কোনও জায়গা খুঁজে পায় না। বিশেষ করে, শহরের ইটাগাছা, কুখরালি, গড়েরকান্দা, রাজারবাগান, মেহেদীবাগ, মাছখোলা, লাবসা, মাগুরা প্রভৃতি এলাকার বিলগুলোর পানি বেরোনোর পথ আটকে দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। ফলে শহরের পানি কোথাও সরতে না পেরে শহরেই আটকে থাকছে। এক সময় বর্ষাকালে শহরের সকল পানি বিভিন্ন বিলে জমা হতো এবং এই বিল গুলোই ছিল শহরের সবচেয়ে বড় জলাধার, কিন্তু এখন বিল গুলোতে ঘের করার কারণে সারাবছর বিল গুলো পানিতে ভরা থাকে। ফলে বর্ষাকালে নতুন এই বিশাল পানির উৎস বিলে নিষ্কাসন হতে না পেরে সকল পানি শহরেই আবদ্ধ হয়ে থাকে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সময়ে সরকার শত শত কোটি টাকার নদী ও খাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। কিন্তু ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এসব প্রকল্পের সুফল মেলেনি। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের ঠিকাদাররা নদীর তলদেশ খনন না করে শুধু পাড় উঁচু করে গভীরতা দেখিয়েছে, খালের প্রশস্ততা কমিয়ে ফেলা হয়েছে। নদী ও খাল গুলো এমন ভাবে খনন করা হয়েছে যে, শহরের ভূমির স্তরের চেয়ে নদীর পানির স্তর অনেক উপরে। ফলে শহরের পানি নদী বা খালে প্রবাহিত হতে বাধা প্রাপ্ত হয়।
সাতক্ষীরা শহরে আইন মানা ও আইন প্রয়োগ করার বড় অভাব রয়েছে। এখানের জনসাধারণ ইচ্ছে করেই সরকারি জমি দখল করে ঘর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এখানের নাগরিকরা নতুন অবকাঠামো তৈরির সময় আইনের কোনও ভ্রুক্ষেপ করে না। আর এর জন্য দায়ী স্থানীয় প্রশাসন। মানুষেরা রাস্তা, খাল, নদী দখল করে স্থাপনা তৈরি করলেও প্রশাসনিক ভাবে তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়া হয় না। মানুষ আবাসিক বাড়ি বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গুলো সরকারি রাস্তার জমি এমন ভাবে দখল করে স্থাপনা তৈরি করে যাতে পরবর্তীতে সেই রাস্তার ধার দিয়ে আর প্রশস্ত ড্রেন তৈরি করার জায়গা থাকে না। আর এই অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন বা পৌরসভা কোনও সময় অভিযান পরিচালনা করে না। সাতক্ষীরা শহরের বেশিরভাগ আবাসিক বাড়ি ও দোকান সমূহ সরকারি রাস্তার জায়গায় স্থাপিত শুধু দুর্বল আইন প্রয়োগের অভাবে। এখানের স্থানীয় ও প্রভাবশালীদের কাছে প্রশাসন সর্বদায় জিম্মি।
পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মিত শহরের স্লুইসগেটগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশই অকেজো হয়ে পড়েছে। অনেক স্লুইসগেটের মুখে পলি জমে বা অবৈধ দখলের কারণে সেগুলো চালু করা যায় না। ফলে জোয়ারের সময় পানি প্রবেশ আটকাতে বা বৃষ্টির পর পানি নিষ্কাশন করতে এই গেটগুলো কোনও কাজেই আসছে না। আবার অনেক প্রভাবশালীর ঘেরের পানি প্রবাহের কারণে স্লুইসগেটগুলো সারা বছর অকেজো করে রাখা হয়।
শহরের ড্রেন ও খালে নির্বিচারে প্লাস্টিক বর্জ্য, পলিথিন ও গৃহস্থালির আবর্জনা ফেলার কারণেও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই বিষয়ে নাগরিক সচেতনতার যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হয়, যা জলাবদ্ধতা সংকটকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
জলাবদ্ধতা দূর করার বাস্তব উপায়:
সাতক্ষীরা শহরকে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে একটি সমন্বিত, দীর্ঘমেয়াদী এবং টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার দ্রুত বাস্তবায়ন জরুরি। নিচে এর প্রতিকারের কিছু উপায় আলোচনা করা হলো:
টিআরএম প্রকল্প হতে পারে সাতক্ষীরার নদীগুলোকে বাঁচানোর সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত উপায়। এই পদ্ধতিতে জোয়ারের পানি নিয়ন্ত্রিতভাবে বিল বা নিচু এলাকায় প্রবেশ করিয়ে পলি জমতে দেওয়া হয়। এতে নদীর গভীরতা বাড়ে এবং বিলের জমিও উর্বর হয়। বেতনা ও কপোতাক্ষ নদে টিআরএম বাস্তবায়নের দাবি দীর্ঘদিনের, কিন্তু কর্তৃপক্ষের সেই দিকে নজর নেই।
নদী ও খাল খনন প্রকল্পগুলো কঠোর নজরদারির আওতায় আনতে এবং দুর্নীতি মুক্ত করতে হবে। পাড় না কেটে নদীর তলদেশ খনন নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। নদীর গভীরতা বাড়াতে হবে এবং শহরের ভূমি থেকে নদীর স্তর নিচু করতে হবে। যাতে শহরের পানি খুব সহজেই নদীতে প্রবাহিত হতে পারে।
সাতক্ষীরা পৌরসভাকে একটি মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় এনে সম্পূর্ণ নতুন ও আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শহরের প্রতিটি সড়কের পাশে পরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ এবং সেগুলোকে মূল নিষ্কাশন খালের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। সমস্ত শহরের ড্রেন গুলোকে একটি নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে বড় কোনও নদীন সাথে সংযোগ দিতে হবে। যাতে বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে শহরের সকল পানি কয়েক মিনিটের মধ্যে নদীতে গিয়ে মিশতে পারে।
বর্ষা মৌসুমের আগেই শহরের সমস্ত ড্রেন ও নালা পরিষ্কার করার জন্য প্রশাসন ও সাতক্ষীরা পৌরসভার মাধ্যমে একটি নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। যাতে বর্ষার সময় পানি প্রবাহে কোথাও বাধা প্রাপ্ত না হয়।
শহরের পানি নিষ্কাশনের পথে গড়ে ওঠা সকল অবৈধ স্থাপনা, বিশেষ করে মাছের ঘেরগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। সরকারি খাল ও বিলগুলোকে দখলমুক্ত করে সেগুলোর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। শহরের ভিতরে মাছের ঘের করা নিষিদ্ধ করতে হবে, অথবা ঘের করার জন্য আলাদা জোন নির্ধারণ করে দিতে হবে, যেখানে সারা বছর পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকবে।
যারা খাল, বিল, নদী দখল করে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নদী ও জলাধার দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শহরের মধ্যে সকল ধরনের সড়কের পাশ, খালের ধার বা নদীর পাশ দখল করে যারা আবাসিক বা ব্যবসায়িক স্থাপনা তৈরি করেছে সেই গুলো ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ধ্বংস করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও পৌরসভার মাধ্যমে মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করে দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
শহরে একটি কার্যকর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে, যাতে নাগরিকরা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা না ফেলতে পারে। খালের ধারে বা নদীর ধারে কোনও ডাস্টবিন তৈরি করা যাবে না। যাতে আবর্জনা খাল বা নদীতে মিশতে না পারে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে কাজে লাগিয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। ড্রেনে বা খালে ময়লা ফেললে তা নিজেদের জন্যই কতটা ক্ষতিকর, সে বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, পৌর কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধন করতে হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে একক কোনও সংস্থার পক্ষে সফলতা অর্জন করা কঠিন। তাই সকল পক্ষকে একসাথে বসে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
সাতক্ষীরা শহরের জলাবদ্ধতা একটি বহুমাত্রিক ও জটিল সমস্যা, যার সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। তবে সমন্বিত প্রচেষ্টা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং দুর্নীতির মূলোৎপাটন ও ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আইনের কঠোর প্রয়োগ করা গেলে এই সংকট থেকে উত্তরণ দ্রুতই সম্ভব। আর সেটি যদি করা না হয় তবে অদূর ভবিষ্যতে সাতক্ষীরা বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হবে। এ ব্যাপারে কথা হয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সাথে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান সাতক্ষীরা পৌরসভাসহ সকল এলাকার জনবদ্ধতা নিরাশনের জন্য আমরা দফায় দফায় ব্যক্তি বিশেষ দের নিয়ে মিটিং পরামর্শ করছি বর্ষা যদি একটু কমে যায় তাহলে অতি দ্রুতই সাতক্ষীরা পৌরসভা বাসিকে জলবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়ে যাবে সেই লক্ষ্যে আমরা নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি । দিনে আরো বলেন আসলে বিষয়টা একদিনের নয় দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলে আসছে এটিকে সমাধান করতে একটু বিলম্ব হবে তবে আমরা সাতক্ষীরা পৌরবাসীকে জলবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।