সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর: একজনের বয়স পাঁচ অপরজনের মাত্র ছয়, তাদের বয়স এখন মা-বাবার সঙ্গে আনন্দে সময় কাটানোর। কিন্তু তাদের আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে খুঁজতে হচ্ছে আপন মাকে।
দুই শিশুর নাম তোয়া ও ফুয়াদ। তারা মায়ের খোঁজে সাতক্ষীরা জেলা সদরের রাস্তায় রাস্তায় খুঁজে বেড়াচ্ছে তিন মাস ধরে। তবুর মায়ের দেখা নেই।
সাতক্ষীরা লিগ্যাল এইডের আইনজীবী এডভোকেট মুনীর উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের গাবুরা গ্রামের সোহেল রানা ও আনজুয়ারা খাতুন আইভী দম্পতির দুই সন্তান আশুরা সুলতানা তোয়া (৬) ও আবরার ফুয়াদ (৫) বৈশাখের প্রখর রৌদ্রের মধ্যে সাতক্ষীরা শহরের রাস্তায় রাস্তায় ও আদালত পাড়ায়।
তাদের মুখে একটাই বুলি ‘মা তুমি কোথায় তোমার কাছে যাবো’। তারা সাতক্ষীরা জজ আদালতের লিগ্যাল এইডের স্মরণাপন্ন হলে আদালত একাধিকবার তাদের মাকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বারবার নির্দেশ দিয়েছেন।
তোয়া ও ফুয়াদের মতোই অশ্রু ঝরাচ্ছেন তাদের পিতা। শিশুদের পিতা সোহেল রানা জানান, তিনি ৫০ নাম্বার গাবুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী হিসেবে কর্মরত। পাশাপাশি লোকের জমি বর্গা নিয়ে মাছ চাষ করেন। লক্ষ্য স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে একটু ভালো থাকা। কিন্তু তার স্ত্রী আইভি একই গ্রামের রহমান গাজীর বিবাহিত ছেলে রবিউল ইসলাম গাজীর পাল্লায় পড়ে স্বামী-সন্তান রেখে পালিয়ে গেছেন।
এই ঘটনায় সোহেল রানার থেকে বহু গুণ বেশি অসহায় অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে আইভির দুই ছেলে মেয়ে। তাই অবুঝ শিশু তোয়া ও ফুয়াদ আজ সাতক্ষীরা শহরে এসে রাস্তায় রাস্তায় গলিতে গলিতে মাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মা তাদের ভুলে গিয়ে অভিযুক্ত রবিউলের সঙ্গে সাতক্ষীরার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সোহেল রানা আরও জানান, সবকিছুর পরও তাদের দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে আবারো তাদের ঘর আলো করতে চান। সব ভুল ভুলে যেয়ে সংসারের বন্ধনকে অটুট করতে চান তিনি।
এ ব্যাপারে তার পলাতক স্ত্রী আইভীর ফোনে বহুবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সোহেল রানা জানতে পেরেছেন, আইভি সোহেল রানার কাছ থেকে পাওয়া স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান যা নিয়ে গিয়েছে সব রবিউলের হাতে তুলে দিয়েছেন।
রবিউল আত্মগোপন করার স্বার্থে আইভীর ফোনটি নষ্ট করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আইভি গত ১৩ ই রমজান তার বাবার বাড়ি যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার পুরন্তপুর গ্রামের বাবার বাড়ি মনিরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে সেখান থেকে রবিউলের সাথে যোগাযোগ করে পালিয়ে যান।
এরপর থেকে দুর্গতি নেমে আসে সোহেল রানার জীবনে। সোহেল রানার কোন ভাই নেই। আছে এক বোন তিনি খুলনাতে শশুর বাড়িতে থাকেন। সবকিছুর পরও ছেলে-মেয়ে ও সোহেল রানা এখনো আশায় আছে দুই ছেলে মেয়ের মা আইভী ঘরে ফিরবে।
সাতক্ষীরা লিগ্যাল এইডের আইনজীবী এডভোকেট মুনীর উদ্দিন জানান, এ ব্যাপারে আদালত অভিযুক্ত রবিউলকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও তোয়া ও ফুয়াদের মা আইভি’র দেখা না মেলায় কঠিন দুশ্চিন্তায় পড়েছে তাদের পরিবার। এমন কী অবুঝ সন্তানরা বাবার কাছ থেকে পোস্টার বানিয়ে দেয়ালে দেয়ালে মায়ের দেখা পেতে আকুতি জানিয়ে আসছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত