
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার মানুষ প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রভাবে বেড়ীবাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে থাকেন প্রায় সারা বছর। গাবুরার অসহায় ও নিরীহ মানুষের কথা চিন্তা করে বিগত সরকার ১ হাজার ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রহণ করেছে ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন মেগা প্রকল্প।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চারিদিকে নদী দ্বারা বেষ্টিত গাবুরা ইউনিয়নের মানুষের বাঁধভাঙন থেকে রক্ষা করতে স্থায়ীবাঁধ নির্মাণ, খাল খনন, স্লুইচগেট বস্তা ডাম্পিং ব্লক স্থাপন নির্মাণসহ নানা কাজের জন্য ১ হাজার ২০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একনেক সভায় অনুমোদনের পরে প্রকল্পের স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ নানা কার্যক্রম শুরু করেছিলেন ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ওই মেগা প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের নভেম্বরে শুরু হয় এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। তবে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকির অভাব এবং শ্যামনগরে পাউবো’র প্রধান কর্মকর্তা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. ইমরান সরদার তার দায়িত্বে এবং সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী সালাহউদ্দিন আহমেদ সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুর রহমান ও বর্তমান উপসহকারী প্রকৌশলী ফরিদুল ইসলাম এবং দায়িত্ব রত ট্যাক্স ফোর্সের কর্মকর্তারা দুর্নীতি অনিয়ম করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উপকূলের মানুষের টেকসই ভেড়িবাধের স্বপ্নভঙ্গ করেছে।
কাজের গতি বাড়ানোর জন্য ছোট ছোট করে মোট ২৯ কিলোমিটার মধ্যে ৪৭ টি প্যাকেজ তৈরি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর মাধ্যমে ২৭ টি প্যাকেজে বস্তা ড্যাম ২৭ লক্ষ,, খাল খনন পাঁচটি ১০ কোটি টাকা সুইচগেট পাঁচটি ২৫ কোটি টাকা এবং এক লক্ষ অধিক ব্লক স্থাপনএ সকল প্যাকেজের দায়িত্বে রয়েছেন শ্যামনগর পাউবো’র এস ও প্রিন্স রেজা, ফরিদুল ইসলাম, সুমন মন্ডল, কালীগঞ্জের ও সুব্রত। তবে কালিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু প্যাকেজের দায়িত্ব থাকলেও অধিকাংশ প্যাকেজের দায়িত্ব ছিল শ্যামনগর পাউবো’র উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুর রহমান,ফরিদুল ইসলাম, প্রিন্স রেজা, উপসহকারী সমুন মন্ডল। স্থানীয় জনসাধারণ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন ২৭টি প্যাকেজে বস্তা ড্যাম্পিং এর কথা থাকলেও আম পানের পর থেকে এই সমস্ত প্যাকেজে পর্যাপ্ত পরিমাণ বস্তা ড্যাম্পিং থাকায় বা বস্তা ড্যাম্পিং সম্পন্ন হওয়ায় মেগা প্রকল্পের একটি বস্তা সেখানে ড্যাম্পিং করেনি উপসহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুর রহমান সহ উল্লেখিত কর্মকর্তারা। ৩৫৫ টাকা প্রতি বস্তার মূল্য সরকারি মোট টাকা ১৪৪ কোটি খাল কাটানো কাজে সামান্য একটু সেটা কেটে ট্যাক্সে ফোর্ষের স্বাক্ষর করিয়ে পাহাড় সমান দুর্নীতি জায়েজ করেছে হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছে এসও প্রিন্স রেজা সাজ্জাদুর রহমান সম্পূর্ণভাবে অফিস নিয়ন্ত্রণ করেছে। সে যেভাবে বলছে আরো দুইজন এসও সেই ভাবে কাজ করেছেন। তবে এ সকল দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সাইটে না যেয়ে অধিকাংশ সময় অফিসে কাটিয়েছেন।কারণ ওই সময়টা ছিল দেশের জন্য খুব একটা দুঃসময় কারণ ৫ আগস্ট গণঅভ্যস্থানের পরে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহনে একটু বিলম্ব হওয়ায় সবকিছু বুঝে ওঠার আগে এই দুর্নীতিবাজরা এই সুযোগটি গ্রহণ করে কাম বাগিয়েছেন আর রসাতলে দিয়েছেন উপকূলবাসীর স্বপ্ন টেকসই মজবুত ফেরিবাধ। এই প্রকল্পে ঠিকাদারদের সাথে যোগ সাজছে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের মাল-মেডিএস সিলেকশন বালির সাথে পাইল দেওয়া হয়েছে খোল পেটুয়া নদীর লবণ বালি যাহা সরবরাহ করেছেন শ্যামনগরে বালুদর্শ নামে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান বাবু বর্তমানে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ হাওয়ায় আত্মগোপনে গেছেন কারণ বিষয়টি মাননীয় পানি সম্পদ উপদেষ্টা থেকে শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বস্তরের কর্মকর্তা বিভাগীয় কমিশনার খুলনা জেলা প্রশাসক সাতক্ষীরা এবং পুলিশ সুপার সাতক্ষীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্যামনগর সকলেই অবহিত হয়েছেন।
পাউবো’র অফিস সূত্রে জানা গেছে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বেড়ীবাঁধের কাজ সম্পূর্ণ করার কথা থাকলেও আবারো ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হলেও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তা নির্দিষ্ট সময় শেষ করতে পারিনি তার একটাই কারণ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নিজেদের আখের গোছাতে এই বিলম্বের কারণ। গাবুরার খোলপেটুয়া এলাকার স্থানীয় হাফিজুর রহমান বলেন, নিম্নমানের কাদামাটি যুক্ত কালো বালি দিয়ে ব্লক ঢালাই করা হচ্ছে, বা হয়েছে মাঝেমধ্যে ভালো পাথর ও বালি আসলেও প্রায় সময় নিম্নমানের কালো বালি ও নিম্নমানের পাথর নিয়ে আসেন ঠিকাদারের লোকজন। গাবুরার চৌদ্দশী এলাকার আলামিন বলেন, এখানে ঠিকাদার বাবুল খন্দকার কাজ করছেন তবে শ্যামনগর পাউবোর কর্মচারী সিরাজ কাজটি সাব কন্ট্রাক্ট নিয়ে দেখাশোনা করছেন, বালি ও পাথরের বিষয়ে তিনি বলেন এবার একটু খারাপ পাথর ও বালি এসেছে কিন্তু এর আগে ভালো বালি ও পাথর ছিলসূত্র জানায় বালুদর্শ আব্দুর রহমান কোটি কোটি স্কয়ার ফুট লবণ পানি বালি সেখানে সরবরাহ করেছে তিনিও হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা করেছেন আলিশান বাড়ি কিনেছেন বিলাসবহুল গাড়ি ১৫ লক্ষ টাকা দরে কিনেছেন ২৫ বিঘা জমি বর্তমানে একটু চাপের মুখে তার অপকর্ম মুখোশ খুলে যাওয়ায় প্রশাসনকে এড়িয়ে চলছে।। তাকে গ্রেফতার করলে সব রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি জানিয়েছেন,। ইউনিয়নটি চারিধারে নদী থাকায় যে কোন মুহূর্তে অফিসাররা ভিজিট দিতে পারে না সে কারণে দুর্নীতিবাজ উল্লেখিত কর্মকর্তারা বালি উত্তোলনকারী পাথর সরবরাহকারী সিলেকশন বালি সরবরাহকারী মাটির কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা খাল খনন কাজে সবচাইতে দুর্নীতি করতে সহজ হয়েছে। যাহা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা নিয়ে তদন্ত করলে শত শত কোটি টাকা দুর্নীতির থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
স্থানীয় বিএনপি নেতা জামান বলেন, গাবুর এলাকার মানুষ খুবই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, তাদের আশা ভাষা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে, কারণ কাজের কোন গতি নেই, ৩বছর পার হলেও এখনো ৫০ ভাগ কাজ হয়নি, তাহলে আগামী এক বছরে কিভাবে কাজটি শেষ হবে, আইলার কথা ভাবলে এই এলাকার মানুষ এখনো আঁতকে উঠেন। তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের তদারিকের অভাবে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে এবং কাজের গতি বাড়ছে না। এদিকে প্রকল্পের কাজ ২০২১ সালের ১ অক্টোবর শুরুর কথা থাকলেও সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারণে, ও ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০% টাকা নিতে বিলম্ব হওয়ায় ওয়ার্ক অর্ডারে নিতেও বিলম্ব হয় । ফলে কাজ শুরু হয়েছে ২০২২ সালের নভেম্বরে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত অফিসারদের তদারকি না থাকার কারণে প্রকল্পের স্টিমেট, অগ্রগতি সম্পর্কে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য দিতে না পারায় প্রকল্পের ধীরগতি হচ্ছে এবং প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বেড়ীবাঁধের কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও কাজের ধীর গতি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের অবহেলায় কারণে কাজ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ পানি উন্নয়ন বোর্ড এমনটায় বলছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
বিষয়টি নিয়ে গাবুরা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাসুদুল আলম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কাজের মান একেবারেই খারাপ, এছাড়া খুবই ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে, মানুষ প্রতিনিয়ত বেড়িবাঁধ ভাঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে আমি একাধিকবার পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি কিন্তু কোন পরিবর্তন আসেনি। মেগা প্রকল্পে চলছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি, নিম্নমানের বালি ও পাথর দিয়ে কাজ করা হচ্ছে, ২৭ প্যাকেজ কোনো ব্লক নির্মাণ না করেই কাগজপত্র জায়েজ করে নিয়েছে পাঁচটি খাল খননে১০ কোটি টাকা ও ব্যয় করেনি। সেটে মেটে পানি তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন এখানে আমাদের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোন পাত্তাই দেওয়া হচ্ছে না আমরা জনগণের ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছি অথচ এখানে পুকুর সমান দুর্নীতি হচ্ছে। কিন্তু আমরা পড়েছি জনগণের তোপের মুখে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আমার ইউনিয়নে কাজ করছে অথচ আমি এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ পর্যন্ত করে না কেন পরামর্শ করে না তারা লর্ড স্টাইলে দুর্নীতি অপকর্মের মাধ্যমে জোড়া তালি দিয়ে মেগা প্রকল্প করছে।তুমি আগে বলো ২৭ লক্ষ ডাম্পিং বস্তার মূল্য ১৪৪ কোটি টাকা সম্পূর্ণ আত্মসাৎ করেছেন এই কর্মকর্তারা একটি করা হয়নি। প্রতি স্কয়ার ফুট মাটির মূল্য ধরা হয়েছে ১৬০ টাকা থেকে ২২০ টাকা। কথা নকশায় উল্লেখ ছিল টলার এবং কার গোই মাটি টেনে নিয়ে আসবে কিন্তু কোথাও থেকে একটা মাটি টেনে নিয়ে আসেনি গরিবের বাড়িঘর ভেঙ্গে রাস্ত গোড়া খুড়ে মাটি নিয়ে মেগা প্রকল্প করছে। তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী সালাউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এই প্রকল্পের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে যাহা তদন্ত হলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এদিকে দায়িত্ব ছিল একটি সূত্রে তথ্য নিশ্চিত করেজানিয়েছে এই প্রতিবেদক সাতক্ষীরা মেগা প্রকল্পের পাহাড় সমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিয়মিত পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করায় এবং মাননীয় পানি সম্পদ উপদেষ্টা, চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন , মহাপরিচালক বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড অনুকূলে পেপার কাটিং সহ ৫০ পাতার অভিযোগ দাখিল করায় তার প্রাথমিক তথ্যতা যাচাই করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই প্রকল্প নকশা থেকে শুরু করে অধ্যবর্তীপর্যন্ত তিনজন নির্বাহী প্রকৌশলী ৪জন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ১১ জন উপসহকারী প্রকৌশলী পানি ভবনের ৪ কর্মকর্তা ঠিকাদার ১৪ জন ও ট্র্যাক ফোর্সের১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৪০৯/ ১০৯/ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন দন্ডবিধির ৫(২) ধারায় মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে। যাহা দুদকের অনুমোদনের অপেক্ষা মান তালিকায় রয়েছে।

